মনকে শুদ্ধ রাখাই ভালো থাকার পাস-ওয়ার্ড। আর ধ্যান হলো সেই ইন্টারনেট, যা ভগবান তথা সদগুরুর সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যম। মন্ত্র জপ হলো মনকে শুদ্ধ করা তথা জাঙ্ক ফাইলকে বের করা ও আজেবাজে লিঙ্ক যাতে মনের সিপিইউ তে ঢুকে পড়তে না পারে, তার একটা ফিল্টার।
তারক
ঘোষ
পাঠকদের প্রতি একটি নিবেদন
আপনারা যদি বিজ্ঞাপনগুলি ক্লিক করে অন্ততঃ ২০ সেকেন্ড করে দেখেন, তাহলে এই সংবাদপত্র, বিজ্ঞাপনবাবদ অর্থ পেতে পারে। আপনারা জানেন, নিউজপেপার চালানোর জন্য এটাই আয়ের একমাত্র উৎস।
বাবাজী
মহারাজ বলতেন, বিপদ ভিতর থেকেই আসে আর কাম আর ক্রোধ হল সবচেয়ে বড় শত্রু। এই দুই রিপু মানুষের যতটা ক্ষতি করতে পারে, তাকে দ্রুতগতিতে নীচে নামাতে পারে, বাকি রিপু এতো তাড়াতাড়ি পারে না।
আপনার লক্ষ্য করে দেখবেন, মনের যত অশান্তি কামনা পূরণ না হওয়ার জন্যই। ওর গাড়ি আছে, আমার নেই কেন? ওর ছেলে এতো বড় চাকরি করে আর আমার ছেলে রাস্তায় ফ্যা ফ্যা করে ঘুরছে। ওর মেয়ের এতো বড় ঘরে বিয় হল, আমার মেয়ের হল না কেন? আমার বন্ধুর মেয়ের সঙ্গে এক সুপুরুষ ইস্কুল শিক্ষকের বিয়ে হল।
ওর সঙ্গে আমার
মেয়ের বিয়ে হলে কতো ভালো থাকতো আমার মেয়ে, ভীষণ সুখী হতো।
বছরখানেক
ভালোই গেল। তারপর একদিন জানতে পারলেন,
আপনার
ওই বন্ধুর
শিক্ষক
জামাই দূর্নীতি করে চাকরি পেয়েছিল। আদালতের নির্দেশে এখন জেলে। মান-সম্মান সব গেল আপনার ওই বন্ধুর আর তার সঙ্গে নেমে এলো
মেয়ের
সংসারে অভাব। তখন আপনি কী ভাববেন? নিশ্চয় ভাববেন, ভগবান যা করেন মঙ্গলের জন্যই, তাই না?
প্রশ্ন
উঠতে পারে, ওর ভাগ্যে ওই ফল কেন?
প্রশ্নটা
ওঠা স্বাভাবিক।
কোন
সদগুরুই, কাউকে অন্যায় পথে যেতে উপদেশ দেন না। একইসঙ্গে বলেন লোভ ত্যাগ করতে। দাদাজী মহারাজ বলতেন, বাস্তব বুদ্ধি হারালে চলে না। কেউ যদি ভালোভাবে খোঁজখবর না করে, শুধু পাত্রের রোজগার দেখে, কোথায় চাকরি করে, এইসব যাবতীয় খোঁজ না নিয়ে বিয়ে দেন, তাহলে অনেকসময় ঠকতে হয়।
আর
তার সঙ্গে থাকে, নিজের জীবনের কিছু অপরাধ। তার সাজা ঈশ্বর তাকে সরাসরি না দিয়ে অন্যভাবে দেন, যাতে সে তার ভুল বুঝতে পারে। তবে, মানুষ সবসময়, নিজেকেই ঠিক ভাবে। একশ্রেণির মানুষ আছে, যাদের আপনি কোনদিনই বোঝাতে পারবেন না, সে ভুল করে চলেছে। সে বুঝতে চাইছে না, এরকম নয় – বুঝতেই পারছে না। ভগবান তাকে ভালো-মন্দ বিচারের ক্ষমতাটাই দেননি।
কামনা
ও কামনা পূর্ণ না
হওয়া
মনের মধ্যে নানা অশান্তির জন্ম দেয়। আর অপূর্ণ কামনা থেকে জন্ম হয় ক্রোধের। আর সেই ক্রোধ ডেকে আনে পাপকে।
কিছু
পাপ যেটাকে ক্রাইম বলে, ধরা পড়লে তার সাজা হয় এই পার্থিব বিচারালয়ে। আর ধরা না পড়লে তার সাজা হয় জীবনের শেষ লগ্নে। আর যে পাপকে ইংরাজীতে সিন বলে, সেটির বিচার পার্থিব
আদালতে হয় না। সেটা তোলা থাকে ঈশ্বরের আদালতের খাতায়।
গীতায়
বলা হয়েছে – শরীর ত্যাগের আগে যে ব্যক্তি কাম-ক্রোধ থেকে উদ্ভুত বেগকে সহ্য করতে পারে, সেই ব্যক্তিই যোগী, তিনিই সুখী। বাবাজী বলতেন – আমাদের জীবনে নানাভাবে লোভ হাতছানি দেয়। এই লোভ নানারূপে আসে। বেশিরভাগ সময় লোভকে চেনা গেলেও, অনেক সময় লোভ আসে ছদ্মবেশে। আর এই ছদ্মবেশী লোভকে চেনা খুব কঠিন। ফলে, এই ছদ্মবেশী লোভের কবলে পড়ে শুধু সাধারণ মানুষ বিপদে পড়ে না, বিপদে সবচেয়ে বেশি পড়েন সাধুরা।
ভক্ত-শিষ্যরা আশ্রমে নানাভাবে দান করেন তাদের সামর্থ্য মতো। কেউ নিয়মিত তার সামর্থ্য মতো অর্থ পাঠান, কেউবা প্রণামী হিসাবে দেন যখন আশ্রমে যান বা গুরুদেবকে সামনে পেলে। এর মধ্যে কোন অন্যায় নেই, অপরাধও নেই। কারণ, আশ্রম চলে সাধারণ ভক্তদের দানেই।
কারণ, সাধুরা যদি অর্থের জন্য নিজেরাই ছোটাছুটি করেন, মোটা অর্থের লোভে ধনী শিষ্য করেন, তাহলে সেটা একধরণের লোভ। এই লোভ সাধু আর গৃহীর মধ্যে কোন পার্থক্য রাখে না। আর এক ধরণের লোভ আছে, যেটাকে বাবাজী বলেছেন ছদ্মবেশী লোভ। একে চেনা কঠিন। অথচ বহু আশ্রমিক সাধক এর হাতছানিতে অজান্তে সারা দিয়ে ফেলেন।
একশ্রেণির
মানুষ আছেন, যারা আশ্রমে মোটা টাকা দান করেন ইনভেস্ট হিসাবে। সাধারণতঃ এই মোটা টাকার উৎস স্বাভাবিক হয় না। কিন্তু, সাধকরা আশ্রমের উন্নতির কথা ভেবে তা গ্রহণ করে ফেলেন। কিন্তু, এর পরিণতি ভালো হয় না। বাবাজীর জীবনে এই ধরণের ঘটনা ঘটেছিল। তবে, বাবাজী পড়ে তা জানতে পেরে, সেটার একটা ব্যবস্থা করেন। এই প্রসঙ্গে বিস্তারিত যাচ্ছি না। গেলে অনেক কথাই উঠবে।
বাবাজী,
জানতেন, সাধকের ক্ষতি ও সাধারণ
মানুষের
যাবতীয় ক্ষতি ও বিপদ অন্যায় লোভ থেকেই আসে। লোভ কামনার জন্ম দেয়। কামনার নিবৃত্তি হলে, পাপ আসে। আর কামনার নিবৃতি না হলে ক্রোধ আসে।
আর
ক্রোধের আগুন, যে কতটা সর্বগ্রাসী হতে পারে, তা আপনারা সংবাদপত্র থেকে জানতে পারেন প্রতিদিন। মনকে শুদ্ধ রাখাই ভালো থাকার পাস-ওয়ার্ড। আর ধ্যান হলো সেই ইন্টারনেট, যা ভগবান তথা সদগুরুর সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যম। মন্ত্র জপ হলো মনকে শুদ্ধ করা তথা জাঙ্ক ফাইলকে
বের
করা ও আজেবাজে লিঙ্ক যাতে মনের সিপিইউ তে ঢুকে
পড়তে
না পারে, তার একটা ফিল্টার।
বাবাজী
সাধকদের উদ্দেশ্যে বলতেন, সাধককে ভবিষ্যতের চিন্তা ত্যাগ করতে হয়। সমদ্রে যখন শয্যা পেতেছি, তখন শিশিরে ভয় কীসের। বাবাজী বলছেন – ‘সূর্য্যকে লাভ করতে হলে অনেক তারাকে ত্যাগ করতে হয়। অনেক তারাকে হারিয়ে তবেই সূর্যের সাথী হওয়া যায়।
বাবাজী
বহুবার বলেছে, শ্রীগীতার ষষ্ঠ অধ্যায় অর্থাৎ ‘ধ্যানযোগ’ পাঠ করার কথা। নিয়মত এই অধ্যায় পাঠ করা উচিত
গৃহীদেরও।
নিষ্কাম
কর্ম ও ধ্যান – এই দুই অপুর্ব জিনিষ সাধু ও গৃহীকে চরম সুখ দিতে পারে বলে বাবা বলতেন। নিষ্কাম কর্ম সম্পর্কে তিনি বলেছেন – যেকোন শুভ সংকল্পকে ধরে বা শুভ আদর্শকে সামনে রেখে জীবন কাটানো। আর একমাত্র ত্যাগ হলো এই নিষ্কাম কর্মের জীবনী শক্তি।
তিনি
গীতার একটি শ্লোকের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেছেন – নিষ্কাম কর্ম মানুষকে ধ্যানের দোরগোড়ায় পৌছে দেয়।এটাই ত্যাগের পুরষ্কার। মানুষ যখন সৎ আদর্শে কোন কারণে আত্মসমর্পণ করে, তখন শেষে এই সৎ আদর্শই ঈশ্বরের রূপ ধারণ করে।
আর
একটি শ্লোকের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বাবাজী মহারাজ বলছেন – আমরা নিজেরাই নিজেদের শত্রু, নিজেরাই নিজেদের মিত্র। ইচ্ছা করলেই আমরা সেই শত্রুকে মিত্র করতে পারি। আর একটি কথা মনে রাখবেন কখনো সংসারী মানুষ অপ্রয়োজনে দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলবেন না।
বাবা
বলছেন – যথার্থ সাধু ব্যক্তি দীর্ঘনিঃশ্বাসের মাধ্যমেও অপরের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেন না।