সদ্গুরু স্থুল, সূক্ষ্ম, কারণ, কারণাতীত, সমস্ত জগতের সমস্ত প্রশ্নের উত্তরদানে সমর্থ। তার কথা শুনলে মনে হবে, সহজ সরল বিষয় যেন সব। আসলে ব্রহ্মকে জানলে, সব তত্ত্বই জানা হয়ে যায়। সদ্গুরু ব্রহ্মসিদ্ধ তাই তিনি জ্ঞানসিদ্ধ। শাস্ত্রের কঠিন তত্ত্বকথা তার মুখে শুনলে মনে হবে, সবই সহজ।
জীবনের যেকোনো মুহূর্তে, তা সে সঙ্কটকালেই হোক, বা সুসময় হোক, স্মরণমাত্র সদ্গুরু
আপনাকে রক্ষা করবেন, বা দর্শন দেবেন, এর অন্যথা হবে না। এমনকি
সদগুরু দেহাতীত হয়ে গেলেও, প্রতিপদে আপনি তার
উপস্থিতি টের পাবেন। সংকটকালে সঠিক পথ দেখাবেন।
তারক ঘোষ
কিন্তু সদগুরু হওয়া নিজে নিজে সম্ভব
নয়। কারণ, সদগুরু নির্বাচন করে দেন স্বয়ং ভগবান। তিনি নিজে সদগুরু হিসাবে কাউকে
পাঠান জন-কল্যাণের উদ্দেশ্যে। তারা তাদের কাজ করেন সর্বসাধারণের জন্য, আবার ফিরেও
যান। আর সদগুরুর সাক্ষাত পাওয়া খুব কঠিন
ব্যাপার। ভারত ঘুরলে হাজারো গুরুর হাজারো আশ্রম পাওয়া যাবে। জটা-দাড়িধারী তথাকথিত ‘গুরু’ও
পাওয়া যাবে, কিন্তু ভাগ্যে না থাকলে সদগুরুর দর্শন মিলবে না।
অনেকে মনে করেন, বাবাজী মহারাজ তো
দেহে নেই, এখন আর গুরু সম্পর্কে বেশি না ভাবলেও চলবে। গুরুর আদর্শ প্রচার, তার কথা
অন্যজনকে জানিয়েই বা কী হবে। বাবাজী মহারাজ দেহে থাকাকালীন এইরকম অনেককে
দেখেছিলাম, যাদের ‘ভক্তি’ দেখে নিজেকে নরকের কীট ভাবতাম। লজ্জা হত – আমি কেন এদের
মতো হতে পারি না ভেবে। কিন্তু, বাবাজীর দেহে না থাকাকালীন এদের অনেকেই বদলে
ফেলেছেন নিজেদের গুরুদেব। আমি এই কথাগুলো বলছি জেনেই।
অথচ, শ্রীজানকীদাসজী মহারাজ বলছেন –
মৃত্যুর পর শ্রীগুরুদেবের দেহের পতন হলেও, তিনি থাকবেন। তোদের কোনো অভাব হবে না।
তার কাছে প্রার্থনা করলে তিনি সব শুনবেন। তোরা ফলও পাবি।
এখন দেখি এদের অনেকে ‘নানা গুরু’ নিয়ে
মাতামাতি করছে, কেবল নিজের গুরুদেব ছাড়া। এটা তাদের ব্যক্তিগত রুচি। অন্য
গুরুদেবকে সম্মান নিশ্চয় দেবেন, কিন্তু নিজের বাবা-মা কে খেতে না দিয়ে অন্যদের
মা-বাবাকে সম্মান জানানোটা বোধহয় ঠিক নয়। আমি এটুকু বুঝি। হয়তো তারাই ঠিক, আমি
ভুল। আমাদের মধ্যে কেউ কেউ সোস্যাল মিডিয়ার
প্রোফাইল পিকচার হিসাবে নিজের ছবির বদলে শ্রীগুরুদেবের ছবি ব্যবহার করেন। জানি না
এটা গুরুভক্তির নিদর্শন কিনা, না কি শ্রীগুরুকে সাধারণ স্তরে নামিয়ে আনা। আমি
জানিনা, বাবাজী দেহে থাকাকালীন এগুলো হতো কিনা। সেদিন এক মহিলা বাবাজীর ছবির নীচে ‘হা-হা’
ইমোজী দিলেন। এগুলো কী গুরুভক্তির অতিরিক্ত লক্ষণ? আপনারা ভেবে জানাবেন। আমি ভুল
বলতেও পারি।
মনে রাখার দায় ও মেনে চলার দায়িত্ব
আমাদের। বাবাজী আমাদের জীবন পথের ঠিকানা দেখিয়ে গেছেন। সেই পথে না চলতে পারলে দোষ
আমাদের।
দাদাজী মহারাজ বলেছেন – সদগুরুর শিষ্য
হল ছিপে গাঁথা মাছ।
এখন, আমরা দেখে নেই শ্রীগুরুর মধ্যে কী
কী লক্ষণ থাকলে, তাকে সদগুরু হিসাবে চেনা যাবে। কারণ, দীক্ষা নিলে প্রকৃত সদগুরুর
কাছেই দীক্ষা নেওয়া উচিত, যে কোনো গুরু শিষ্যকে মুক্তির পথ দেখাতে পারবেন না।
সদগুরু হলেন শান্তিদাতা - সাপুড়ের কাছে গেলে, সাপ যেমন নিস্তেজ হয়ে যায়। ঠিক তেমনি, আমাদের মন যতই চঞ্চল, বিষন্ন, চিন্তামগ্ন, বিরক্ত বা বিক্ষিপ্ত থাকুক না কেন, সদগুরুর কাছে গেলে, আমাদের মন শান্ত ও শান্তিতে ভরপুর হয়ে যাবে ।
সদ্গুরুর কাছে বহু লোক
বহু প্রশ্ন নিয়ে আসে। গুরুদেব, একজনের প্রশ্নকে কেন্দ্র করে, সবার প্রশ্নের সমাধান করে দেন। আপনারা হয়ত বাবাজী মহারাজের
ক্ষেত্রেও এটা লক্ষ্য করে থাকবেন।
সদ্গুরু স্থুল, সূক্ষ্ম, কারন, কারনাতীত, সমস্ত জগতের সমস্ত প্রশ্নের উত্তরদানে সমর্থ। তার কথা শুনলে মনে হবে, সহজ সরল বিষয় যেন সব। আসলে ব্রহ্মকে জানলে, সব তত্ত্বই জানা হয়ে যায়। সদ্গুরু ব্রহ্মসিদ্ধ তাই তিনি জ্ঞানসিদ্ধ। শাস্ত্রের কঠিন তত্ত্বকথা তার মুখে শুনলে মনে হবে, সবই সহজ।
জীবনের যেকোনো মুহূর্তে, তা সে সঙ্কটকালেই হোক, বা সুসময় হোক, স্মরণমাত্র সদ্গুরু
আপনাকে রক্ষা করবেন, বা দর্শন দেবেন, এর অন্যথা হবে না। এমনকি
সদগুরু দেহাতীত হয়ে গেলেও, প্রতিপদে আপনি তার
উপস্থিতি টের পাবেন। সংকটকালে সঠিক পথ দেখাবেন।