Hot Widget

Type Here to Get Search Results !

Advt 720

শিশুদের মধ্যেই লুকিয়ে থাকে ভাবী প্রজন্ম, তাই শিশুদের কাছে বাবাজী ছিলেন এক নতুন মানুষ গড়ার কারিগর


সব পাখি মরে গেলেও, পৃথিবীর গান থামে না। বাবাজী চলে গেলেও, থেমে যায় নি, তার দেওয়া শিক্ষা, তার জীবন দর্শন। কেউ না কেউ সে দায়িত্ব নিয়ে নেয়, হয়তো বা তার অজান্তেই। জীবদেহের মৃত্যু হয়, আত্মার হয় না। তিনি এক মহাত্মা। তাই তাকে কোনদিন হারিয়ে যেতে হবে না মহাকালে গহ্বরে। ডিজিটাল ইন্ডিয়া আর ভক্তরাই তাকে ধরে রাখবে, যতদিন এই পৃথিবী থাকবে। আজ থেকে আবার শুরু হচ্ছে শ্রীবাবাজীর কর্ম-জীবনের নানা ঘটনা। যেখানে, তিনি শুধু এক সাধক নন, নতুন ভারত গঠনের, নতুন সমাজ গঠনের এক মহান কারিগর
তারক ঘোষ 


 কবি বলেছেন- ‘লুকিয়ে থাকে শিশুর পিতা, সব শিশুরই অন্তরে।‘ ইংরাজীতে একটি প্রবাদ আছে – Morning shows the day.’ শৈশব যদি সঠিক আভিভাবকের হাতে পড়ে, তাহলে ভবিষ্যতের এক সু-নাগরিক তৈরির কাজটা সহজ হয়ে যায়। আমাদের জীবনের সাফল্য আর ব্যর্থতার একটা কারণ নিহিত থাকে আমাদের শৈশবের উপর। 
প্রাচীন ভারতে, শিশুরা ৮ বছর বয়সেই চলে যেত গুরুগৃহে। সেখানেই তাদের পাঠ শুরু হত। শুধু পাঠ নয়, একটা জীবন কীভাবে সুন্দরভাবে গড়ে উঠবে, তারই চর্চা হত। আশ্রমে গুরুদেবের কাছে থেকে শিক্ষা গ্রহণের দুটি গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল। 
প্রথমতঃ যেহেতু শিশুরা অনুকরণপ্রিয় হয়, তাই তারা গুরুদেবের শুভ দিকের সংস্পর্শে থাকার কারণে, শুভ শিক্ষা পেত। আশ্রমে নানাবিধ কাজ করতে হত এই সমস্ত শিষ্য-শিক্ষ্যার্থীদের। ফলে, প্রথম জীবন থেকেই তারা পরিচিত হয়ে উঠত কর্মের সঙ্গে। যা পরবর্তী সংসার জীবনে তাদের সহায়ক হতো।
অনেকেই জানেন, এখনকার প্রজন্মের ছেলে-মেয়েদের দিয়ে বাড়ির কাজ করানো কতটা কঠিন। তাদের হাতে সময় থাকলে, তারা সেই সময়টা মোবাইলের পিছনে দেবে, কিন্তু সংসারের কাজ এগিয়ে আসতে চায় না। অবশ্য সবাই সমান নয়। তবে, এই কর্মে অনাসক্তি, ভবিষ্যত জীবনে চ্যালেঞ্জ নিয়ে এগিয়ে চলার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে। 
আমি বা আপনারা বাবাজী মহারাজকে দেখেছেন শিশুদের সঙ্গে হাসি-মজায় যেমন সময় কাটাতে, তেমনি দেখেছেন ভোরে বহু শিশুকে গীতা হাতে তপোবন আশ্রমে হাজির হয়ে যেতে। বাবাজী জানতেন – কাঁচায় না নোয়ালে বাঁশ, পাকলে করে ট্যাঁশ ট্যাঁশ।‘ 
তাই শিশুদের শৈশব থেকেই ভারতীয় ঐতিহ্য শিক্ষা, ধর্মীয় গ্রন্থ পাঠের মাধ্যমে তাদের নৈতিক ও আধ্যাত্মিক চরিত্র গঠন করে দেওয়ার চেষ্টা করতেন তিনি। শিশুরা অনুকরণ করতে ভালোবাসে। তাদের মৌখিক শিক্ষা দিয়ে যতটা না ঠিকভাবে বোঝানো যায়, বাবা-মার আচরণের মাধ্যমে, তাদের শিক্ষা দেওয়া যায় অনেক বেশি। 
বাবাজী বলেছেন – যিনি নিজে মিথ্যা কথায় অভ্যস্ত, তিনি সন্তানকে সত্যবাদী হিসাবে গড়ে তুলতে পারেন না। যিনি বা যারা নিজে/নিজেরা ঝগড়া করেন, তিনি বা তারা সন্তানকে ঝগড়া না করার উপদেশ দিলেও শিশুরা সে কথা শোনে না। কারণ, বাবা বা মার উপদেশের তুলনায় তাদের দৈনন্দিন জীবনকেই তারা অনুসরণ করে। 
বাবাজী বুঝেছিলেন প্রাচীনকালের আশ্রমের মতো শান্ত পরিবেশ, একজন জ্ঞানী ও সৎচরিত্র ব্যক্তির কাছাকাছি থেকে যে শিক্ষা, তা মানুষকে প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত করতে পারত। মানুষের শৈশব থেকেই মূল্যবোধ, মানবিকতা, শ্রদ্ধার শিক্ষা লাভ হতো।
আশ্রমে ভোর হলেই দেখতাম, আশপাশের গ্রাম, বা স্থানীয় শিশুরা গীতা নিয়ে চলে আসত তপোবন আশ্রমে। দেখতাম, বাবাজী মহারাজ পুরানো মন্দিরের দুয়ারে বসে তাদের পাঠদান করতেন। তাদের নিত্য উপস্থিতির রেকর্ড রাখতেন। বেদ, গীতা পাঠের মধ্য দিয়ে শুরু হতো তাদের দিন, যাতে ভবিষ্যতে তাদের মধ্য থেকে তৈরি হয়, সত্যিকারের মানুষ।
 আর সেই মানুষদের নিয়ে তৈরি হয় এক নতুন সমাজ। যে সমাজে থাকবে পারষ্পরিক শ্রদ্ধা, ভালোবাসা, আর থাকবে মূল্যবোধ আর মানবিকতা। ছেলে-মেয়েরা হাসিমুখে অভ্যাস করত গীতা। বাবাজী তাদের পাঠদানের পাশাপাশি নানা প্রশ্ন করতেন। 


 সেদিকে তাকিয়ে মনে হত – আমি বোধহয় ফিরে গেছি সেই বৈদিক যুগে, যেখানে এক ঋষি জীবন শিক্ষায় শিক্ষিত করছেন ভবিষ্যতের ভারতকে। 
পাঠ শেষে শিশুদের হাতে দেওয়া হতো কখনো লজেন্স, কখনো বিস্কুট। মাঝে মাঝে বাবাজী শিশুদের নিয়ে নাটক মঞ্চস্থ করতেন। মহাজীবনের নাটক। শিশু-কিশোর-কিশোরীরাই অভিনয় করত। 
এসব ছিল বাবাজী মহারাজের ধর্মীয় জীবন থেকে বেরিয়ে এসে এক উন্নত মানুষের সমাজ গড়ার প্রচেষ্টা। এই আশ্রমে থেকে তখন অনেকেই পড়াশোনা করত। তাদের অনেককেই দেখেছি বাবাজী মহারাজ নিজের হাতে স্নান করিয়ে দিচ্ছেন। কখোনো বকছেন। 
ওই আশ্রমে থেকেই বাবার এক সাধু শিষ্য রাধামাধবজী পড়াশোনা করতেন, আবার আশ্রমের কাজও করতেন। শুধু রাধামাধব নয়, অনেকে শিশুকেই ওখানে দেখেছি সন্ধ্যা-সকালে পড়াশোনা করতে, আবার অতিথি-ভক্তদের সেবা করতেও। এটাই তো জীবন। কর্ম আর শিক্ষা। এই দুটোই প্রয়োজন সার্থক মানুষ হয়ে উঠতে।
জীবন গঠনে শিক্ষা যে অপরিহার্য, শুধু গৃহীই নন, সাধুদেরও যে শিক্ষিত হওয়া প্রয়োজন, সেটাও বাবাজী বুঝেছিলেন। তিনি জানতেন, এমন শিষ্যও আছেন, যারা সাধু-মহন্তদের কাছ থেকে দূরূহ প্রশ্নের উত্তর জানতে চান। 
কিন্তু, সেই সাধু-মহন্ত যদি সেই শিক্ষায় শিক্ষিত না হন, তাহলে তিনি সেই জ্ঞান-পিপাসু শিষ্য-ভক্তদের জানার আকাঙ্খা পূরণ করতে পারবেন না। হয় ভুল উত্তর দেবেন, নয়তো উত্তর না দিতে পেরে শিষ্যেরই লজ্জার কারণ হবেন।
শ্রীশ্রী জানকীদাসজী বলতেন – বর্তমান সময়ে যেহেতু সার্বিকভাবে সেই আশ্রমিক শিক্ষা দানের ব্যবস্থা নেই, (রামকৃষ্ণ মিশন সহ বেশ কিছু আশ্রমিক বিদ্যালয় এখনো আছে, তবে তা সার্বিক ভাবে নয়।) তাই বাবা-মাকেই সেই গুরুর স্থানটা নিতে হবে।
 নিজে টিভি দেখে, ধূমপান করে, খারাপ ভাষায় কথা বলে সন্তানকে নৈতিক শিক্ষা দেওয়া যায় না। আগে নিজের চরিত্র গঠন করতে হবে। প্রাচীনকালে, শিক্ষা জীবনের শেষে গুরুদেবরা শিষ্য বা শিক্ষ্যার্থীকে উপদেশ দিতেন –পিতৃদেব ভব, মা্তৃদেব ভব, সত্য বদ, ধর্মং চর।
আজ সেসব কোথায়। বাবাজীর চলে যাওয়ার পর, সেসব ছবি আর দেখতে পাওয়া যায় না। পরম্পরা হয়তো থামে নি, কিন্তু জীবনের আর এক ধারা থেমে গেছে। সেই ভোরে শিশুদের গীতা পাঠ। আশ্রমে আগত ভক্তদের নির্ভয় চিত্তে গুরুদেবের কাছে যাওয়া। তার প্রবচন শোনা। সে সব ছবি। আমরা তাই অপেক্ষায়। আবার যদি তিনি ফিরে আসেন নূতন রূপে। আশ্রম আবার সজীব হয়ে উঠবে।

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

Top Post Ad

Below Post Ad

Hollywood Movies