মর্মান্তিক ভূমিকম্পঃ “তোমরা আমাকে আর ভাইকে এখান থেকে বের করে নিয়ে যাও, আমি বাকি জীবন তোমাদের দাসী হয়ে থাকব।“

ভয়েস ৯, ইন্টারন্যাশানাল ডেস্কঃ মৃত্যুর এই দেশে এখন জীবনের খোঁজ। চারিদিকে ধংসস্তুপ। আর সেই ধংসের মাঝে জীবন খুজে বেড়াচ্ছেন উদ্ধারকারীরা। তাদের পাশাপাশি, বেচে যাওয়া আত্মীয়-স্বজন খুজে বেড়াচ্ছেন তাদের হারানো আত্মীয়দের। গত কয়েকদিনে চোখের জল শুকিয়ে গেছে। মন হয়ে উঠছে কঠোর। মনের মধ্যে এখনো কিছুটা আশা।
 যদি, কোনভাবে খুঁজে পাওয়া যায় হারানো মানুষজনদের। এরই মাঝে সিএনএন এর সাংবাদিকদের চোখে ধরা পড়ল আর এক মর্মান্তিক ছবি। সিরিয়া থেকে বহু দূরে, এই ছবি যে কোন মানুষের চোখে জল আনবেই।
জানা যাচ্ছে, ভূমিকম্পের পর কেটে গেছে প্রায় ৩৬ ঘন্টা। সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে হারামের নিকটবর্তী একটি ছোট গ্রাম বেসনায়া-বিসিনেহ। ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত একটি বাড়ির পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় আচমকাই উদ্ধাকারীরা দেখলেন এক মর্মান্তিক দৃশ্য। ভেঙ্গে পড়া বাড়ির নীচে একটা ফাটল। তার নীচে আটকে পড়েছে দুই শিশু। একজন একেবারে বাচ্চা। অন্যজন একটু বড়। তাদের উপর পড়ে রয়েছে একটা ভারী সিমেন্টের স্ল্যাব। 
হঠাৎ তাদের কানে এল বড় মেয়েটি বলছে- “আমাদের এখান থেকে বের করে দাও, আমি তোমার জন্য সব কিছু করব। আমি তোমার দাসী হব।“ 
একজন উদ্ধারকারী উত্তর দেয়, "না, না। তোমাদের দাসী হতে হবে না। আমরা চেষ্টা করছি।“ আর একজন উদ্ধারকারী বলেন, “তোমাদের মন শক্ত কর। কাঁদবে না।“ 
মেয়েটির নাম মরিয়ম, এবং সে তার ছোট ভাইবোনের মাথার চুলগুলি আলতো করে স্পর্শ করে একসঙ্গে শুয়ে থাকে। তার ছোট ভাইয়ের নাম ইলাফ। ওদের পিতার মতে - একটি ইসলামী নাম যার অর্থ সুরক্ষা। 
মুস্তাফা জুহির আল-সাঈদ জানিয়েছেন, সোমবার ভোরে তার স্ত্রী ও তিন সন্তান ঘুমাচ্ছিলেন, যখন ৭.৮ মাত্রার ভূমিকম্পে চারিদিক কেঁপে ওঠে।  তিনি বলেন, "আমরা মাটির কাঁপন অনুভব করেছি... আমাদের মাথার উপর পড়তে শুরু করে সিমেন্টের চাঙ্গড়। এবং আমরা ধ্বংসস্তূপের নীচে দু'দিন ছিলাম। আমরা এমন একটি অনুভূতির মধ্য দিয়ে গিয়েছি যা আমি আশা করি আর কাউকে অনুভব করতে হবে না।
জানা গেছে, আল-সাঈদের বাড়ি উত্তর সিরিয়ার বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত এলাকা ইদলিব গভর্নরেটে। সেখানে কমপক্ষে ১,২২০ জন নিহত হয়েছেন। অন্যদিকে, সিরিয়ার সরকার নিয়ন্ত্রিত এলাকায় অন্তত ৮১২ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে দেশটির রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা সানা। 
তুরস্ক-সিরিয়া সীমান্তে ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা এখন প্রায় ৮,০০০ - এই সংখ্যাটি বাড়তে পারে বলে ত্রাণ সংস্থাগুলি সতর্ক করেছে। ত্রাণ ধীরে ধীরে অভাবগ্রস্তদের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে, কিন্তু ভূমিকম্পের আগেও জাতিসংঘ বলেছে, সিরিয়ার ৭০ শতাংশ মানুষের মানবিক সহায়তা প্রয়োজন। জাতিসংঘ বলছে, তারা বর্তমানে খাদ্য, আশ্রয়, অখাদ্য সামগ্রী এবং ওষুধসহ তাৎক্ষণিক চাহিদার দিকে মনোনিবেশ করছে।
 ছবি সৌজন্যঃ সিএনএন ও স্কাই

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

Top Post Ad

Below Post Ad