খুলনা-মোংলা রেলসেতু প্রকল্পের ব্যবস্থাপক অমৃতোষ কুমার ঝা সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বন্দর এখন ওভারলোডেড। সে কারণে মোংলা বন্দরকে আরও গতিশীল করা জরুরি হয়ে পড়েছে। তাই খুলনার সঙ্গে মোংলার সংযোগে বাড়াতে রূপসা রেলসেতু বিশেষ ভূমিকা রাখবে। একই সঙ্গে এই সেতু ব্যবহার করে ভবিষ্যতে ভুটান ও নেপালের মধ্যেও পণ্য পরিবহন সম্ভব হবে। ফলে, এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক গতি আরও বৃদ্ধি পাবে।
সূত্র জানায়, ভারত সরকারের রেয়াতযোগ্য লাইন অব ক্রেডিটের (এলওসি) অধীনে বাস্তবায়িত হচ্ছে খুলনা-মোংলা বন্দর রেললাইন প্রকল্প, যার একটি অংশ এই রূপসা রেলসেতু। এর নির্মাণ কাজ চলতি বছর ২৫ জুন শেষ হয়েছে। ভারতীয় ইপিসি ঠিকাদার মেসার্স এলএন্ডটি এই ৫.১৩ কিলোমিটার দীর্ঘ ব্রডগেজ সিঙ্গেল ট্র্যাক রূপসা রেলসেতু নির্মাণ করে। এই প্রকল্পের মোট ব্যয় ৩৮৮.৯২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। আর শুধু রূপসা সেতু নির্মাণের ব্যয় ১৬৯.২৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
রূপসা সেতু প্রকৌশলগত দিক থেকে এটি একটি অনন্য কীর্তি। এটির পাইলিংয়ের জন্য বেস গ্রাউটিং নামক একটি বিশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছিল। ভায়াডাক্ট সেকশনে ৮৫৬টি পাইল ফাউন্ডেশন নির্মাণ করা হয়েছে। আর ৭২টি পাইল ফাউন্ডেশন স্টিল ব্রিজ সেকশনের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে, যার গড় পাইল দৈর্ঘ্য ৭২ মিটার। নদীতে নৌ চলাচলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সেতুটির রয়েছে অতিরিক্ত বৈশিষ্ট্য যেমন - নেভিগেশন ফেন্ডার পাইল, যা রয়েছে পায়ারের নিচের দিকে। মূল সেতুর নেভিগেশনাল ক্লিয়ারেন্স স্ট্যান্ডার্ড হাই-ওয়াটার লেভেল থেকে ১৮ মিটারেরও বেশি। স্টিলের তৈরি এই সুপারস্ট্রাকচার সেতুটির নির্মাণসামগ্রী ভারত থেকে সড়ক, সমুদ্র ও অভ্যন্তরীণ নদীপথে আমদানি করা হয়।
রূপসা রেলসেতু দেশের রেল ও সামুদ্রিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে একটি বিকল্প রুট সৃষ্টি করবে। এই অঞ্চলের অন্যান্য দেশগুলোর জন্য বন্দরটি ব্যবহার এবং উপ-আঞ্চলিক বাণিজ্য বৃদ্ধির সুযোগ দেবে।
রূপসা রেলসেতু এবং খুলনা-মোংলা বন্দর রেললাইনটি পণ্য পরিবহনে ব্যাপক সুবিধা সৃষ্টি করবে। মোংলা বন্দরের সাথে এই সহজ ও উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে এই অঞ্চলের কৃষকেরা তাদের উৎপাদিত কৃষি পণ্যসহ অনায়াসেই স্থানীয় বাজারগুলোতে ব্যবসা করার সুযোগ পাবে। এটি বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিশিষ্ট স্থানগুলিতে পর্যটনকে ইতিবাচকভাবে প্রভাবিত করবে বলে আশা করা হচ্ছে।