নবম শ্রেণীর এক ছাত্রের দেড় মাসের সেবায় ট্রেনের ধাক্কায় পা কাটা কুকুরটি আজ সুস্থ হয়ে ফিরে গেল, মুক্তির জীবনে

নিজস্ব প্রতিনিধিঃ আজ থেকে দেড় মাস আগে ট্রেনের ধাক্কায় একটা পা থেঁতলে গিয়েছিল এক পথ-কুকুরের দিন দুই এদিক-ওদিক ঘুরে মৃতপ্রায় অবস্থায় পড়েছিল তারকেশ্বর পদ্মপুকুরের কাকাছে এক নার্সিং হোমের সামনে। কী বুঝছিল কে জানে! কেউ খেয়াল করেনি তাকে। শুধু পচে যাওয়া কাটা পায়ের দুর্গন্ধে নাক ঢেকেছিল নার্সিং হোমে আসা মানুষজন। 
কেউ কেউ তাড়া দিয়েছিল তাকে । ওঠার ক্ষমতা ছিল না তার, তাই শুয়ে শুয়েই মানুষের নির্যাতন ভোগ করছিল এই না-মানুষটি, যাকে মানুষেরা বলে কুকুর।
এটাই ছিল, আহত হওয়ার পর বিগত ৩ দিনের রোজনামচা। এই অসহায় কুকুরটির সামনে শুধু মৃত্যু আর মানুষের ঘৃণা। পড়ে থাকা এই অসহায় কুকুরটি নজরে পড়ে সোহন শ্রীমানী নামের স্থানীয় এক নবম শ্রেণির ছাত্রের। সে আর স্থির থাকতে পারে না। 
কুকুরটিকে যত্ন করে তুলে আনে তার বাড়িতে। তারপর পশু চিকিৎসক ডেকে আনে। তার কাটা পা ড্রেসিং করে ব্যান্ডেজ বাঁধা হয়। শুরু হয় স্যালাইন ও অন্যান্য ওষুধ খাওয়ানোর কাজ। একদিকে সামনেই নবম শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষা। কিন্তু, সে কথার চেয়েও বড় হয়ে ওঠে তার মানবিকতা। দিনরাত জেগে সে সেবা করে চলেছিল এই আহত দেশি কুকুরের। রাত জেগে, এক হাতে বই, অন্য হাতে কুকুরের পরিচর্যা, ওষুধ খাওয়ানো ইত্যাদি।
এরপর দেড় মাস কেটে গেছে। আজ সেই কুকুরটি সুস্থ। দিনের পর দিন পশু চিকিৎসক লক্ষণ অধিকারীর সাহায্যে আর ধারাবাহিক সেবার মধ্য দিয়ে সোহন ফিরিয়ে দিতে পেরেছে এই ছোট্ট পশুটির জীবন। ফিরিয়ে দিতে পেরেছে তার নিজের জীবনে। আজ তাকে ছেড়ে দেওয়া হল তার সঙ্গীদের মাঝে। পুরানো সেই জীবনে ফিরতে পেরে সে আর ঠিক থাকতে পারছিল না, বার বার লেজ নেড়ে আর মুখের অঙ্গভঙ্গী করে সে জানাচ্ছিল তার প্রাণের কৃতজ্ঞতা।
সোহন আর তার দিদি আজ বিকালে তাকে ফিরিয়ে দিল চেনা জীবনে, যে জীবনে হয়তো নিশ্চয়তা নেই, কিন্তু আছে স্বাধীনতা। ওকে ছেড়ে দিতে গিয়ে হয়ত ওদের মনটাও খারাপ হয়েছে, কিন্তু বন্দীত্বের জীবনের চেয়ে মুক্তির আনন্দ যে অনেক বড়ো, সেটা ওরা যেমন বুঝেছে, ওই ছোট্ট প্রাণীটাও বুঝেছে, যেটা বোঝে নি, সেটা হল, সব মানুষ কিন্তু ওদের মতো নয়।

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

Top Post Ad

Below Post Ad