অবতার তত্ত্ব কি বিজ্ঞানসম্মত, না কি মানুষের কল্পনাপ্রসূত?

কারণ খুঁজতে গেলে যে উত্তরটা পাওয়া যায় তা হল-- স্বামী বিবেকানন্দ বা শ্রীরামকৃষ্ণ দত্ত প্রমুখ উত্তরসুরীরা ওনাকে অবতার বলে প্রচার করেছেন।  অবতার সমন্ধে অনেক আলোচনা করা হয়েছে বা বিশদ ব্যাখ্যা করা   হয়েছে, তাই বিস্তারিত না গিয়ে বলি- যিনি সর্বজ্ঞ ও সর্বশক্তিমান হয়েও   মানবোচিত শরীর, মন, বুদ্ধি ধারণ করেন তাকে অবতার বলা হয। 
 তাই   অবতার বা মুক্তপুরুষ বা মোক্ষ প্রাপ্ত পুরুষ পুনরায় এই জগতে মনুষ্য শরীর গ্রহণ করে জগতের কল্যানার্থে কর্ম করে থাকেন। 
 এখন নতুন করে একটা প্রশ্নের উদয় হয়-- এই অবতার তত্ত্ব কি বিজ্ঞানসম্মত, না কি মানুষের কল্পনাপ্রসূত?
এই সমন্ধে ভারতীয় শাস্ত্রে দু ধরনের মতবাদ প্রচলিত আছে-- প্রথমটা বেদান্ত দর্শন ( বা আস্তিক দর্শন) আর অন্যটা চার্বাক দর্শন ( বা নাস্তিক দর্শন) বা বিশেষ জ্ঞানযুক্ত বৈজ্ঞানিক মতবাদ। 
প্রথমে চার্বাক দর্শন বা বিশেষ জ্ঞান বিজ্ঞান সমন্ধে আলোচনা করা যাক। চার্বাক দর্শন বা 'চারু বাক' দর্শনে বলা হল- 'যাবজ্জীবং সুখং জীবেন্নাস্তি মৃতোগোচরঃ। ভস্মীভূতস্য দেহস্য পুনরাগমনং কুতঃ।।' অর্থাৎ যতদিন বাঁচব সুখেই বাঁচব কারণ মৃত্যুকে কেউ অতিক্রম করতে পারে না।
 ভস্মীভূত দেহের কোথা থেকে পুনরাগমন হবে। অর্থাৎ মৃত্যুর পর দেহের আর কোন অস্তিত্ব থাকে না। সুতরাং এখানেই পরিসমাপ্তি। 
বিজ্ঞান বা বৈজ্ঞানিক মতবাদ - 'ব্রেইন ডেথ' এর পর প্রাণীর মস্তিষ্ক তার কার্যক্রম বন্ধ করে ফেললে চেতনার অস্তিত্বের সমাপ্তি ঘটে , তাকে বিজ্ঞানের ভাষায মৃত বলা হয়। আত্মা বলে কিছু হয় না অর্থাৎ মৃত্যুর পর আর কোন অস্তিত্ব থাকে না। বেদান্ত দর্শন- এই দর্শনে জন্মান্তরবাদ বা অবতার তত্ত্বকে স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে। 
এখানে বলা হয়েছে- মৃত্যুর পর আত্মা আর একটি নতুন জীবনে সঞ্চারিত হয়। এই প্রাণকে আত্মা বলা হয়- যেটা প্রাণীর দেহের চালিকা শক্তি বা এক প্রকার এনার্জী। এই এনার্জির কোন ধ্বংস নেই কারণ এটা নিত্য, অজর, অমর, অক্ষয শুধুই পরিবর্তনশীল। 
 এখানে বিজ্ঞান ও স্বীকার করে নিয়েছে যে এনার্জির কোন ধ্বংস হয় না, হয় শুধু পরিবর্তন। এই বিষয়ে বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে - যে কোন প্রাণীর দুটো ভেদ - দেহ (বা জড়পদার্থ) ও প্রাণ (বা চালিকাশক্তি বা চেতনা) তবে বৈজ্ঞানিক মতবাদ ও বেদান্ত দর্শন উভয়েই স্বীকার করে নিয়েছেন যে কোন প্রাণীর দেহ এই জগতের পঞ্চভূতেই সৃষ্টি আর পঞ্চভূতেই লয় বা বিনাশ। সুতরাং দেহের উপাদান- এই জগতের পঞ্চভূতের সমাহার।
তাহলে প্রাণ বা আত্মার উপাদান কি? বেদান্ত দর্শন বলে- কর্মই হল এই আত্মার উপাদান। সুতরাং দেহ সৃষ্টি হতে হলে আত্মার সঙ্গে কর্ম যোগ হতে হবে - যেটাকে 'প্রারব্ধ' কর্ম বলে। 
 বৈজ্ঞানিক মতবাদ- দেহ সৃষ্টির জন্য 'জিন' ও প্রাকৃতিক নির্বাচনের প্রয়োজন। যদি একটু গভীরে যাওয়া যায় তাহলে দেখতে পাওয়া যাবে - মাতৃগর্ভে প্রাণীর যে প্রাণ সঞ্চার হয় এটাকে বিজ্ঞানীরা প্রাকৃতিক নির্বাচন বলেছেন- তাদের কাছে প্রাণের কোন অস্তিত্ব নেই, সবটাই জড়পদার্থ। 
এ ব্যাপারে দর্শনের কৃতি ছাত্র ডঃ প্রজ্ঞাদাস কাঠিয়াবাবার একটা সুন্দর উপমা দিয়েছেন-- সবই যদি জড়পদার্থ হয় তাহলে মা যখন শিশুকে স্নেহ চুম্বন দেন তখন একটা আনন্দের আবেশ বা স্ফুরণ হয়। বিজ্ঞানের ভাষায়- এটা মাযের পেশীর সঙ্গে শিশুর পেশীর সংস্পর্শ অর্থাৎ দুটো জড়পদার্থের সংযোগ, যেখানে চৈতন্য বা প্রাণের কোন ক্রিয়া নেই। কিন্তু বাস্তব ক্ষেত্রে তা হয় না। সুতারাং বিজ্ঞানীদের ধারনা ঠিক নয়।

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

Top Post Ad

Below Post Ad