কিন্তু, এরপর ওই মহিলার আর কোন খোঁজ পাওয়া যায় না। তারপর যা ঘটেছিল, তার খবরে শিউরে উঠেছিল সারা দেশ। ২০১৯ সালের ১৯ জুন কামাখ্যা মন্দিরপ্রাঙ্গণে জয় দুর্গা মন্দিরের সিঁড়িতে পাওয়া গেল একটা মৃতদেহ। কম্বল দিয়ে ঢাকা।
পুলিশ এসে কম্বল সরাতেই দেখা গেল, মুন্ডহীন এক বয়স্ক মহিলার মৃতদেহ। দেখেই বোঝা যাচ্ছিল, ওই মহিলাকে তন্ত্র সাধনার উদ্দেশ্যে বলি দেওয়া হয়েছে।
ঘটনার একমাস পর মৃত শান্তি শাউয়ের ছেলে মহিলার জামাকাপড় এবং শরীরে থাকা ট্যাটু দেখে মৃতদেহটিকে তার মায়ের বলে শনাক্ত করেছিলেন। ২০১৯ সালে এফআইআর করা হলো। শুরু হলো তদন্ত। ইতিমধ্যে কেটে গেল দীর্ঘ ৪ বছর। সেদিনের সেই ঘটনা তখন স্মৃতি।
কিন্তু, গতকাল জানা গেল, এই ‘নরবলি’ তদন্তে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৫ জনকে। কামাখ্যা মন্দিরে নরবলি দেওয়ার অভিযোগে মধ্যপ্রদেশ ও উত্তরপ্রদেশের দু'জন সহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এরা হল সুরেশ পাসওয়ান (৫৬), প্রদীপ পাঠক ওরফে দীনেশ বা রাজু (৫২) এবং আরও দুই ব্যক্তি, কানু আচার্য্য ওরফে কানু তান্ত্রিক (৬২), এবং রাজু বাবা (৬০)।
তদন্তে পুলিশ জানতে পারে, ওই মহিলাকে বলি দেওয়ারপরিকল্পনা অনেক আগেই করা হয়েছিল। আর এই পরিকল্পনায় অংশ নেয় প্রায় ১২ জন।
সেই মত ২০১৯ সালের ১৮ এবং ১৯ শে জুন বিশেষ পুজোর আয়োজন করা হয়। সেখানে মহিলা ছাড়াও দলে আরও ১২ জন ছিলেন। ও ইদলের প্রত্যেকে প্রথমে ভূতনাথ মন্দিরে একটি পুজোর আয়োজন করে। মন্দিরে বসেই সবাই আকণ্ঠ মদ্যপান করেন।
শান্তিদেবীকে জোর করে আকন্ঠ মদ্যপান করানো হয়। এরপর কামাখ্যা শ্মশানে নিয়ে গিয়ে আরেকটি পুজো করা হয়। তারপর সবাই মিলে ফিরে আসেন জয় দুর্গা মন্দিরে। সেখানে ওই মহিলার শাড়ি পালটানো হয়, তারপর তাকে কম্বলের উপর শুইয়ে, হাত-পা চেপে মুন্ডু কাটা হয়। কাটা মুন্ডু ছুড়ে ফেলা হয় ব্রম্ভপুত্র নদে আর মুন্ডুহীন মৃতদেহটি কম্বলে মুড়ে ফেলে রাখা হয় মন্দির চত্বরেই।
পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্তদের শনাক্ত করতে একটি বিশেষ দল সম্প্রতি অতীতের প্রমাণ এবং সূত্রগুলি বিশ্লেষণ করে কোচবিহারে পৌঁছায় এবং ১৮ মার্চ, ২০২৩-এ কৈলাশ বর্মন নামে এক ব্যক্তির বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে উদ্ধার করে ওই মহিলার মোবাইল ফোন, জামাকাপড় এবং আধার কার্ড। কৈলাশ বর্মন পুলিশকে জানায় এই জিনিসগুলি ২০১৯ সালের জুন মাসে এক ‘সাধুবাবা’, তার বাড়িতে রেখে যান।
সেই সূত্র ধরে পুলিশ ২৫শে মার্চ মধ্যপ্রদেশের জবলপুর থেকে মাতা প্রসাদ পান্ডে ওরফে মাতেশ্বরী গিরিকে গ্রেফতার করে।
তদন্তে দেখা গেছে যে প্রদীপ পাঠক ওরফে দীনেশ নামে এক ব্যক্তি তার ছোট ভাইয়ের জন্য পূজার পৃষ্ঠপোষকতা করেছিলেন। তার ভাই একজন নাগা সাধু ছিলেন এবং একই দিনে ১১ বছর আগে মারা গিয়েছিলেন।
২০২৩ সালের ১ এপ্রিল মথুরার বাসা থেকে পাঠককে গ্রেফতার করা হয়। তার সঙ্গে আসামে যাওয়া আরেক সাধু এখনও পলাতক এবং তাকে গ্রেপ্তারের জন্য তল্লাশি চলছে বলে জানিয়েছেন গুয়াহাটির পুলিশ কমিশনার দিগন্ত বোরা।
পুলিশ কমিশনার জানিয়েছেন, অম্বুবাচি মেলার কয়েকদিন আগে দেবী কালীকে উৎসর্গ করার জন্য মহিলার শিরশ্ছেদ করার অভিযোগে ভূতনাথ শ্মশান থেকে আরও তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
পুলিশ ১লা এপ্রিল, সুরেশ পাসওয়ান (৫৬), প্রদীপ পাঠক ওরফে দীনেশ বা রাজু (৫২) এবং আরও দুই ব্যক্তি, কানু আচার্য্য ওরফে কানু তান্ত্রিক (৬২), এবং রাজু বাবা (৬০)কে গ্রেফতার করে।
এই মামলার বাকি আসামীদের খোঁজে জোর তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ।