৩ ফুট উচ্চতার সোহাগের স্বপ্ন বিসিএস ক্যাডার হওয়া

বাংলাদেশ থেকে বিশ্বজিৎ মন্ডল 

এই শারীরিক গঠন নিয়ে সহপাঠী, প্রতিবেশী ও আত্মীয়-স্বজনদের কাছ থেকে শুনতে হয়েছে অনেক কটূ কথা। তবে এসবের কিছুই তাকে দমাতে পারেনি। কৃতিত্বের সঙ্গে এইচএসসির গণ্ডি পেরিয়েছেন তিনি। 

 উচ্চতা কখনও স্বপ্ন পুরণের বাঁধা হতে পারেনা। ইচ্ছাশক্তি,পরিশ্রম, আত্মবিশ্বাস অবিচল থাকলে সবকিছুই সম্ভব। দেখতে ছোট্ট একটা বালকের মতো হলেও বয়স তার ১৮ পেরিয়েছে। উচ্চতা ৩ ফুট। ওজন মাত্র ২৮ কেজি। জন্ম থেকে হরমোনজনিত জটিলতার কারণে স্বাভাবিকভাবে বেড়ে ওঠা হয়নি তার। এই শারীরিক গঠন নিয়ে সহপাঠী, প্রতিবেশী ও আত্মীয়-স্বজনদের কাছ থেকে শুনতে হয়েছে অনেক কটূ কথা। তবে এসবের কিছুই তাকে দমাতে পারেনি। কৃতিত্বের সঙ্গে এইচএসসির গণ্ডি পেরিয়েছেন তিনি। এখন স্বপ্ন তার বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার। 

বলছিলাম সোহানুর রহমান সোহাগের কথা। তিনি নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার খামার নাচকৈড় মহল্লার মোঃ ফজলুর রহমান ও আমেনা বেগম দম্পতির ছেলে। তার বাবা পেশায় একজন মুহুরি। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে সোহাগ দ্বিতীয়। তিনি স্থানীয় স্কুল সরকারি পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিকে জিপিএ-৪.৮৮ ও গুরুদাসপুর বিলচলন শহীদ সামসুজ্জোহা সরকারি কলেজ থেকে জিপিএ ৫ পেয়ে উচ্চমাধ্যমিক কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়েছেন। এখন তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির স্বপ্ন দেখছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী কিংবা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশনা করার ইচ্ছা রয়েছে তার। পড়াশনা শেষ করে বিসিএস ক্যাডার হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন তিনি। 

জন্মের পর থেকেই সোহাগ গ্রোথ হরমোনের সমস্যায় ভুগছেন। তবে তার পরিবারের অন্য কোন সদস্যদের এমন সমস্যা নেই। সোহাগ জানান, গ্রোথ হরমোন সমস্যার কারণে জন্ম থেকেই আমার এরকম শারীরিক গঠন। এ নিয়ে অনেকবার ডাক্তারও দেখিয়েছি কিন্তু তাতে কোনো লাভ হয়নি। চিকিৎসকরা বলেছেন, আমার গ্রোথ হরমোনের সমস্যা। আমার শারীরিক আকৃতি এমনই থাকবে। আগে আরও শুকনা ছিলাম, এখন বয়সের ছাপে একটু মোটা লাগছে আমাকে। 

সোহাগ আরও বলেন, আশপাশের লোকজন আমাকে নিয়ে অনেক কটূ কথা বলে। মানুষের এমন কথায় আমি কান দিই না। আমি আমার গতিতে এগিয়ে চলেছি। আমার শারীরিক প্রতিবন্ধকতা যেন পরবর্তী জীবনে বাধা না হয় সেই চেষ্টা করছি। এখন আমার স্বপ্ন ঢাবিতে পড়বো এবং পড়াশোনা শেষ করে বিসিএস ক্যাডার হবো। সোহাগের মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম মিঠু বলেন, সোহাগের শারীরিক গঠন হয়তো ছোটদের মত। কিন্তু সে অত্যান্ত মেধাবী ছাত্র। ছোটবেলা থেকে সে মেধাবী। 

বিলচলন শহীদ সামসুজ্জোহা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ এনামুল হক জানান, সোহাগ গ্রোথ হরমোনের রোগী হলেও পড়াশোনায় মেধাবী। তার আচার ব্যবহারে কেউ কখনো বলতে পারবে না সে অসুস্থ। সে আমাদের কলেজের গর্ব। আমি আশা করি সে ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে আমাদের সবার মুখ উজ্জ্বল করবে।
Tags

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

Top Post Ad

Below Post Ad