তারকেশ্বরঃ দুর্ঘটনায় পা কাটা দেশি কুকুরের সেবা করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করল নবম শ্রেণির ছাত্র

 স্বামী বিবেকানন্দের সেবার আদর্শ নিয়েই অসহায় কুকুর-বিড়াল-পাখিদের সেবা করে চলেছে নবম শ্রেণির ছাত্র সোহন। এই অসহায় না-মানুষদের সেবার জন্য সে চিকিৎসক হতে চায়, মানুষদের নয়, পশুদের। তাই ইচ্ছা, মাধুমিক পাশ করে সায়েন্স নেওয়ার, যাতে ভেটেরিনারী নিয়ে পড়তে পারে।

মানস পাল, হুগলিঃ রাস্তার ধারেই পড়ে ছিল কুকুরটা। একটা পায়ের অর্ধেক অংশ কেটে গেছে। অন্য পায়েও আঘাত। কাটা অংশ থেকে দুর্ঘন্ধ বের হচ্ছে। কেউ নাক চাপা দিয়ে জায়গাটা পেরিয়ে যাচ্ছে, কেউ ঘৃণার দৃষ্টিতে অসহায় কুকুরটার দিকে তাকিয়ে চলে যাচ্ছে। আবার কেউ বিদেশী কুকুর নিয়ে পাশ দিয়ে মর্নিং ওয়াক করতে যাচ্ছে। এটাই ছিল, বিগত ৩ দিনে ধরে আহত কুকুরটির সামনে ঘটে চলা মানুষের ব্যবহার। একদিকে জুম এর মতো কুকুরের আখ্যান যখন সকলের মুখে মুখে, তখন এই অসহায় কুকুরটির সামনে শুধু মৃত্যু আর মানুষের ঘৃণা।
ঠিক এ ই সময়, পট-পরিবর্তন ঘটল। তারকেশ্বরের পদ্মপুকুরের একটি নার্সিং হোমের সামনে পড়ে থাকা এই অসহায় কুকুরটি নজরে পড়ে স্থানীয় এক নবম শ্রেণির ছাত্রের। সে আর স্থির থাকতে পারে না। কুকুরটিকে যত্ন করে তুলে আনে তার বাড়িতে। তারপর পশু চিকিৎসক ডেকে আনে। তার কাটা পা ড্রেসিং করে ব্যান্ডেজ বাঁধা হয়। শুরু হয় স্যালাইন ও অন্যান্য ওষুধ খাওয়ানোর কাজ। একদিকে সামনেই নবম শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষা। কিন্তু, সে কথার চেয়েও বড় হয়ে ওঠে তার মানবিকতা। তিন রাত জেগে সে সেবা করে চলেছে এই আহত দেশি কুকুরের। রাত জেগে, একহাতে বই, অন্য হাতে কুকুরের পরিচর্যা, ওষুধ খাওয়ানো ইত্যাদি।

জানা গেছে, সোহন শ্রীমানী নামের এই ছেলেটি পশু-পাখিকে ভীষণ ভালোবাসে। 
ছোটবেলা থেকেই তাদের সেবাই তার নেশা। বাড়িতেও আছে একটা দেশি কুকুর, বেশ কিছু বিড়াল আর পাখি। সুযোগ পেলে প্রাইভেট পড়তে যাওয়ার পথে রাস্তার কুকুরদেরও খেতে দেয়, সঙ্গে থাকে ইঞ্জিনিয়ারিং পাঠরতা তার দিদি। 
সোহনকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, এই পড়াশোনার সময় সে যে কুকুর-বিড়ালদের সেবা করছে, বাড়ির অভিভাবকদের সায় আছে? নবম শ্রেণির এই ছেলেটি বলেছিল, সায় আছে বলেই মা এদের জন্য প্রতিদিন রান্না করে দেয়। দিদিও আমার সঙ্গে যায় খাওয়াতে। 

এটাই প্রকৃত শিক্ষা। পড়াশোনাকে অগ্রাহ্য না করে, প্রকৃতি আর তার জীবদের ভালোবাসার শিক্ষাটাই তো মানুষকে মানবিক করে তোলে। যেখানে সমবয়সী ছেলেরা কুকুর দেখলে ঢিল মারে, কিংবা তাদের অসহায় অবস্থা দেখেও মনে রাখে না, তখন এই ছেলেটি তাদের নিয়ে স্বপ্ন দেখে, একদিন পশু চিকিৎসক হয়ে এদের সেবা করবে। শুধু অর্থ রোজগারের জন্য নয়, জীবেদের বাঁচানোর শপথ নিয়ে।
বড় হয়ে কী হতে চাও? 
প্রশ্নের উত্তরে সোহন বলেছিল, ডাক্তার।
 কিছুটা অবাক হয়ে বলেছিলাম, সে তো সবাই হতে চায়, তাহলে, তুমি আলাদা হলে কী করে। 
‘মানুষের ডাক্তার নয়, পশুদের।‘ সোহনের উত্তর। 

সোহন এখন ব্যস্ত, চিন্তিত। কী হবে এই কুকুরটার। পশু চিকিৎসক লক্ষণ অধিকারী জানিয়েছে, কয়েকটা দিন পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে। পশুদের চিকিৎসার ব্যাপারে স্থানীয়রা বলেন, লক্ষণ অধিকারী একজন যোগ্য চিকিৎসক, যিনি পশুদের ভালোবেসে তাদের চিকিৎসা করেন।

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

Top Post Ad

Below Post Ad