রবার্ট কুটস, ওয়াশিংটন, তারক ঘোষ, কলকাতা
সত্যিই কি ওরা পৃথিবীতে আসতে চলেছে। সত্যজিত রায়ের ‘বঙ্কুবাবুর বন্ধু’ কিংবা স্টিফেন স্পিলবার্গের ‘ইটি’ রা? বিগত কয়েকদিনে মাত্র ৭২ ঘন্টার ব্যবধানে আমেরিকা ও কানাডার আকাশে অদ্ভুত তিনটি যানের উপস্থিতি ও তৃতীয় যানকে গুলি করে নামানোর পর এই প্রশ্নটাই ঘুরছে পেন্টাগনে। মার্কিন সরকারও একেবারে বিষয়টা উড়িয়ে দিচ্ছে না। বরঞ্চ, হাই-এলার্ট জারী করা হয়েছে আমেরিকা ও কানাডায়।
এখানে 'ওরা' বলতে ভিনগ্রহের জীবের কথা বলা হয়েছে, কেননা আকাশে ইউ এফ ও দেখা গিয়েছে তিন তিনবার। ইউ এফ ও বলার কারণ, এগুলি ঠিক কী ধরণের যান, তা বোঝা যায় নি। পৃথিবীর কোথা থেকে এসেছে তাও জানা যায় নি।
তবে, অদ্ভুত কিছু যে একটা ঘটে চলেছে, তা কিন্তু কেউ সরাসরি অস্বীকার করছেন না।
দেখা যাচ্ছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আমেরিকার ওপর দিয়ে উড়ে যাওয়া একটি চীনা গুপ্তচর বেলুন ভূপাতিত করার নির্দেশ দেয়ার কয়েক দিন পর থেকেই এই অদ্ভুত কিছু ঘটতে শুরু করে।
একটি নয়, দুটি নয়, তিনটি পৃথক ইউএফও কানাডা এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উপর দিয়ে উড়ে যাওয়ার সময় ধরা পড়েছে। এখনও জানা যায়নি, কেন তারা উত্তর আমেরিকার আকাশসীমায় অনুপ্রবেশ করেছিল।
এবার একটু পিছনের দিকে তাকানো যাক, ঠিক কী ঘটে চলেছে, যা নিয়ে আমেরিকা ও পেন্টাগন বেশ চিন্তিত। প্রথম ইউএফওকে ৯ ফেব্রুয়ারি উত্তর আমেরিকার আকাশে ৪০ হাজার ফুট উচ্চতায় উড়তে দেখা যায় এবং মার্কিন বিমান বাহিনী ১০ ফেব্রুয়ারি আলাস্কার জলসীমায় এটিকে গুলি করে ভূপাতিত করে। দেখা গেছে, এটি চীনা গুপ্তচর বেলুনের চেয়েও ছোট।
জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র জন কিরবি সাংবাদিকদের বলেন, 'গত শনিবার আমরা যে গুপ্তচর বেলুনটি নামিয়েছি তার চেয়ে এটি অনেক ছোট। মোটামুটি একটি ছোট গাড়ির আকারের।
কিরবি সাফ জানিয়েছেন যে তিনি নিশ্চিত নন যে এটির নজরদারিঞ্চালানোর ক্ষমতা রয়েছে কিনা বা এটি কোথা থেকে এসেছে তা বোঝার জন্য কোনও চিহ্ন নেই। আমরা জানি না এর মালিক কে।“
কিরবি আরও বলেন, "আমরা আশা করছি ধ্বংসাবশেষ টি উদ্ধার করতে পারব কারণ এটা আমাদের সীমানার মধ্যেই পড়েছে এবং বরফের মধ্যেই আছে।“
এই ঘটনা বা আমেরিকার জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্রের বক্তব্য অনুসারে সমগ্র ঘটনাকে আমেরিকা লঘু করে দেখছে না। কারণ, এই ঘটনাগুলির পর আমেরিকা ও কানাডার আধিকারিকদের হাই-এলার্ট জারী করা হয়েছে। এর উপর উত্তর আমেরিকান অ্যারোস্পেস ডিফেন্স কমান্ড (এনওআরএডি) আরও একটি অজ্ঞাত উড়ন্ত বস্তু দেখতে পেয়েছিল।
পরিষ্কারভাবে আধিকারিকরা জানিয়েছিলেন, “আমরা বহিরাগতদের অস্বীকার করতে পারি না।“
নিউ ইয়র্ক টাইমস এর মতে জেনারেল গ্লেন ভ্যানহর্ক যখন একটি সাংবাদিক সম্মেলনে ছিলেন, তখন তাকে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেন, ‘অজ্ঞাত উড়ন্ত বস্তুগুলি উৎপত্তিস্থলে বহিরাগত কিনা’, তখন ভ্যান হার্ক উত্তর দিয়েছিলেন "আমি এই মুহুর্তে কিছুই অস্বীকার করিনি।“
এরপর দ্বিতীয় ঘটনা। আলাস্কায় ইউএফও ভূপাতিত হওয়ার ২৪ ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো কানাডার ইউকন অঞ্চলে একটি ইউএফও ভূপাতিত করার নির্দেশ দিয়েছেন।
কানাডার উদ্ধারকারী দলগুলি এখনও ইউএফওর ধ্বংসপ্রাপ্ত ধ্বংসাবশেষ থেকে কোনও কিছু উদ্ধার করতে পারেনি। তবে যদি তারা তা করত, তবে সেগুলো কতখানি প্রকাশ্যে আসত, তা নিয়েও সন্দেহ আছে।
১২ ফেব্রুয়ারি ইউএফও নিয়ে জাস্টিন ট্রুডো জানিয়েছিলেন, "নাগরিকদের নিরাপত্তা আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার এবং এ কারণেই আমি অজ্ঞাত বস্তুটি ভূপাতিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।“ পেন্টাগনের প্রেস সেক্রেটারি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল প্যাট্রিক রাইডারের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ১২ ফেব্রুয়ারি স্থানীয় সময় দুপুর ২টা ৪২ মিনিটে অজ্ঞাত উড়ন্ত বস্তুটিকে গুলি করে ভূপাতিত করা হয়েছিল।
ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল এই বস্তুটিকে অষ্টভূজাকার এবং ২০,০০০ ফুট উচ্চতায় উড়ছিল বলে বর্ণনা করেছে। অনেক কিছুই অজানা। তবে, রহস্য যে বাড়ছে, তাতে কোন দ্বিমত নেই। নিউ ইয়র্ক টাইমসের মতে অনেক তত্ত্ব রয়েছে তবে কোনও বাস্তব উত্তর নেই: "যদি কোন ভিনগ্রহী তত্ব থাকেও। তা অবশ্যই এখনও স্পষ্ট নয়।