বাবাজী মহারাজের কয়েকটা কথা মেনে চললে ২০২৪ সালে আপনাদের জীবনটাই বদলে যাবে

 


২০২৪ সালে বাবাজী মহারাজের তিরোভাবের ১০ বছর পূর্ণ হবে। এই ১০ বছর যারা তাকে মনে রেখেছেন জীবনের প্রতিটি মুহুর্তে, তারা প্রতিটি মুহুর্তে তার উপস্থিতি আজও টের পান, যে কোনো বিপদ থেকে অনায়াসে উদ্ধার পান।

তারক ঘোষ

 

মাঝে মাত্র কয়েকটা ঘন্টা, তারপর নতুন বছর, নতুন ইংরাজী সাল। ২০২৩ কে চিরবিদায় জানিয়ে আমরা বরণ করে নেব ২০২৪ কে। কেমন কাটবে এই নতুন বছরটা? কী নতুন রহস্য লুকিয়ে আছে এই নতুন বছরের গর্ভে?  আমরা কেউই জানি না। কেউ হয়তো এই বছরটায় উন্নতি করবেন, কেউ বা  করতে পারবেন না। এই বছরে বহু নতুন মানুষ আসবে পৃথিবীতে। বহু মানুষ চলেও যাবেন। পৃথিবী ছেড়ে। আর এটাই হয় -  প্রতিদিন।



ভবিষ্যত বলে কিছু নেই। সবটাই বর্তমান। আবার এই বর্তমানও এক ন্যানো সেকেন্ডের মধ্যেই অতীত হয়ে যাচ্ছে। ফলে আমরা বাস করছি, চিন্তা করছি, কাজ করছি সবই বর্তমানের এক অতি ক্ষুদ্র অংশে। আর এই বর্তমান-এ যারা ভালো কাজ করছেন, তাদের কাছে ভবিষ্যতটাও একটা সুন্দর বর্তমান হয়ে আসবে। কিন্তু, এই বর্তমান সময়টাতে যদি আমরা আলস্যে কাটাই, সৎ কর্ম না করি, অন্যকে ঠকাই, খারাপ কাজ করি, তাহলে আমাদের সেই অনাগত খারাপ ভবিষ্যতের জন্য আমরা নিজেদেরই তৈরি করে রাখছি। আমাদের প্রতিটি কাজের হিসাব থাকছে মহাকালের ডায়েরীতে, আমাদের প্রতিটি মুহুর্ত রেকর্ড হয়ে থাকছে মহাকালের নজরদারী ক্যামেরায়। একদিন তার হিসাব-নিকাশ হবে। হয় এ জন্মে, নয়তো পরজন্মে। আমাদের খারাপ কাজের শাস্তি হয়তো আমরা এ জন্মে পাব, কিংবা পরজন্মে।  হয়্তো আমরা নিজেরা পাব, কিংবা আমাদের পাপের ফল ভোগ করবে, আমাদের উত্তরসূরীরা।

আর এভাবে বয়ে চলে সময়ের প্রবাহ, যে প্রবাহে আমাদের কর্মই আমাদের নিয়ন্তা। ঈশ্বর আমাদের ছেড়ে দিয়েছেন কর্ম করার জন্য। যিনি নিঃষ্কাম কর্ম করবেন, তার জন্য এক রকম ফল, আর যিনি সকাম কর্ম করবেন, তার জন্য অন্যরকম ফলের ব্যবস্থা আগে থেকেই আমাদের শরীরে ইন্সটল করা সফটওয়্যারে লেখা হয়ে আছে। কাজেই সব কর্মই ভেবে করতে হয়। না হলে, পস্তাতে হয়। আর এই পস্তানোর বিষয়টা অনেকে বুঝতে পারেন, তার কর্মফল হিসাবে, কেউ পারেন না। কারণ ঈশ্বর সবার সফটওয়্যারে এই বোঝার ক্ষমতা দেন না। তারা অপরাধ করেও বুঝতে পারেন না, তারা অপরাধ করছেন, পাপ করছেন, ভুল করছেন।

কেউ আবার এই পাপ-পূণ্য মানেন না। ‘যা হবে দেখা যাবে’ – এই ভাব। এরা বোকা। তারা যদি ঈশ্বরকে না মেনে বিজ্ঞানকে মানেন, তাহলেই বুঝতে পারবেন প্রত্যেক ক্রিয়ার একটি সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া আছে। নিউটনের ত্রৃতীয় গতিসূত্র অনুসারে। কিন্তু, বিজ্ঞানের নিয়মে এই বিপরীত প্রতিক্রিয়া সঙ্গে সঙ্গেই ঘটে আর অধ্যাত্মবাদে এই বিপরীত প্রতিক্রিয়া ঘটতে একটু বেশি সময় লাগে। কারণ, ঈশ্বর তার সৃষ্টদের একটু সময় দেন, যাতে তারা নিজেদের বদলে নিতে পারেন। আর সেই সময় পেয়েও যারা বদলায় না, তাদের ভাগ্য তারা নিজেরাই গড়ে নেন, পরে ভগবানকে দোষ দিয়ে কোনো লাভ হয় না। ভগবান কারও পাপও নেন না, পূণ্যও নেন না। যার কর্ম, তাকেই এই দায়িত্ব নিতে হয়।

তাই, দেখা যাক, আমরা নতুন বছরে কীভাবে চললে, একটু ভালো থাকতে পারি।  নিজেদের জীবন সুখময় হয়ে উঠতে পারে, একটা সুন্দর জীবন পেতে পারি।



২০২৪ সালে বাবাজী মহারাজের তিরোভাবের ১০ বছর পূর্ণ হবে। এই ১০ বছর যারা তাকে মনে রেখেছেন জীবনের প্রতিটি মুহুর্তে, তারা প্রতিটি মুহুর্তে তার উপস্থিতি আজও টের পান, যে কোনো বিপদ থেকে অনায়াসে উদ্ধার পান। কারণ শ্রীশ্রী জানকীদাসজী মহারাজ তার এই সুযোগ্য শিষ্যকে যে দুটি দায়িত্ব দিয়েছিলেন – তার একটি হলো শিষ্যদের ভালোমন্দ দেখা। তিনি এখনও সেটাই করে যাচ্ছেন। আর যারা তার কথা ভুলে গেছেন, বা সেভাবে মনে রাখেন না, তার কথা আলোচনা করেন না, বা জপ করেন না, তারা স্বেচ্ছায় তার স্নেহচ্ছায়া থেকে নিজেদের সরিয়ে নিয়ে গেছেন।

বাবাজী মহারাজ বারে বারেই কর্মফল নিয়ে শিষ্য-ভক্তদের সতর্ক করেছেন। গল্পচ্ছলে বুঝিয়েছেন আমাদের জীবনে কী করা উচিত, আর কী করা উচিত নয়। আমরা সবাই তার কথা শুনেছি, কেউ মেনেছি, কেউ মানিনি।



বাবাজী মহারাজ বলেছেন - এই পৃথিবীতে আসা তখনই সার্থক হয়, যখন কোন ব্যক্তি নিজ স্বার্থের উর্ধে থেকে মানব-কল্যাণে নিজের জীবন ব্যয় করেনতিনি সাধু হতে পারেন, বিজ্ঞানী হতে পারেন, গৃহবধূ, লেখক, শিল্পী- যে কেউ  এক বিদেশী সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানিয়েছিলেন – ‘আমার মতে নাসার বৈজ্ঞানিকরা, যারা মানুষের কল্যাণে নিয়োজিত, তারাও কিন্তু ঋষিতারা তাদের বেশ-ভূষা নিয়ে চিন্তিত ননএই প্রসঙ্গে বাবাজী মহারাজ একবার প্রবচনে বসে বলেছিলেন, যে মানুষগুলো সারাটা জীবন ল্যাবরেটরীতে কাটিয়ে দিল সমগ্র মানবজাতির সেবায়, যারা নিজেদের ব্যক্তিগত জীবনের সুখ-দুঃখ সবকিছুই বিসর্জন দিয়ে দিল আবিষ্কারের পিছনে, তাদের কী বলবো- তারাই তো সন্ন্যাসী সারাটা জীবন মানুষের সেবায় দিয়ে গেল

 তিনি একটি কবিতার উধৃতি দিয়ে বলতেন – ‘পরের কারণে স্বার্থ দিয়া বলি/ জীবন-মন সকলই দাও…/ তার কথায় বিশ্বাস, ভক্তি বা প্রেম আর জগত-কল্যাণএই তিন নিয়েই ধর্ম

আমরা যদি আমাদের জন্যই বাঁচি, তাহলে সে বাঁচাটা ঠিক বাঁচা হয় না। নিজের স্বার্থের দিকে তাকিয়ে আমি কোনো কর্ম করলে, অন্যেরাও আমার সঙ্গে স্বার্থ নিয়েই মিশবে। আর স্বার্থ ফুরালে আমার মতোই কেটে পড়বে। তাই নতুন বছরে আসুন, শুধু নিজের জন্য নয়, আমরা সকলের জন্যই বাঁচি। এতে অসময়ে আমরা অন্যের সাহায্য পেতে পারি।



বাবাজী বলছেন - গৃহী মানুষের কাছে ত্যাগহলো ভালো থাকার পাসওয়ার্ড। যিনি স্বার্থত্যাগ করে কর্ম করবেন, তিনি ভালো থাকবেন। আত্মীয়-পরিজন-সন্তান কারোর সঙ্গেই স্বার্থের সম্পর্ক রাখা উচিত নয়। আর কোনো প্রত্যাশা রেখে কাজ করবেন না। কারণ, প্রত্যাশা পূরণ না হলে, মন খারাপ হয়, রুষ্ট হয়, ক্ষোভ জন্মায়, প্রতিহিংসার ইচ্ছা জন্মায়। তাই প্রত্যাশা না রেখে স্বার্থশূন্য হৃদয়ে সব কর্ম করে যেতে হয় ঈশ্বরের কর্ম হিসাবে।

বাবাজী মহারাজ আর একটি বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দিতেন –সেটি হলো অহঙ্কার বিসর্জন।

কথা প্রসঙ্গে তিনি বলতেন - কেউ কেউ আমিষ ছেড়ে নিয়ামিষ আহার করতে শুরু করেন। এইভাবে দিন কাটে, মাস কাটে, বছর কাটে। বেশ কয়েক বছর নিরামিষ খাওয়ার পর তার মনে হয়, আমি আমিষ আহারকারীদের থেকে ভগবানের দিকে অনেক এগিয়ে আছি। তখন তারা আমিষাশীদের একটু নীচু নজরে দেখতে শুরু করেন। ভাবখানা এমন, তারা ভগবানের পথে অনেক এগিয়ে গেছেন। 



বাবাজী মহারাজ বলতেন এইটাই অহঙ্কার। নিরামিষ খাওয়ার অহঙ্কার নয়। নিজেকে অন্যের চেয়ে শ্রেষ্ঠ ভাবার অহঙ্কার। এই অহঙ্কার ক্ষতিই করে। সর্বক্ষেত্রে এই অহঙ্কারকে বিসর্জন দিতে হবে।

( আগামীকাল এই লেখার দ্বিতীয় অংশ প্রকাশিত হবে। আপনারা ইচ্ছা হলে এটি শেয়ার করতে পারেন। )

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

Top Post Ad

Below Post Ad