বাংলাদেশের বাগেরহাটে ঐতিহ্যবাহী রথের মেলা

বিশ্বজিৎ মন্ডল, বাংলাদেশ

করোনা মহামারির কারণে গত দু বছর এখানে মেলা বসেনি। তাই ভক্ত আর পুণ্যার্থীরা মনকষ্টে ভুগছিলেন। এবছর করোনার কিছুটা প্রভাব কম থাকায় মেলা বসেছে। মেলায় আসতে পেরে পুণ্যার্থীদের মনো কষ্ট কিছুটা লাঘব হয়েছে।


 বাগেরহাটের যাত্রাপুরে লাউপালায় ঐতিহ্যবাহী রথের মেলা জমে উঠেছে। প্রায় ৪০০ বছর আগে থেকে বাগেরহাট সদর উপজেলার শ্রীপাট লাউপালা গ্রামে প্রতিষ্ঠিত শ্রীশ্রী গোপাল জিউর মন্দিরে জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। এটি দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রথ উৎসব বলে জনশ্রুতি আছে। শনিবার (৯ জুলাই) উল্টো রথটানের মাধ্যমে জগন্নাথ দেব মন্দিরে ফিরে গেলেন। উল্টো রথ টানতে পুণ্যার্থীদের ঢল নামে। রথ উৎসবকে ঘিরে এখানে মাসব্যাপী মেলায় গ্রামবাংলার নানা ধরণের পসরা সাজিয়ে বসেছে দোকানিরা। মেলায় নানা বয়সের মানুষের মধ্যে উৎসাহ উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়েছে। জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে প্রতিদিন মেলায় আসছেন বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষ। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মানুষের পদচারণয় মুখর হয়ে উঠে মেলা প্রাঙ্গণ। জানা গেছে, লাউপালায় জগন্নাথ দেবের রথযাত্রাকে ঘিরে রীতিমতো উৎসবে পরিণত হয়। বছরজুড়ে মানুষ রথের মেলার জন্য অপেক্ষায় থাকে। বাগেরহাট, ঢাকা,খুলনা, যশোর, সাতক্ষীরা, নড়াইল, গোপালগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে পুণ্যার্থীরা রথ উৎসবে যোগ দিয়ে থাকেন। করোনা মহামারির কারণে গত দু বছর এখানে মেলা বসেনি। তাই ভক্ত আর পুণ্যার্থীরা মনকষ্টে ভুগছিলেন। এবছর করোনার কিছুটা প্রভাব কম থাকায় মেলা বসেছে। মেলায় আসতে পেরে পুণ্যার্থীদের মনো কষ্ট কিছুটা লাঘব হয়েছে।
শনিবার দুপুর থেকে বিকাল পর্যন্ত মেলা ঘুরে দূরদূরান্ত থেকে আশা অসংখ্য দর্শনার্থীর দেখা মিলেছে। রীতিমতো জমজমাট মেলা প্রাঙ্গন। মানুষের মধ্যে উৎসাহ আর উদ্দীপনা মেলা প্রাঙ্গন ছাপিয়ে আশপাশে গ্রামে ছড়িয়ে পড়েছে। বাবা-মায়ের কোলে চড়ে শিশুরা যেমন আসছে তেমনি লাঠিভর করে বৃদ্ধরাও এসেছেন মেলায়। করোনা মহামারি থেকে গোটা বিশ্বকে মুক্ত রাখতে জগন্নাথ দেবের কাছে প্রার্থনা করলেন পুণ্যার্থীরা। পূজাঅর্চনা আর রথটান শেষে হাজারো ভক্ত প্রসাদ গ্রহণ করে নিজেকে ধন্য মনে করছেন। মেলায় আবহমান বাংলার ঐতিহ্য বিভিন্ন কুটিরশিল্প, হস্তশিল্প, মৃৎশিল্পসহ নানা ধরনের পসরা নিয়ে বসেছে দোকানীরা। মাটির পুতুল থেকে শুরু করে বাসা-বাড়িতে মানুষের ব্যবহার্য আসবাবপত্রসহ নানা পণ্য পাওয়া যাচ্ছে মেলায়। বাঁশের তৈরি কুলা আর বাঁশিও আছে মেলায়। ঢোল আর বেতের তৈরি ধামাও পাওয়া যাচ্ছে এখানে। শঙ্খ থেকে শাঁখা, সিঁদুর, দেবদেবীর ফটো আর ধর্মগ্রন্থও পাওয়া যাচ্ছে মেলাতে। নাগরদোলা, নৌকাসহ বিভিন্ন রাইডস বসেছে মেলায়। নানাধরনের মুখরোচক খাবার এবং একপিস ৫০০ টাকা দামের বালিশ মিষ্টিসহ নানা ধরণের মিষ্টি পাওয়া যাচ্ছে মেলায়। রাজধানী ঢাকা থেকে শুরু করে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে দোকানীরা তাদের পসরা নিয়ে মেলায় বসেছে। মেলার পাশাপাশি প্রতিদিন সন্ধ্যায় মন্দিরে ধর্মীয় অনুষ্ঠান চলছে। মেলায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা নিয়মিত টহল দিচ্ছে। 
 মেলায় ঢাকা থেকে আসা অনুপ বিশ্বাস জানান, লাউপালায় দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রথ উৎসবের কথা তারা আগে থেকেই জানেন। তাই এবছর স্ত্রী, শিশু সন্তান, বোনসহ আত্মীয়-স্বজন সাথে নিয়ে এসে উল্টো রথটানে অংশ নেন। নড়াইল থেকে আসা অদিতি সরকার জানান, করোনার কারণে গেলো দুইবছর তিনি মেলায় আসতে পারেননি। একারণে তার মনে অনেক কষ্ট ছিল। এবছর মেলায় আসতে তার মনে কষ্ট কেটে গেছে। খুলনা ও বাগেরহাট জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা দেবাশীষ বিশ্বাস, সুব্রত পাল, মনিকা হালদার, দেবতী দাদসহ বেশ কয়েকজনের সাথে কথা হলে তারা জানান, আগে তারা মা-বাবার কোলে চড়ে এই রথের মেলায় এসেছে। আর আজ তারা তাদের সন্তানদের কোলে নিয়ে মেলায় আসতে পেরে এক অন্যরকম আনন্দ উপভোগ করছে। 
 আয়োজকরা জানালেন, ১ জুলাই মন্দির থেকে জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা শুরু হয়। শনিবার উল্টোটানের মাধ্যমে জগন্নাথ দেব মন্দিরে ফিরে গেছেন। সনাতন ধর্ম মতে, জগন্নাথদেব হলেন স্বয়ং নারায়ণ। জগন্নাথ শব্দের অর্থ হলো এই জগতের নাথ বা ঈশ্বর। মন্দির কমিটির সাধারণ সম্পাদক অমিত রায় জানান, প্রায় ৪০০ বছর আগে থেকে শ্রীশ্রী গোপাল জিউর মন্দিরে জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়ে আছে। এটি দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রথ উৎসব। প্রতিবছর রথ উৎসবকে ঘিরে মাসব্যাপী মেলা বসে। করোনার কারণে গেলো দুইবছর মেলা বন্ধ ছিল। তিনি আরও বলেন, এবছর করোনার প্রভাব কিছুটা কম থাকায় মাসব্যাপী মেলার আয়োজন করা হয়েছে। মেলায় দূরদূরান্ত থেকে হাজার হাজার দর্শনার্থী আসছে। মেলাকে ঘিরে লক্ষাধিক দর্শনার্থীর সমাগম ঘটবে এখানে।
Tags

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

Top Post Ad

Below Post Ad