কোন এক অজানা একাউন্টে ‘ক্রেডিট’ হয়েছে বলে এসএমএস পেয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভূক্তভোগী। সেই সমস্ত এসএমএস গুলি ভালোভাবে লক্ষ্য করলেই দেখা যাবে, সেগুলো ‘ক্রিয়েটেড’ মেসেজ।
কোন এক ব্যক্তি কিংবা এক চক্র রাজ্যের বীরভূম জেলা থেকে এই অপারেশন চালাচ্ছে বলে অভিযোগ। তার এজেন্ট ছড়িয়ে রয়েছে, বীরভূম সংলগ্ন পূর্ব বর্ধমান, বাঁকুড়া জেলাতেও। এজেন্টরা এই চক্রের কাছে পার্টি নিয়ে আসার পর শুরু হয়, ওই চক্রের ‘অপারেশন’। ব্রেন ওয়াশ করে, ভুল বুঝিয়ে খোলানো হয়, কারেন্ট একাউন্ট।
সেই একাউন্ট গুলি দিয়ে কী হয়, সেটা বেশ রহস্য। অভিযোগ,তাদের ফা পড়ে সর্বস্ব খুইয়েছেন অনেকে। জানা গেছে, তাদের এমনভাবে ফাঁসিয়ে রেখেছে ওই চক্র, যে তারা পুলিশের কাছে গিয়ে অভিযোগ জানাতে পারছেন না বলে জানয়েছেন ভূক্তভোগী।
তার অভিযোগে জানা গেছে, প্রথমেই এই চক্রের কোন এক জন ব্যক্তি এফডি ভাঙ্গিয়ে অতি দ্রুত টাকা পাইয়ে দেবে বলে, ‘ঘুষ’ হিসাবে বেশ কয়েক লক্ষ টাকা ‘গ্রাহকের’ কাছ থেকে হাতিয়ে নেয়। গ্রাহক যাতে, তাকে ‘ঘুষ’ হিসাবে ওই টাকা দিয়েছে বলে পরে অভিযোগ জানাতে না পারে, তাই তাকে দিয়ে ১০ টাকার স্ট্যাম্প পেপারে লিখিয়ে নেওয়া হয়, সে ওই টাকাটা ‘জমি কেনার’ জন্য দিচ্ছে।
জমির দামও লেখা হয় ওই স্ট্যাম্প পেপারে। যেটা লেখা থাকে না, সেটা হল জমি সংক্রান্ত কোন তথ্য। কোথাকার জমি, তার দাগ নং, খতিয়ান নং, পরিমান- ইত্যাদি ইত্যাদি।
এছাড়া, গ্রাহকের অজান্তে তাকে দিয়ে সাদা স্ট্যাম্প পেপারে সই করিয়ে নেওয়া হয়, যাতে, সেটা ওই চক্র অন্যভাবে ব্যবহার করতে পারে। এখন পর্যন্ত জানা গেছে, এই চক্র মূলতঃ টার্গেট করে, অশিক্ষিত ও অর্ধ শিক্ষিত ব্যক্তিদের।
জানা গেছে, এই চক্রের জাল ক্রমশঃ ছড়িয়ে পড়ছে অন্য জেলাতেও। আর একটি ব্যাপারে কিছু অভিযোগ এসেছে, সেটি হল, ব্যাঙ্কে ওই গ্রাহককে দিয়ে ‘কারেন্ট’ অ্যাকাউন্ট খোলানো হয়, তারপর বলা হয়, ওই অ্যাকাউন্টএ এফডি র টাকা ট্রান্সফার হয়ে যাবে।
গ্রাহককের কাছ থেকে এই অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য নেওয়া হয় ৩০ হাজার টাকা, আধার কার্ড ও প্যান কার্ড। অ্যাকাউন্ট খোলার এক মাস পরেও গ্রাহককে তার পাশ বই দেওয়া হয় না।
কিন্তু, আশ্চর্যের বিষয়, হলো, এই অ্যাকাউন্ট খোলার সময় গ্রাহকের মোবাইল (যেট বলা হয় অ্যাকাউন্টএর সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে)এ কোন এসএমএস আসে না। এমনকি, টাকা ট্রান্সফার হয়ে গেছে বলে যে এসএমএস আসে, সেট অন্য কোন মোবাইল নাম্বারে চলে যায়।
পরে ওই ব্যক্তি সেই অদ্ভুত ভুলে ভরা এসএমএস গ্রাহককে ফরোয়ার্ড করে। ব্যাঙ্ক সংক্রান্ত সব কাজটাই করে ওই চক্রের কোন ব্যক্তি।
এরপর, গ্রাহক যখন, তার এফডির টাকা পায় নি বলে অভিযোগ জানায়, তখন তাকে বলা হয়, আগে আপনার ওই অ্যাকাউন্টটা ক্লোজ করে দিন। এরপর ওই গ্রাহককে দিয়ে ভুলে ভরা একটি আবেদনপত্র লিখিয়ে নেওয়া হয়, যেখানে থাকে না, কোন অ্যাকাউন্ট বন্ধ করতে হবে, তার নং,। লেখানো হয় না আবেদনের তারিখ।
এছাড়া আরো এমন অসঙ্গতি থাকে, দেখলেই বোঝা যাবে, তার পিছনে একটা নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য আছে। গ্রাহক যখন টাকা না পেয়ে অভিযোগ জানাতে যায়, তাকে বলা হয়, পুলিশে আর আদালতে আমরা জানাবো, তোমরা আমার কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা ঋণ নিয়েছো।
গ্রাহক তখন ভয়ে আর মুখ খুলতে পারে না, কেননা, তারা বেশ কিছু সাদা স্ট্যাম্প পেপারে নকল ঋণপত্র তৈরি করে রাখে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভূক্তভোগী জানিয়েছেন, বীরভূমের এই বেআইনি চক্রকে ধরতে পারলে, অনেক রহস্য উন্মোচন হতে পারে। তারা এ ব্যাপারে স্থানীয় জন-প্রতিনিধি, রাজ্য প্রশাসন ও পুলিশের হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন।