তারক
ঘোষ
আমি এই পর্যায়ে বেশ কিছু বিষয় তুলে
ধরছি,
যেগুলি
বাবাজী মহারাজ তার নানা প্রবচনে যেমন বলেছেন, আবার লিখেও গেছেন।
এই কথাগুলি, তাকে আমাদের সামনে তুলে ধরেছে একটু
অন্যভাবে। যে
বাবাজী মহারাজকে আমরা দেখতে অভ্যস্ত, এখানে ঠিক সেই রূপটা
নয়,
ধরা
পরেছে এক জ্ঞানী আধুনিক বিজ্ঞানমনষ্ক সন্ন্যাসীর রূপ। যেখানে তিনি সবকিছু পরীক্ষা
করেই গ্রহণ করেন।
‘একটি
করুণ ইতিহাস’ নিবন্ধে বাবাজী মহারাজ লিখলেন – ‘অনেকে কথায় কথায় ‘জয় রাধে, জয় রাধে’
বলে থাকেন। বাবার (শ্রীজানকীদাসজী) মুখ থেকে আমরা কোনদিনেরূপ কথা শুনি নি। এজন্য
অনেকে ওনাকে অহঙ্কারী বলতেন।“ এর ব্যঝ্যায় বাবাজী মহারাজ বলছেন – ‘আসলে শ্রীজী
(রাধারাণী) আমাদের হৃদয়ের ধন। শ্রীজী নিম্বার্কীয় সাধকের প্রাণস্বরূপা। তিনি অতি
গোপনীয়া পরম আরাধ্যা। কথায় কথায় মন্ত্রস্বরূপা এই নামটিকে বাবাজী মহারাজ (শ্রীজানকীদাসজী) অতি ব্যবহারে দুষ্ট করতে চান
নি।“
বাবাজী
মহারাজ আরও বললেন – ‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই প্রসঙ্গে বলেছেন – কোন জিনিষকে পবিত্র
রাখতে চাইলে, তাকে গোপনে রাখবে। আর ঠিক এই কারণেই বোধহয় শ্রীশুকদেবজী শ্রীমদ্ভাগবত
মহাপুরাণের মধ্যে একবারও শ্রীশ্রী রাধারানীর নাম উচ্চারণ করেন নি। এই ভাব খুব
গম্ভীর। মনে রাখতে হবে, অন্তর্মুখীনতাই নিম্বার্ক সম্প্রদায়ের প্রাণ। এটাই আদর্শ।‘
যারা এই বইটি কিনতে চান, যোগাযোগ করুন 8927042594 Whatsapp নম্বরে।
বাবাজী
মহারাজ ছিলেন সত্যদ্রষ্টা। তাই সত্যকেই জীবনের সার বলে মনে করতেন। তিনি মূর্তি
পুজোর বিরোধী ছিলেন, তবে অন্যকে নিষেধ করতেন না। আমাদের একবার বললেন, বাড়িতে মাটির
বা অন্যকিছুর মূর্তি না রেখে ছবি রাখবি, পরিষ্কার করবি। চন্দন দিবি, তুলসী দিবি।“
শ্রীজানকীদাসজী
মহারাজ বলেছিলেন – আমি নিজের ইচ্ছায় কোন বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করতে ইচ্ছুক নই। অনেক
সময় দেখা যায়, বিগ্রহের সেবা চালাতে না পেরে মানসিক উদ্বেগ আসে। এটা একটা বোঝা বলে
মনে হয়। এতে হীতে বিপরীত হয়। আবার আমি যদি বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করে নিজে সেবা না করে,
অন্যকে বেতন দিয়ে সেবা করাই, তাহলে আমার চিত্তশুদ্ধি হবে না। আর যিনি অর্থের
বিনিময়ে সেবা করছেন, তার জীবিকা নির্বাহ হবে ঠিকই, কিন্তু চিত্ত শুদ্ধি হবে না।
বাবা
অসমের প্রবচনে বসে বললেন – ভগবানকে কে লাভ করবেন? এর উত্তরও তিনি দিলেন। একইসঙ্গে
তিনি বললেন, এখানে যারা বসে আছেন, তাদের মধ্যে এমন কিছু মানুষ আছেন, যাদের পায়ের
ধুলোর যোগ্য আমি নই। তাহলে ভগবান কাকে বরণ করবেন? যাকে বরণ করবেন, তিনিই ভগবানকে লাভ
করবেন। কারণ বরণ করা মানে স্বরূপ প্রকাশ করা। সকলের কাছে তিনি তার স্বরূপ প্রকাশ
করেন না, তাই সকলে ভগবান লাভ করতে পারেন না।
বাবাজী
বললেন সেই অপূর্ব কথা – ভগবান তাকেই বরণ করবেন, যার মধ্যে এই জ্ঞানটা খুলে গেছে যে
‘আমি কিছু জানি না’। অনেকে মুখে বলে ‘আমি কিছু জানি না’। মুখের এই কথায় কিছু হয়
না। অন্তর থেকে যতক্ষণ না সেই অনুভূতিটা
হচ্ছে, ততক্ষণ ধৈর্য্য রাখতে হবে।
আর
একটা গুরুত্বপূর্ণ কথা বললেন তিনি – আমরা ঢাক-ঢোল নিয়ে পুজো করতে যাচ্ছি। কে বেশি
জাঁকজমক করতে পারে, তা নিয়ে যেন প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যায়। কিন্তু মূল লক্ষ্যটা
কী? পুজো? না জাঁকজমক? এ যেন কবিগুরুর কথায় ‘তোমায় পূজার ছলে তোমায় ভুলে থাকা’। এর
চেয়ে অনেক ভালো ভক্তি সহকারে একটা ফুল-ফল দিয়ে ভগবানএর পুজো করা।
বাইরের
ভক্তি প্রদর্শনকে বাবা মেনে নিতে পারতেন না। তাই অনেক সময় যুক্তি দিয়ে তার
সমালোচনাও করেছেন। তিনি বললেন – মা লক্ষীর আসল পুজো হলো কৃষিকাজ করা এবং সৎ পথে
উপার্জন করা। কেবল লক্ষীর পাঁচালি পড়া আর সিদুর দিয়ে মায়ের ফটো ভর্তি করা নয়।
ভাবুন
ধর্ম সম্পর্কে কতটা জ্ঞান ও আধুনিক মনষ্ক হলেই তবেই এই কথা বলা যায়। সেই কারণে আমি
বাবাজী মহারাজকে সাধারণ একজন সাধু-সন্ন্যাসী ভাবি না। উনি হলেন বিজ্ঞান-মনষ্ক আধ্যত্ম-বিজ্ঞানী
ও সংষ্কারক।
তিনি
বললেন –মা সরস্বতীর পুজো মানেই নিজের অন্তরকে শুভ্র করা। অন্তরের মলিনতা দূর করার
জন্যই মা সরস্বতীর আরাধনা। মায়ের হাতে বীণা। এটা ছন্দের প্রতীক। ছন্দহীন জীবন
শান্তি দেয় না। মায়ের বাহন হাঁস। এটা সু ও কূ এর মধ্যে কূ কে ফেলে সু কে গ্রহণ করা
শেখায়। আর গনেশ জ্ঞানের প্রতীক। আর এই জ্ঞান হলো
বাহ্যিক জ্ঞান, জাগতিক জ্ঞান। জ্ঞানই সিদ্ধি দান করে।
চলবে…