কু-কথার জের, কারা প্রতিমন্ত্রী অখিল গিরিকে কি ইস্তফা দিতে বলা হবে?



রাজ্যের বাঁকুড়া, পুরুলিয়া জেলা সহ প্রতিটি জেলায় আছে আদিবাসী ভোট। এর একটা বিরাট অংশ বিরোধীদের দিকে চলে যাবার আশঙ্কাটাও কাজ করছে। আসলে, ভোটের বালাই, বড় বালাই। তাই, তারা তাকিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের দিকে। তিনি এখনো মুখ খোলেন নি এ ব্যাপারে। তাহলে, কি বড় কোন ঘোষণা করতে চলেছেন আগামিকাল বেলপাহাড়ীর সমাবেশ থেকে? 

  বিশেষ প্রতিনিধি, কলকাতা ও ভুবনেশ্বরঃ এই মুহুর্তে ভারত সহ পশ্চিমবঙ্গ ও ওড়িশায় যে ব্যক্তিকে নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল দলের ভিতরে ও বিরোধী দলের মধ্যে রাজনৈতিক চর্চা বেশি হচ্ছে তিনি পশ্চিমঙ্গের কারা প্রতিমন্ত্রী অখিল গিরি। ওড়িশার প্রতিটি সংবাদ মাধ্যমে বার বার দেখানো হয়েছে, তার সেই অঙ্গভঙ্গী সহকারে রাষ্ট্রপতির প্রতি অসম্মানজনক ভাষা প্রয়োগের দৃশ্য। 
ওড়িশার বিজেপি নেতৃবৃন্দ সহ সাধারণ মানুষ তীব্র ভাষায় নিন্দা করেছেন পশ্চিমবঙ্গের এই মন্ত্রীকে। একইসঙ্গে তারা অপেক্ষা করে আছেন, প্রতিবেশী রাজ্যের মহিলা মুখ্যমন্ত্রী তার বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেন, সেটা দেখার জন্য। একইসঙ্গে, তারা বলেছেন, বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী ও তৃণমূলের অখিল গিরি, দুজনেই রাজনীতির মানুষ, কিন্তু রাষ্ট্রপতি নন। তিনি দেশের সাংবিধানিক প্রধান। 
তাহলে তাকে রাজনীতির বৃত্তে টেনে আনার কারণ কি? সেটা কি শুধু উপমা দেওয়ার জন্য, না কি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে করা হয়েছে। তার উত্তর চান তারা। ওড়িশাবাসীদের ক্ষোভের আর একটি কারণ হলো মহামান্য রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু তাদের ঘরের মেয়ে। তাই অসম্মানটা আরো বেশি করে বাজছে তাদের মনে। বদলে যাচ্ছে বাঙালিদের প্রতি তাদের ধারণা। ভুবনেশ্বরে বহু বাঙালি সাংবাদিককেও তারা প্রশ্ন করেছিলেন রাজ্যের মন্ত্রীর এই ধরণের শালীনতাবোধের অভাব নিয়ে। 


কিন্তু, এই মুহুর্তে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতির হাওয়া গরম। একদিকে বিজেপি, কংগ্রেস, সিপিএম সহ আদিবাসী সমাজের একটা বিরাট অংশ অখিল গিরির পদত্যাগ ও গ্রেপ্তার চাইছেন। রাজ্যের বহু ও দিল্লির থানায় তার নামে এফআইআর করা হয়েছে। গত ৪৮ ঘন্টা ধরে লাগাতার চলছে বিক্ষোভ সমাবেশ, মিছিল। অন্যদিকে, রাজ্যের শাসক দলের অভ্যন্তরেও ক্ষোভ রয়েছে অখিল গিরির এই কান্ডজ্ঞানশূন্য অশালীন বক্তব্যে। তারাও অপেক্ষা করে আছেন দলনেত্রী তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী কী ব্যবস্থা নেন, সেদিকেই। 
কারণ সামনেই পঞ্চায়েত নির্বাসন। রাজ্যের বাঁকুড়া, পুরুলিয়া জেলা সহ প্রতিটি জেলায় আছে আদিবাসী ভোট। এর একটা বিরাট অংশ বিরোধীদের দিকে চলে যাবার আশঙ্কাটাও কাজ করছে। আসলে, ভোটের বালাই, বড় বালাই। তাই, তারা তাকিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের দিকে। তিনি এখনো মুখ খোলেন নি এ ব্যাপারে। মুখ খোলেননি দলের নম্বর টু নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তাহলে, কি বড় কোন ঘোষণা করতে চলেছেন মুখ্যমন্ত্রী আগামিকাল বেলপাহাড়ীর সমাবেশ থেকে? অস্বীকার করার উপায় নেই, গোটা ঘটনায় বেশ অস্বস্তিতে পড়ে গিয়েছে বাংলার শাসক দল। 


অখিল গিরির মন্তব্যের জেরে দল যে তাঁর বিরুদ্ধে কিছু না কিছু পদক্ষেপ নেবে, তার একটা পূর্বাভাষ পাওয়া গেছে উত্তর কলকাতার সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়। তিনি দলের শৃঙ্খলারক্ষাকারী কমিটির সদস্য। যদিও ঠিক কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হবে বা আদৌ নেওয়া হবে কিনা তা স্পষ্ট করে কিছু জানাননি। এই অবস্থায় দলের ভাবমূর্তি বাঁচাতে অখিল গিরি মন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিতে পারেন বলে একটা ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। 
যদি তা হয়, তাহলে তৃণমূল সরকার এই বার্তাটা আদিবাসী সমাজের কাছে দিতে পারবে যে, তারা তাদের সঙ্গেই আছে। তৃণমূল কোনো অসংবেদনশীল মন্তব্যকে সমর্থন করে না। তারা আদিবাসী সমাজের বন্ধু। আর অখিল গিরি যা বলেছেন তার দায় তিনি নেবেন, কিন্তু সরকারতার বিরুদ্ধে দলগতভাবে ও সরকারীভাবে ব্যবস্থা নেবেন। এমনকি অখিল গিরি নিজেও সেই দিকে লক্ষ্য রাখছেন যে মুখ্যমন্ত্রী কী বার্তা দেন। গতকাল, তিনি আর মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলেন নি, বাড়িতেই থেকেছেন। 
 কিন্তু, তৃণমূল থেকে যদি অখিল গিরির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়, তাহলে বিজেপির আন্দোলে হয়তো ‘জল ঢালা’ যাবে, কিন্তু বিজেপি তথা বিরোধীপক্ষ এটাকে তাদের নৈতিক জয় বলে দাবি করবে। সরকার যে চাপের মুখে পিছু হটতে বাধ্য হয়েছে, এটাই তারা বলবে। কারণ, সরকার যদি সঙ্গে সঙ্গে অখিল গিরির ব্যাপারে ব্যবস্থা নিত, তাহলে তৃণমূলের পক্ষে বোঝানো আরো সহজ হত যে তাদের দল রাষ্ট্রপতির প্রতি এই অসম্মান মেনে নেয় না। 
কিন্তু সময় অনেক পেরিয়ে গেছে। তৃণমূল যে সিদ্ধান্তই নিক, বিরোধী দল কিন্তু অনেকটাই সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে।

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

Top Post Ad

Below Post Ad