শ্রীশ্রী ১০৮ স্বামী প্রজ্ঞাদাস কাঠিয়াঃ যেমন দেখেছি তাঁরে..পর্ব ২০

সংবাদ ভয়েস ৯ এর বয়স এখন ৭ মাস। শ্রীবাবাজী মহারাজের আশির্বাদে আর পাঠকদের ভালোবাসায় এই ৭ মাসে সংবাদ ভয়েস ৯ এর পাঠক-সংখ্যা প্রায় ১ লক্ষ। আগামী বছরের প্রথম ২ মাসের মধ্যে তা দেড় লক্ষ অতিক্রম করবে বলে আমাদের আশা। এই অল্প সময়ে শুধু ভারত নয়, বিশ্বের ১২ টি দেশের প্রায় ২৫ হাজার প্রবাসী বাঙালি পাঠক সংবাদ ভয়েস ৯ নিয়মিত দেখেন। শ্রীবাবাজী মহারাজকে নিয়ে এই লেখাটি শুধু ভক্তদের কাছে নয়, বিশ্বের প্রবাসী বাঙালিদের কাছে ভালো লাগছে জেনে, আমি তাদের কাছে কৃতজ্ঞ। বিশ্ব-বাঙালির কাছে দায়বদ্ধ সংবাদ ভয়েস ৯ শ্রীবাবাজীর আশির্বাদ আর পাঠকদের ভালোবাসায় ধন্য। 

উচ্ছৃঙ্খলতা করে ভগবানকে পাওয়া যায় না আবার ম্যাদাটে ভক্তিও অভীষ্ট নয়। 

শ্রীশ্রী বাবাজী মহারাজ 

তারক ঘোষ

পর্ব ২০

কেউ যদি ভেবে থাকেন, বাবাজী বাহ্যিক শুচিতাকে খুব একটা গুরুত্ব দিতেন না, তাহলে সেটা ভুল। বাবাজী মহারাজ বিশ্বাস করতেন বাহ্যিক শুচিতার সঙ্গে অন্তরের শুচিতাও প্রয়োজন, আর এটা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। 
এই প্রসঙ্গে বাবাজী মহারাজ লিখছেন – শ্রীশ্রীবাবাজী মহারাজ বলতেন, ‘বাহ্য শুচিতার প্রয়োজন আছে ঠিকই, কিন্তু শুচিবায়ুগ্রস্ত হওয়া ঠিক নয়। এটা এক প্রকারের রোগ।“ আমাদের বাবাজীও ছিলেন বিজ্ঞানমনষ্ক, তাই বাহ্যিক শুচিতার সঙ্গে যে রোগজীবাণু সংক্রমণের একটা ব্যাপার আছে, সেটা তিনি জানতেন। কিন্তু, বহু মানুষ এখনও আমাদের সমাজে আছেন, যারা বিজ্ঞানকে বেশি গুরুত্ব না দিয়ে ধর্মীয় সংষ্কারকে বেশি গুরুত্ব দেন। সেদিকেও বাবার নজর ছিল। 
তিনি অন্যের বিশ্বাসে আঘাত না করে, ধর্মের মাধ্যমেই তাকে বুঝিয়ে দিতেন, কোন কোন ক্ষেত্রে বাহ্যিক শুচিতার প্রয়োজন। কোন ক্ষেত্রে নয়। 
একবার এক মহিলা স্নান না করেই বাবার বুকে তুলসী পাতা দিতে এসেছেন। বাবা তার দিকে তাকিয়েই বলে উঠলেন, ‘আপনি স্নান করে আসেন নি, না? যান, আগে স্নান করে আসুন।“ 
পরে জেনেছিলাম, তিনি সত্যিই স্নান করেন নি। এরকম হয়েছে, বাবা্র কাছে এক অন্তঃস্বত্বা মহিলা জানতে চেয়েছেন, “বাবা, আমি কি ঠাকুরজীকে ফুল-জল দিতে পারি?” 
বাবা বলেছিলেন, “কেন দিবি না! যতদিন না একেবারে শুয়ে পড়ছিস, দিয়ে যাবি।“


শ্রীরামদাসজী মহারাজ, শ্রীসন্তদাসজী মহারাজ, শ্রী জানকীদাসজী মহারাজদের জীবন তার উপর গভীরভাবে প্রভাব বিস্তার করেছিল, কিন্তু, তার মধ্যে যে আলাদা একটা স্বত্বা ছিল, তা তার জীবন ও কর্মের মেলবন্ধন দেখলেই বোঝা যায়। 
বাবাজী বিশ্বাস করতেন ধর্মীয় নবজাগরণ। বিশ্বাস করতেন ঈশ্বও সত্য, জগতও সত্য। তাই তার কথায় বারে বারে উঠে আসত শ্রীরামকৃষ্ণদেব, স্বামী বিবেকানন্দের নাম। উঠে এসেছে, রবীন্দ্রনাথ, নেতাজী, মহানাম ব্রম্ভচারীর নাম। জগত মিথ্যা, ঈশ্বর সত্য, এই ধারণা ভারতের নবজাগরণে খুব একটা ফলপ্রসূ যে নয়, সেটা তিনি বুঝতেন। 
অদৃষ্টবাদ যে মানব জগতকে অন্ধকারের দিকে টেনে নিয়ে যায়, সেটা তিনি বারে বারে উদ্দাত্ত কন্ঠে ঘোষণা করেছেন। তিনিও স্বামীজীর মতো বিশ্বাস করতেন ধর্ম হাঁড়ির ভিতর থাকে না। আর এই প্রসঙ্গে বার বার তুলে আনতেন স্বামীজী, মহানামব্রত আর রবীন্দ্রনাথের কথা আর তাদের দর্শন। 


ধর্মের মধ্যে নয়, ধর্মের নামে যে নোংরামী, তিনি বারে বারে তার প্রতিবাদ করেছেন। কেন করেছেন? কারণ, তথাকথিত ধর্মের নামে ব্যবসা, গোঁড়ামি আর নোংরামী যে মানুষকে তার অভীষ্টে নিয়ে যেতে পারে না, সেটা তিনি বুঝতে পেরে গিয়েছিলেন। 
বাবাজী কখনোই পছন্দ করতেন না, উদ্দাম ভক্তি। রবীন্দ্রনাথের কবিতা থেকে বলতেন – 

যে ভক্তি তোমার লয়ে ধৈর্য নাহি মানে, 
মুহুর্তে বিহ্বল হয়  নৃত্যগীত গানে
   ভাবোন্মত্ততায়, সেই জ্ঞানহারা উদভ্রান্ত উচ্ছলফেন ভক্তিমদধারা 
নাহি চাহি নাথ। 

তিনি ছিলেন, এই কঠিন সময়ের আদর্শ এক মহামানব। যিনি নিজ মুক্তির কথা ভাবেন নি, সকলের দুঃখ নামক বন্ধন থেকে মুক্তির উপায় খোঁজার চেষ্টা করে গেছেন জীবনভর। সন্ন্যাসী মানে জগত মিথ্যা এই ধ্যান-ধারণায় তিনি বিশ্বাসী ছিলেন না বলেই জগতকে রসাতলের হাত থেকে উদ্ধার করার বার্তা ছড়িয়ে দিতেন মানুষের মনে। 
তাই বুঝেছিলেন, মানুষের জাগতিক দুঃখের হাত থেকে মুক্তি দিতে হলে তাদের মনের সংষ্কার সাধণ আগে করা প্রয়োজন। মনোভূমি যদি তৈরি না করা যায়, সেখানে যতই বীজ ফেলা হোক না কেন, ফসল ফলবে না। 
আগামিকাল

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

Top Post Ad

Below Post Ad