Hot Widget

Type Here to Get Search Results !

Advt 720

বাবাজী বলেছেন- শুধুমাত্র ভোজন শুদ্ধ করলেই চিত্তশুদ্ধি হবে না

কেবল ভোজন শুদ্ধ করে অন্যান্য ইন্দ্রিয় দ্বারা কু-বিষয় গ্রহণ করলে চিত্তশুদ্ধি হবে না। 


হু গৃহস্থ মানুষ মাঝে মাঝেই চরম দোটানার মধ্যে থাকেন। আমিষ আহার করব, না কি নিরামিষ? আমিষ আহার করে কি আমি পারব, ভগবানের পথে এগিয়ে যেতে? যদি তা না হয়, তাহলে নিরামিষ আহার করাই ভালো।
 মন্ত্র দীক্ষা নেওয়ার পর অনেকেই এই সমস্যায় পড়েন। কেউ নিরামিষ আহার করে জানলেই, আর এক আমিষভোজী ভেবে নেন, তাহলে তিনিই কি পাপ করছেন? কারণ, জীবহত্যা মহাপাপ। আহার হিসাবে জীবের মাংস ভক্ষণ ঈশ্বর ক্ষমা করবেন না। 
অনেকে পেঁয়াজ-রসুনের প্রসংগ তুলে, আরো চিন্তায় পড়েন। 
 এই প্রসঙ্গে স্বামী বিবেকানন্দ বলেছিলেন, ধর্ম কি তোর রান্নাঘরে থাকে? 
আর আমাদের বাবাজী মহারাজ তার ‘জীবন পথের পাথেয়’ গ্রন্থে লিখছেন – ‘আহারশুদ্ধির সাহায্যে যে চিত্তশুদ্ধি হয়, তা সবসময় হয় না। অনেক সময় বৃন্দাবন প্রভৃতি তীর্থস্থানে অনেকে নিরামিষ আহার করেন। কিন্তু, সেখানকার আদালতে যত মামলা-মোকদ্দমা চলে, তার একটা বিরাট অংশ যারা নিরামিষ গ্রহণ করেন, তাদের নামেই।‘
 তিনি কী বলতে চেয়েছেন, তা সহজেই অনুমেয়।
এই প্রসঙ্গে আর একটা কথা বলি, সেটা হল – শরীর ভালো রাখতে হলে নিরামিষ আহারের কোন বিকল্প নেই। কিন্তু, দেখতে হবে, যিনি নিরামিষ আহার করছেন, তার শরীরে প্রাণীজ প্রোটিনের দরকার আছে কিনা। আবার অতিরিক্ত প্রাণীজ প্রোটিন, বিশেষ করে একটা বয়সের পর, ডিমের কুসুম কিংবা ‘রেড মিট’ খুব একটা উপকার করে না, অপকারই করে। 
কিন্তু, বাড়ন্ত বাচ্চাদের ক্ষেত্রে এগুলোর প্রয়োজন ভীষণ। এটা গেল একটা দিক।
 আর অন্যদিকে যারা সাধন পথে এগোতে চান, তাদের জন্য বাবাজী বা স্বামী জানকীদাসজীর পরামর্শ হল – কেবল ভোজন শুদ্ধ করে অন্যান্য ইন্দ্রিয় দ্বারা কু-বিষয় গ্রহণ করলে চিত্তশুদ্ধি হবে না। আর সাধন পথে এগোতে গেলে চিত্তশুদ্ধি প্রথম ধাপ। 
স্বামী জানকীদাসজী বলেছেন – আমরা যা কিছু আহরণ করি, সেটাই আমাদের আহার। ইন্দ্রিয় দ্বারা, মন দ্বারা যা কিছুই নিই, তাইই আমাদের খাদ্য।‘ 
যেমন, কেউ সুন্দর একটা গাড়ি কিনে বা বাড়ি তৈরি করে আত্মপ্রসাদ লাভ করেন। বার বার নিজের সুন্দর বাড়ির দিকে তাকিয়ে আর অন্যদের বাড়ির সঙ্গে তার তুলনা করে মনের মধ্যে একটা অহমিকা এনে ফেলেন। অথচ, তিনি হয়তো নিরামিষ আহার করেন।
 কাজেই, বাবাজী বা দাদাজী মহারাজ বলছেন, চিত্তশুদ্ধির জন্য প্রয়োজন, সবরকম ইন্দ্রিয় দ্বারা খারাপ কিছু গ্রহণ করা প্রথমেই বর্জন করতে হবে। বাবাজী মহারাজ একবার বলেছিলেন, যাদের রান্নাঘরের নর্দমায় বা কলতলায় ভাত, উচ্ছ্বিষ্ট ছড়ানো থাকে, সেই বাড়ির গৃহিনীকে একটু সতর্ক থাকতে হবে এসব ব্যাপারে। 
কারণ, অন্তর শুদ্ধির আগে প্রয়োজন বাহ্যিক শুচিতা। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ঘর, গোছানো কাজ সাধন পথের অনুকূলই নয়, বাড়ির পরিবেশকেও ভালো রাখে। বিষয়টাও স্বাস্থ্যসম্মত। 
বাবাজী মহারাজ লিখেছেন – দাদাজী মহারাজ প্রতিটি কাজ নিষ্ঠার সঙ্গে করতেন। যে জিনিষটা যেখান থেকে নিতেন, কাজ শেষ হলে শেখানেই রেখে দিতেন। তার জীবন ছিল সরল, সিদেসাধা, কিন্তু কঠোর নিয়মে বাঁধা।
শ্রীজানকীদাসজী মহারাজ লিখেছেন – অন্ন তিনভাবে দূষিত হয়। নিমিত্ত দোষ, স্পর্শ দোষ ও দৃষ্টি দোষ। নিমিত্ত দোষ কি? শ্রীজানকীদাসজী বলছেন – কেউ যদি অসৎ উপায়ে অর্থ উপার্জন করে, তার একটা অংশ আশ্রমে দান করেন নিজের পাপস্খলনের জন্য, আর সেই অর্থে কেনা অন্ন যদি সাধক গ্রহণ করেন, তাহলে সেই সাধুর চিত্তবিকৃতি ঘটে। 
যদিও, ইদানিং এই ধরণের বেআইনি পথে উপার্জিত অর্থ বা ‘কালো-টাকা’ আশ্রমে দান করার একটা প্রবণতা দেখা যায়। এর পিছনে, অনেকগুলো উদ্দেশ্য থাকে – 
প্রথমতঃ এই টাকা দান করে পাপের প্রায়শ্চিত্ত করছেন –এরকম একটা ভাবনা।
 দ্বিতীয়তঃ, বিশেষ উদ্দেশ্যে এই টাকা আশ্রমে দান করে, আশ্রমে নিজের আধিপত্য বিস্তার করার প্রচেষ্টা।
 তৃতীয়তঃ সাধুদের মাধ্যমে, বিশেষ কোনো সুযোগ-সুবিধা আদায় করা। তবে, এর পরিণতি ভালো হয় না। অনেক সময় একশ্রেণির ‘সাধু’রা বিত্তশালীদের শিষ্য করার চেষ্টা করেন, যাতে অনেক অর্থ তার আশ্রম পেতে পারে। এই শ্রেণির সাধুদের কাছে ওই বিশেষ ধনী শিষ্যরা গরীব শিষ্যদের চেয়ে বেশি ‘সম্মান’ লাভ করেন। তার প্রসাদ গ্রহণের জন্য বা থাকার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করা হয়।
দাদাজী মহারাজ এই বিষয়গুলিকে একেবারেই প্রশ্রয় দিতেন না। তিনি ধনী শিষ্যদের চেয়ে গরীব শিষ্যদের বাড়ি যাওয়া বেশি পছন্দ করতেন। এই প্রসঙ্গে শ্রীদাদাজী মহারাজের বলা একটি ঘটনা বাবাজী মহারাজ বলেছেন। 
একবার রামকৃষ্ণ মঠে ভান্ডারার ব্যবস্থা হয়েছে। রসুই প্রস্তুত হবার পর মঠের মহারাজ রসুই ঘরে ঢোকেন। আচমকাই তিনি রেগে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন – ‘আজকের ভান্ডারার অর্থ কে দিয়েছেন, তাকে আমার সামনে নিয়ে এসো।‘ 
 ওই ব্যক্তি আসার পর মহারাজ তাকে জিজ্ঞাসা করলেন , ‘আপনি ভান্ডারার অর্থ কীভাবে রোজগার করেছেন সত্য করে বলুন।‘ 
ওই ব্যক্তি তখন ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে বললেন, ‘এই অর্থ পাপের পথে উপার্জিত। তাই পাপের ভয়ে বিচলিত হয়ে এই উপার্জনের কিছুটা ভান্ডারা দিয়ে পাপমুক্তির ব্যবস্থা করতে চেয়েছিলেন।‘
 আসলে, সেই মহারাজ রসুই ঘরে গিয়ে এক অলৌকিক দৃশ্য দেখেছিলেন। সমস্ত রসুইএর উপর তিনি রক্তের ছিটে দেখতে পেয়েছিলেন।
 পরে জানতে পারেন, তিনি রেলের কন্ট্রাক্টর ছিলেন, এক রেল দুর্ঘটনার সময়, তিনি বহু আহত যাত্রীকেও মেরে ফেলেন, তাদের মৃতদেহ লুকিয়ে ফেলা হয়। আর এভাবেই বিশেষভাবে তিনি অনেক অর্থ লাভ করেন।“

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

Top Post Ad

Below Post Ad

Hollywood Movies