গ্রামের সর্বত্র এক চাপা গুঞ্জন, মেয়েটার উপর চরম নির্যাতন করে মেরেছে যে আগে তাকে খুজে বের করুক পুলিশ, তারপর অন্য কথা। গ্রামের মানুষ এই ঘটনার পর আর রাজনৈতিক নেতাদের সহ্য করতে পারছেন না। অন্যদিকে, প্রিয়াঙ্কা টিবরেওয়ালের নেতৃত্বে বিজেপির একটি প্রতিনিধি দল আজ জাঙ্গিপাড়ায় পৌঁছায়। সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার সময় প্রিয়াঙ্কা টিবরেওয়াল বলেন, "মেয়েটি নিখোঁজ হয়ে গেলে পুলিশ কেন ব্যবস্থা নেয়নি? পুলিশ এখন যা বলছে তা একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়। তারা তদন্ত শেষ করার জন্য ৪৮ ঘণ্টা সময়ও চেয়েছে।" তিনি বলেন, "পরিবারের পক্ষ থেকে নিখোঁজের অভিযোগ দায়েরের পরপরই যদি ব্যবস্থা নেওয়া হতো, তাহলে মেয়েটি আজ বেঁচে থাকতো। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্ধারিত গাইডলাইন অনুযায়ী পুলিশ কাজ করেছে, কারণ তিনি সর্বদা ধর্ষণের ঘটনাগুলি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেন।"
বিজেপি নেতৃত্ব যে কথাই বলুক না কেন, তার মধ্যে রাজনীতি থাক বা না থাক, তবে, এটা সত্য, গ্রামের মানুষ এই নৃশংস খুনের পর পুলিশের উপর অনেকটাই আস্থা হারিয়েছে।
যদিও, পুলিশ ইতিমধ্যে তদন্তের কাজ শুরু করে দিয়েছে। পুলিশ কুকুর, ড্রোন দিয়ে এলাকায় তল্লাশি চালিয়েছে। ঘটনাটা ঠিক কী ঘটেছিল তার একটা সামগ্রিক চিত্র তৈরি করছে। পাড়ার লোকের কাছ থেকে জানা গেল, ওই নাবালিকা ছিল সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী। পাড়ার লোকজনের কাছেও ভীষণ প্রিয় ছিল সে। সাইকেল নিয়ে দশমীর দিন বেরিয়েছিল। আর ফিরে আসে নি।
প্রথমে খুব একটা গুরুত্ব দেয়নি জাঙ্গীপাড়া থানা। কিন্তু, ঘটনা ক্রমশঃ জটিল রূপ নেয়, যখন কেটে যায় আরো তিনটে দিন।
অভিযোগে জানা গেছে, প্রথমে জাঙ্গীপাড়া থানা বাড়ির লোকের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করেনি। বরঞ্চ, তাদের যে কথা বলা হয়, তা মোটেই ওই পরিস্থিতে শোভন নয়। প্রাথমিকভাবে, অনেকে মনে করেছিলেন, মেয়েটি জলে পড়ে গিয়েছিল, কিন্তু প্রশ্ন, ওই জুতোজোড়া কার? যদি জলেই পড়ে যায়, সাইকেল সমেত কেন? তাহলে , যে এই কাজটা করেছে, সে কোন প্রমান রাখবে না বলেই, সাইকেলটাও ঝিলেই ফেলে দিয়েছে, নয়তো, সাইকেলটা নিয়ে গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি জানান, পুলিশ প্রথমে সক্রিয় হলে অনেক কিছুই হত। এমনকি, গুরুত্বপূর্ণ প্রমানও পাওয়া যেত। ঝিলের পাশে উদ্ধার হওয়া জুতো কার? এই প্রশ্নের উত্তর এখনো পাওয়া যায়নি। অনেকে বলছেন, আততায়ী, জুতো খুলে ঝিলের জলে নামে, তারপর তাড়াহুড়োয় জুতো ফেলে পালায়।
কিন্তু, এরপর, ওই আততায়ী তার জুতোর খোজে আর ফিরে আসেনি কেন? পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, তারা এক ব্যক্তিকে সম্ভাব্য আততায়ীর তালিকায় রেখেছেন, কিন্তু তদন্তের স্বার্থে তা প্রকাশ করা হচ্ছে না।
অন্যদিকে, জাঙ্গিপাড়ার বিধায়ক তথা রাজ্যের পরিবহণ মন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী জানান,” দোষীদের গ্রেপ্তার করে আইন অনুযায়ী নিতে হবে ৷ আমাদের মতে অযথা মৃত্যু নিয়ে রাজনীতি ঠিক নয় ৷ বিরোধী দল এসে মিথ্যের রাজনীতি করবে, এটা গ্রামবাসীরা মেনে নিতে পারছে না।“
হুগলি গ্রামীণের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার লাল্টু হালদার জানিয়েছেন, পুলিশের অসহযোগিতা’র অভিযোগের বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।"