জোশীমঠঃ বাড়ি ভাঙ্গছে, ভাঙ্গছে মন, নষ্ট হচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্য, আশ্রয়হীন নিরাশা চারিদিকে


অলোকেশ শ্রীবাস্তব, চামোলী, উত্তরাখন্ড 

 কে ভেবেছিল আচমকাই নেমে আসবে এই রকম বিপদ! নিজের প্রিয় ঘর-বাড়ি ফেলে চলে যেতে হবে অচেনা গন্তব্যে কিংবা অচেনা ভাড়া বাড়িতে। কেউ ভাবে নি। কিন্তু মনের মধ্যে ভয় একটা ছিল। হঠাৎ বাড়িতে ফাটল দেখা দেওয়া, রাস্তা ফেটে যাওয়া, একটা বড় কিছু ঘটনার ইঙ্গিত দিতে শুরু করেছিল। হিমালয়ের পাহাড়ে যারা বাস করেন, তারা জানেন, প্রকৃতি তার উপর অত্যাচার সহ্য করে না। তার প্রতিফল সে সময়মতো ঠিক দিয়ে দেয়। 
তাই মানুষকে সবসময় মনে রাখতে হয় অনেক কিছু। ভারসাম্য বজায় রাখাই বেঁচে থাকার রাস্তা। আর সেই ভারসাম্য যদি হারাতে থাকে, তাহলে বিপর্যয় একসময় আসবেই। জোশীমঠের ধ্বসের পিছনে সঠিক কারণ কী, সেটা একটা, না অনেকগুলো, তা নিয়ে পরিবেশবিদ, বাস্তুকার ও গবেষকরা তাদের গবেষণার কাজ শুরু করে দিয়েছেন। 
সরকার বাসিন্দাদের নিরাপদ জায়গায় নিয়ে যাচ্ছেন। এলাকাকে খালি করে দিতে বলা হয়েছে, জনগণের স্বার্থে। কিন্তু, এত কিছুর মাঝে উঁকি মারছে একটা প্রশ্ন – হিল স্টেশনগুলিতে অট্টালিকা কিংবা ব্যারেজ করতে গিয়ে প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে না তো? পাহাড় এত কিছুর ভার বহন করতে পারবে তো?
জোশীমঠ। বদ্রীনাথ এবং হেমকুণ্ড সাহিব এর মতো তীর্থস্থানে যাওয়ার প্রবেশপথ। আবার আউলির মতো পর্যটনকেন্দ্র, যেখানে দেশ-বিধেশ থেকে স্কীইং করতে আসেন মানুষজন। ফলে, পর্যটনের সঙ্গে যুক্ত প্রচুর মানুষজন এখানে থাকেন। তাদের সামনেও এক অনাগত অজানা ভবিষ্যত।
জানা গেছে, জোশীমঠে মোট ৪,৫০০ টি ভবন রয়েছে এবং এর মধ্যে ৬১০ টি বাড়িতে দেখা গেছে বিশাল বিশাল ফাটল। এই বাড়িগুলি বিপজ্জনক ঘোষিত হয়েছে। কিন্তু, বাসিন্দারা যাবেন কোথায়! বাইরে প্রচন্ড ঠান্ডা, আর ভিতরে ওৎ পেতে আছে মৃত্যু। সব মিলিয়ে এক তীব্র হতাশায় মন ভাঙ্গছে। বাড়ি ভাঙ্গার মতো ভেঙ্গে যাচ্ছে স্বপ্ন। ক্ষোভ বাড়ছে মানুষের। 
ইতিমধ্যেই উত্তরাখণ্ডের জোশীমঠের ৬০০ টিরও বেশি বাড়িতে ভূমিধ্বসের কারণে ফাটল দেখা দিয়েছে। আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে পুরো শহরে।বাসিন্দারা বলছেন, প্রশাসন তাদের দিকে ঠিক মতো নজর দেয় নি, পরিবেশের কথা না ভেবে, পাহারের উপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে অতিরিক্ত ভার।
স্থানীয়রা মানুষদের সঙ্গে কথা বলেছিলাম। তারা বলছেন, কয়েক মাস আগে পরিস্থিতি সম্পর্কে জেলা ও রাজ্য সরকারকে সতর্ক করেছিলেন। কিন্তু তাদের আশঙ্কাকে কেউ গুরুত্ব দেয় নি। ব্যবস্থাও নেওয়া হয়নি। পরিবেশবিদরাও এই আশঙ্কার কথা শুনিয়েছিলেন। 
কিন্তু, সরকার নীরব ছিল বলে অভিযোগ। চামোলির জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হিমাংশু খুরানা জানান, যাদের বাড়ি বসবাসের একেবারে অনুপযুক্ত বা বিপদের সম্ভাবনা আছে, তাদের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই শহরের বিভিন্ন স্থানে ১,২৭১ জন লোকের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলিকে দেওয়া হচ্ছে রেশন কিট। প্রয়োজনীয় গৃহস্থালী সামগ্রী কেনার জন্য ৫,০০০ টাকা হারে ২.৩০ লক্ষ টাকা করে দেওয়া হয়েছে। 
 কিন্তু, ত্রাণের আগে যেটা ভাবা উচিত ছিল, তা হলো জোশীমঠের ভবিষ্যত নিয়ে বিশেষজ্ঞরা যা বলেছিলেন, তাকে গুরুত্ব দেওয়া। এটাই আশাহীন, দিশাহীন এলাকাবাসীর বক্তব্য।

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

Top Post Ad

Below Post Ad