বাবাজী মহারাজকে শ্রীশ্রীজানকীদাসজী বলেছিলেন – ‘সাধু হবি, কিন্তু বোকা হবি কেন?’

শ্রীশ্রী জানকীদাসজী তখন বৃন্দাবন আশ্রমে মহন্ত। একদিন তিনি আশ্রমে বসে আছেন। এমন সময় একজন পুলিশ  দাদাজী মহারাজের কাছে এসে বললেন –‘আপনাকে গ্রেপ্তারের আদেশ রয়েছে। তাই আমি আপনাকে গ্রেপ্তার করতে এসেছি।‘ 

আবারও বলি, বাবাজী মহারাজের কাছে শ্রীশ্রীজানকীদাসজী অর্থাৎ তার শ্রীগুরু ছিলেন ভগবান স্বরূপ। আর সেই ভগবানের পায়ের কাছে বসে, তার আদেশ পালন করে আর তার আদর্শ অনুসরণ করেই কাটিয়ে গেছেন সারাটা জীবন। 
কারণ, শ্রীশ্রী জানকীদাসজী তার হাত দুটো ধরে বলেছিলেন –‘আমাকে ছেড়ে যাস না।
 
বাবাজী মহারাজকে একবার দাদাজী মহারাজ বলেছিলেন – ‘সাধু হবি, কিন্তু বোকা হবি কেন? বাইরে বৈষয়িক ব্যাপারে উদাসীন থাকলে চলবে না। অন্তরে বিষয় সম্পর্কে নিরাসক্ত হয়ে বাইরে যোগীর মতো কাজ করে যেতে হবে।‘
এই প্রসঙ্গে তিনি দুটি ঘটনার কথা বলেছিলেন। একবার কয়েকজন যুবক বড়র আশ্রমে এসে শ্রীশ্রীজানকীদাসজীর কাছে মদ খাওয়ার টাকা চায়। তিনি এমনিতে ভীষণ শান্ত মানুষ ছিলেন। কিন্তু অন্যায় আর ন্যায়এর প্রশ্নে তার মধ্যে দেখা যেত এক বজ্র কঠিন রূপ। সেই রূপের দর্শন যারা পেয়েছেন, তারা জানেন সে কথা।
 ওই যুবকদের আবদার শুনে দাদাজী মহারাজ প্রচণ্ড উগ্র হয়ে উঠলেন। তারপর চিৎকার করে শিষ্যদের ডেকে নির্দেশ দিলেন- ওই যুবকদের দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখতে। ঘটনা যে এভাবে অন্যদিকে মোড় নেবে ওই যুবকরা বুঝতে পারে নি। 


একসময় এখানেই আমরা বাবাজীর আরতি দেখতাম, প্রসাদ পেতাম। আজ সব স্মৃতি

তারা ভেবেছিল – শান্তশিষ্ট সাধু মানুষ। চাপ দিলেই টাকা বের করে দেবে। তারা শ্রীশ্রী জানকীদাসজীকে চিনতে ভুল করেছিল। অবস্থা বেগতিক দেখে তারা তখন কাঁদতে কাঁদতে তাদের ছেড়ে দেওয়ার জন্য অনুনয়-বিনয় করতে থাকে। দাদাজী মহারাজ তখন দয়াপরবশ হয়ে তাদের ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন। ওই যুবকরা তখন দাদাজী মহারাজের কাছে ক্ষমা চেয়ে পালিয়ে যায়। 
বাবাজী তথা আশ্রমে উপস্থিত সমস্ত সাধু শিষ্যরা সেদিন বুঝতে পেরেছিলেন, সন্ন্যাসী মানেই ভীরু আর বাইরের জগত সম্পর্কে উদাসীন নন। বাইরের জগতের ন্যায়-অন্যায় সম্পর্কেও তাদের সজাগ দৃষ্টি রাখতে হয়।
আর একটি ঘটনা – শ্রীশ্রী জানকীদাসজী তখন বৃন্দাবন আশ্রমে মহন্ত। একদিন তিনি আশ্রমে বসে আছেন। এমন সময় একজন পুলিশ দাদাজী মহারাজের কাছে এসে বললেন –‘আপনাকে গ্রেপ্তারের আদেশ রয়েছে। তাই আমি আপনাকে গ্রেপ্তার করতে এসেছি।‘
 শ্রীশ্রী জানকীদাসজী তখন তাকে বললেন – ‘গ্রেপ্তারী পরোয়ানাটা দেখি।‘ 
ওই পুলিশ অফিসার গ্রেপ্তারী পরোয়ানাটি বের করে তার হাতে দিলেন। দাদাজী মহারাজ সেটি নিয়ে পড়লেন। দেখলেন, সেখানে দেখলেন প্রচুর ভুলে ভরা ইংরাজী। 


তারপর আচমকাই তিনি তার চোখের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলেন – ‘সত্য করে বল, তুমি কে?’ 
 বাবাজীর সেই দৃষ্টির সামনে তখন ওই পুলিশ অফিসারের অবস্থা খুবই করুণ। 
থতমত খেয়ে তিনি বলে উঠলেন –‘আজ্ঞে, আমি পুলিশ নই, বহুরূপী। আপনার কাছ থেকে একটা টাকা চাইতে এসেছি।‘ 
এই ঘটনাগুলো শ্রীশ্রী জানকীদাসজী বাবাজীকে বলেছিলেন শিক্ষার জন্য। কারণ, সাধু হলেও বাস্তব-জ্ঞানহীন হতে নেই। বাবাজী মহারাজও ছিলেন এক বজ্রকঠোর মহামানব। অন্যায় তিনি সহ্য করতে পারতেন না। সে অন্যায় সমাজকেন্দ্রিক হোক, কিংবা ধর্মকেন্দ্রিক হোক। 
তিনি বলেছিলেন, ‘আমার জ্ঞান মানুষের মধ্যে ভাগ করে একটা সুস্থ সমাজ গড়তে চাই। এই হানাহানি বন্ধ করা, হিংসাকে জয় করা আর লোভকে সংবরণ করা আজ সবচেয়ে বড় প্রয়োজন।‘ 


 বাবাজী বারবার বলতেন, মনে রাখবে, ভগবান সবসময় তোমার প্রতিটি কাজের উপর নজর রাখছেন। তার চোখকে ফাঁকি দেওয়ার কোন উপায় নেই। কাজেই এমন কাজ করবে না, যাতে ভগবান অসন্তুষ্ট হন।‘ 

আসলে কি জানেন, আমরা ঈশ্বরের সিসিটিভি সারভিলেন্সের মধ্যে আছি। কোন একজন, কম্পুটারের স্ক্রীনে আমাদের গতিবিধি লক্ষ্য করছেন। সব রেকর্ড হয়ে থাকছে। আর সেই ভাবে বদলে যাচ্ছে, আমাদের ভাগ্য। 
কেউ হয়তো শেষ জীবনে, কেউ হয়তো মাঝপথেই তার প্রাপ্য পেয়ে যান। বোকা আমরা বুঝতে পারিনা, যে কষ্ট, দুঃখ, নির্যাতন আমরা পাচ্ছি, যে কটু বাক্য আমরা শুনতে পাচ্ছি, তা আমাদেরই ফেলে আসা কর্মের প্রতিফলন। যে কটু বাক্য আমরা শুনছি, সেগুলো আমাদেরই অন্যায়ভাবে কাউকে বলা কথারই প্রতিধ্বনী।

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

Top Post Ad

Below Post Ad