Hot Widget

Type Here to Get Search Results !

Advt 720

আশ্রমে পড়ে রইল বিশ্ববিদ্যালয়ের দেওয়া স্বর্ণপদক, পিএইচডির শংসাপত্র, পথে নামলেন এক মুক্ত সন্ন্যাসী বাবাজী মহারাজ

ত্যাগী কাকে বলে? যিনি অনায়াসে পার্থিব সব বস্তুকে অবহেলায় ফেলে চলে যেতে পারেন রিক্ত হস্তে, তাকে ত্যাগী বলে। যিনি মনের মধ্য থেকে নিজের ‘আমি’ ভাবকেও অনায়াসে দূরে সরিয়ে ‘তুমি’ ভাবকে গ্রহণ করেন, তিনিই হলেন ত্যাগী
বার পথে নামলেন সেই রিক্ত সন্ন্যাসী। খালি পা। গায়ে শতচ্ছিন্ন, সুতো দিয়ে সেলাই করা শ্রীগুরুদেবের দেওয়া খাকি সোয়েটার। পরণে একফালি সাদা কাপড়, কোমরে কাষ্ঠ-বন্ধ – কাঠিয়া সম্প্রদায়ের সঙ্গে বন্ধনের চিহ্ণস্বরূপ। আর উপবীত। এই তার সম্বল।
 রিক্ত দীনহীন সন্ন্যাসীর যাত্রা শুরু হল। তার মনের গভীর গুরুদেবের একান্ত চাওয়া যেন বারবার উচ্চারিত হয়ে চলেছে –“এই জন্মটা তুই আমাকে দে।“ 
তাই আশ্রমে পড়ে রইল রাতের পর রাত জাগা পরিশ্রমের ফসল ডক্টরেট ডিগ্রি। যে ডিগ্রি শিক্ষিত মানুষের অহঙ্কার জাগিয়ে তোলে, অন্য শিক্ষিত ব্যক্তির সঙ্গে পার্থক্য তৈরি করে, যে ডিগ্রি জীবনকে নিয়ে যেতে পারে শান্ত সুখের সাম্রাজ্যে। সেই ডিগ্রি আর স্বর্ণ-পদক অবহেলায় ফেলে এলেন এই সন্ন্যাসী। 
যেন, শিক্ষার অহঙ্কারকেও পরিত্যাগ করলেন। সব কিছুই তো তিনি করেছেন গুরুর আদেশে। পিএইচডি টাও। শিক্ষার পার্থিব শংসাপত্র ত্যাগ করলেও, হৃদয় আলোকিত হয়ে রইল, জ্ঞানের অগ্নিশিখায়। 
কারন, তাকে এবার সেই জ্ঞান কাজে লাগাতে হবে। মানুষকে দিতে হবে সঠিক পথের সন্ধান। কারণ, তার গুরুদেব তাকে সেই কাজের জন্যই শিক্ষিত করেছেন। তার গুরুদেবের দেওয়া দায়িত্ব পালনেই এবার রিক্ত হস্তে পথে নামা। ট্রেনের অপেক্ষায় থাকা এই সন্ন্যাসীর ঠোঁটদুটো একবার কেঁপে উঠল। অষ্ফুটে উচ্চারিত হলো একটি শব্দ ।“দিলাম।“
নতুনগ্রাম আশ্রমে আসার সেই পূণ্যক্ষণের বেশ কয়েক ঘন্টা আগে এই সন্ন্যাসীকে দেখা গিয়েছিল মথুরা স্টেশনে। এক সর্বত্যাগী সাধকের অন্য যাত্রার পূণ্যমুহুর্ত। 
নিজে মুক্ত হয়ে মানুষের মুক্তির উপায় খুঁজতে আর এক নতুন যাত্রার শুরু। তার হৃদয় আজ আর তার নিজের নয়। সেখানে বিরাজ করছেন তার শ্রীগুরু স্বামী জানকীদাস কাঠিয়া মহারাজ। সেখানে প্রতিক্ষণে অণুরনিত হচ্ছে –“এবার নির্জনে গিয়ে আমরা থাকব।“ 
সেই সাধক সন্ন্যাসীর মনের মধ্যে কে যেন বলে চলেছেন- তোকে দিয়ে গেলাম এক দায়িত্ব ভার। আমার পদাঙ্ক অনুসরণ করে সেই কাজগুলো শেষ করলেই, তোর ছুটি। আমি থাকব, তোর অপেক্ষায়।“ 


নতুনগ্রাম। পূর্ব বর্ধমানের এক ছাপোষা, অতি সাধারণ গ্রাম। বিশেষ নিদর্শন বলতে তাঁত-শিল্পীদের ঠকাঠক শব্দে তাঁত চলার শব্দ আর কিছুটা দূরেই কাঠ-পুতুলের জন্মস্থান। কিন্তু, মাহাত্ম্য একটা ছিল। কিছু দূর দিয়ে প্রবাহিত পতিত-পাবনী গঙ্গা। আর গোপীনাথের মন্দির। এটাই কি সেই নির্জন স্থান, যেখানে আবার মিলন ঘটবে গুরু-শিষ্যে? 
ঠিক তাই। এরপর একটা ইতিহাস। স্বামী প্রজ্ঞাদাসজীর কর্মের সাধনা, কুসংষ্কারমুক্ত ধর্মের সাধনায় নানা রঙে রেঙে উঠল নতুনগ্রাম।
সাধুদের জীবন যে কত কঠিন, শিক্ষাকে আহরণ করতে কতটা ত্যাগ স্বীকার করতে হয়, আবার শিক্ষার পার্থিব প্রমানকে কত সহজে ত্যাগ করে আসা যায়, সেটা বাবাজীই দেখিয়ে গেছেন। যারা অতি সহজেই ‘সাধু’ হয়ে বসে পড়েন ‘সিংহাসনে’ তারা এর মর্ম অনুধাবন করতে পারবেন না।
 কারণ, ত্যাগের মাধ্যমেই পৌঁছাতে হয় সেই মার্গে। সেই ত্যাগ আজ কোথায়? নতুনগ্রামের শূন্যতায় শুধুই শোনা যায় বাবাজী মহারাজের পদধ্বনি। আর তার ত্যাগের মহিমা। তার সারাটা জীবন গুরুর আদেশ পালনেই ব্যয় হয়েছে। কেননা তিনি নিজেই নিজেকে এ জন্মের জন্য তার গুরুদেবের পদতলেই সমর্পন করে দিয়েছেন। এটাই গুরুভক্তি। যা গান-বাজনা আর চটকদারীতার মাঝে খুঁজে পাওয়া যায় না। এর জন্য দরকার সেই নির্জনতা, যেখানে থাকে শুধু গুরুর আদেশ। 
আর থাকে চরম নীরবতায় হৃদয় দিয়ে শুনে যাওয়া শ্রীগুরুর আদেশ পালনের অঙ্গীকার। বাবাজী মহারাজ ছিলেন সেই মানব, যিনি গুরুবাক্যকেই মেনে পথ চলেছেন। কঠিন-কঠোর পথের দু-পাশে ফুটিয়ে গেছেন ভালোবাসার ফুল। মানুষের মাঝেই খুঁজেছেন ঈশ্বরকে। আবার মানুষের মাঝেই দেখে ফেলেছেন নরকের পূতিগন্ধময় অন্য মানুষকে।
সাধু জীবন মানেই এক অনিশ্চিত জীবন। আহার, বাসস্থান- সব কিছুতেই অনিশ্চয়তা। সাধুদের থাকতে নেই একস্থানে, শুধুই এগিয়ে চলা। গৃহীদের জীবন বদ্ধ – একই বৃত্তের মধ্যে কলুর বলদের মতো ঘুরে চলা। সাধু মুক্ত পুরুষ। বন্ধন তার সাধন পথের পরিপন্থী। স্বামী শ্রীশ্রী জানকীদাসজীর আদেশ পালনই তার জীবনের তপস্যা। তার নিজস্ব কোন ইচ্ছা নেই, রাখতেও নেই। বাবাজী মহারাজ একটা কথা চরম ভাবে মেনে নিয়েছিলেন।
 সেটা হল – শ্রীগুরুর চরণের বাইরে অন্য জগত নেই। শ্রীজানকীদাসজী বাবাজীকে বলেছিলেন –“পৃথিবীটা বড় কঠিন। এখানে ভূতের খেলা।“ 


বাবাজী মহারাজ গীতার শ্লোক উদ্ধৃত করে বলতেন – যিনি শত্রু-মিত্রে, মান-অপমানে, শীত-উষ্ণতায়, সুখ-দুঃখে সমভাব বজায় রাখতে পারেন, যিনি সাংসারিক আসক্তি শূন্য, নিন্দা স্তুতিতে যিনি সমমনোভাবাপন্ন, যে কোন অবস্থাতেই যিনি সন্তুষ্ট, বাসস্থানের প্রতি যিনি মমতা রহিত, সেই মানুষরাই শ্রীভগবানের প্রিয় হন।

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

Top Post Ad

Below Post Ad

Hollywood Movies