Hot Widget

Type Here to Get Search Results !

Advt 720

দেহান্তের পরও বাবাজী মহারাজ আবির্ভূত হয়েছিলেন তার প্রাণপ্রিয় শিষ্যদের বিপদ থেকে উদ্ধার করতে

 



 বাবাজী বলতেন যার যেমন আঘাত ভগবান তাকে সেই ওষুধই দেন। যিনি অর্থের অভাবে কাতর, তাকে অর্থ দেন। যিনি পরনারী বা পরপুরুষে কাতর, তারা তাই পান। কিন্তু, অর্থ বা অন্যায় প্রণয়যে যথার্থ সুখ দেয় না , সেটাও ভগবান সময়ে বুঝিয়ে দেন তাদেরআর যিনি সর্ব অবস্থায় শুধু ভগবানকেই পেতে চান, তিনি সেটাই লাভ করেন। সেই ভক্ত বা শিষ্য তখন সবকিছুতেই সমদর্শী হয়ে যান। যিনি ধ্যান করতে করতে সত্য সত্যই সেই গভীর অবস্থায় উপনীত হন, তখন তিনি নির্বাক হয়ে যান।

 

তারক ঘোষ

 

আমাদের বাবাজী মহারাজ আমাদের ন্যায়, সত্য, অহিংসা, মিলন আর সঠিক জীবনের পথ দেখাতে এসেছিলেন। কুসংষ্কারমুক্ত এক জীবন আমাদের দিতে এসেছিলেন আলোক পথের সন্ধান। আমরা নিতে পারিনি। সেই আলোক পথ আমাদের সামনে ধীরে ধীরে অন্ধকারে ঢেকে যাচ্ছে। পূর্ণ অন্ধকার নেমে আসার আগে আমরা  যদি আর একবার কিছু ঘটনার দিকে তাকাই, তাহলে দেখতে পাব, আজও তিনি শিষ্যদের আকুল ডাকে সাড়া দিতে নেমে আসেন এই মর্ত্যধামে। আর এর পিছনে আছে শ্রীদাদাজী মহারাজকে দেওয়া বাবাজী মহারাজের কথা। দাদাজী মহারাজ বাবাকে বলেছিলেন – শিষ্যদের দেখতে। তিনি আজও অলক্ষ্যে থেকে সেই পরম দায়িত্ব পালন করে চলেছেন।

আমরা দেখতে পাইনা ভেবে মনে করি, তিনি নেই। তাই আমাদের মধ্যে অনেকেই বাবাকে ভুলে গেছেন, অনেকে ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। বাবার ব্যাপারে খুব একটা আগ্রহ দেখান না। তার কথা প্রচারও করেন না। এটা তাদের ব্যাপার। কিন্তু এরকমটা হওয়া কি ঠিক? ভাববেন তারা। কিন্তু, দেহান্তের পর বাবার সঙ্গে অলৌকিক সাক্ষাত হয়েছে কেবলমাত্র হাতের একটা আঙ্গুলে গোনা কয়েকজন পরম ভক্তের। তারা আজও বাবাকে ভুলে যাওয়া তো দূরের কথা, বাবার কোন কাজে তাদের আগ্রহ দেখে চোখে জল এসে যায়, ভাবি- আমরা এতটাই পাপী যে বাবাকে ঠিকমতো ডাকতেও পারি না।

আমি দেখেছি, আমরা খারাপ কাজ করার আগে শ্রীগুরু নানারূপে আমাদের বাধা দেন। কেউ না কেউ আমাদের সেই কাজ করতে নিষেধ করেন, যে কাজে ভুল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আমরা তখন তাকে চিনতে পারি না। কিংবা, মোহের বশে পরিণামের কথা না ভেবে আমরা এগিয়েই যাই, যতক্ষণ না বিপদ আমাদের চারিদিক থেকে ঘিরে ফেলে। 




বাবাজী মহারাজ অলৌকিকতায় বিশ্বাসী ছিলেন না। কিন্তু, দাদাজী মহারাজের দেহান্তের সময় এমন কিছু অভিজ্ঞতা দাদাজী মহারাজের কিছু শিষ্য লাভ করেন, তিনি তা লিখে যান, গ্রন্থে। এবার সেই কথাই লিখি।




বাবাজী মহারাজ লিখছেন – আসামের হোজাইয়ের পঙ্কজ দে কে শ্রীশ্রীবাবাজী মহারাজ (শ্রীশ্রীজানকীদাসজী মহারাজ) খুব স্নেহ করতেন। দেহান্তের পূর্বদিন রাত্রে শ্রীশ্রীবাবাজী মহারাজ জিজ্ঞাসা করলেন, ‘পঙ্কজকে খবর দেওয়া হয়েছে?’ তাকে জানানো হলো যে খবর দেওয়া তখনও হয় নি। পঙ্কজবাবাউরা তখন হোজাইয়ে শ্রীশ্রীবাবাজী মহারাজের আবির্ভাব তিথি পালনের আয়োজন করছেন। দেহান্তের আগে পঙ্কজবাবুর দিদি স্বপ্নে দেখেন যে শ্রীশ্রীবাবাজী মহারাজ তাদের বাড়ি গিয়েছেন এবং ভারতীদিকে বলছেন, ‘জানিস, আজ আমার আবির্ভাব তিথিতো, আবার আজই আমার তিরোভাব তিথি।ও’ এই স্বপ্নটি দেখে ভারতীদি ব্যাকুল হয়ে পড়েন। পরে খবর পেলেন শ্রীশ্রীবাবাজী মহারাজের দেহান্ত হয়ে গেছে।

এবার আসি, আমাদের বাবাজী মহারাজের এক শিষ্যের অভিজ্ঞতার কথা। যিনি একসময় বাবাজী মহারাজের কাছে গিয়েছিলেন সন্ন্যাসমন্ত্রে দীক্ষিত হওয়ার জন্য। বাবা তাকে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন গৃহ-জীবনে, কারণ, বাবা বুঝেছিলেন, এই সংসার জীবনে তার অনেক কর্তব্য আছে, সেই কর্তব্য তাকে পালন করতেই হবে।

শোনা যাক, তিনি কী উপলব্ধি করেছিলেন – তার কথাতেই।




২০২১ সালে এপ্রিল-মে মাসে কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউ চলাকালীন, দিল্লি যখন প্রায় শ্মশানে পরিণত, তখন আমাদের পরিবারে সবারই করোনা হয়। মা (৬৮ বছর), আমি, আমার স্ত্রী, দুই কন্যা ( ৬ বছর ও আড়াই বছর) স্কলেই আক্রান্ত হই। ওই এক-দেড় বছরে তিনবার করোনা হলেও, ২০২১ সালের ডেল্টাভেরিয়েন্ট ছিল মারাত্মক রকম। অফিসের whatsapp group থেকে বেরিয়ে যেতে হলো রোজই তরতাজা প্রাণ যেতে দেখে। হাসপাতালে জায়গা নেই, অক্সিজেন নেই, এম্বুলেন্স নেই, দেখার লোক নেই। 

এদিকে, স্ত্রীও দুটি মেয়েকে নিয়ে পেরে উঠছে না। একজনের বমি পরিষ্কার হলো তো, আরেকজন করছে। করতে করতে মেঝেতে পড়ে আমরাই জ্ঞান হারাচ্ছি। এইভাবে প্রায় ৭ দিন কেটেছে। যখন সবাই একটু ভালো, মায়ের পাশে বসে সারাত অক্সিজেন, সুগার না মাপলেও চলে, আমি পড়লাম অসুস্থ হয়ে। আমার ৭-৮ দিন কোনো জ্ঞান ছিল না। যখন একটু সুস্থ হলাম, মেয়েদের হাত ধরে হাঁটা শিখলাম, চোখ চেয়ে দেখলাম, আমার শরীরে অজস্র কাটা-ছেড়ার দাগ। 

স্ত্রী বললেন, দরজা-আলমারীতে ধাক্কা খাওয়ার দাগ। অথচ, আমার একটুও ব্যথা নেই। এই সাত-আট দিন আমি কোথায় ছিলাম জিজ্ঞাসা করলে, আমি একই উত্তর দিয়েছি –‘বাবাজীর কাছে। ছোট্ট শিশুর মতো বাবার চারিদিকে ঘুরে বেড়িয়েছি, কোলে চড়েছি, আনন্দে কাটিয়েছি।

 এদিকে, আমার স্ত্রী, মা ও দুই কন্যা আমার শরীরের জন্য খুবই চিন্তায়-কষ্টে ছিল। স্ত্রী আমায় পরে একরাত্রে জানান যে, একরাতে তিনি বাবাকে সশরীরে দেখেন। তারপর, থেকে চিন্তা করা ছেড়ে দেন। বাবাজী সেইসময় আমাদের সকলের দায়িত্ব নিজে নিয়ে কীভাবে সারাক্ষণ পাহারা দেবার মতো পায়চারি করছিলেন, তা আমার স্ত্রী অনুভব করেন। 




এর মধ্যে, বাবাজী একদিন আমার স্ত্রীর কাছে জানতে চান, আমার প্রাণ রক্ষা করবেন কি না। এরপর, সেই রাতেই আমার স্ত্রীকে দীক্ষা-মন্ত্র দান করেন। এই অভিজ্ঞতা আমার নয়, আমার স্ত্রী কাকলি সুরের। তার অনুমতি নিয়ে লিখলাম। কনফার্ম করার জন্য নয়, কৌতুহলের বশে আমার স্ত্রীকে দীক্ষা মন্ত্র বলতে বললে উনি যা বলেন, সেটা সঠিক। 

আমার কাছে আশ্চর্য হওয়ার আর কিছু নেই। কারণ, আমি বাবার ক্ষমতা যে অসীম তা জানি। আমার কষ্ট এই জন্য হয়, যে বাবা আমাকে এতো স্নেহ করতেন ও করে চলেছেন, তার যোগ্য আমি কিনা, এই জন্যই। আরো অনেক ঘটনা, যা বলে শেষ করা যাবে না। 

একদিন আমার স্ত্রী শুধু ভাত রান্না করতে পেরেছেন। আর কিছু রান্না করতে দিচ্ছে না ছোট মেয়ে। শুধু মায়ের কোলে থাকছে। আমাকেও দেখাশোনা করতে হচ্ছে, এরকম অবস্থায় ঠাকুরের কাছে কান্নাকাটি করা ছাড়া তার আর কিছু করার ছিল না। হঠাত, দরজায় আওয়াজ। দুর্গাপুজো কমিটির গোপালদাদা হাতে একটা বড়ো টিফিন বক্সে ডাল, তরকারী ও ভাজাভুজি নিয়ে হাজির। 

এসে বললেন, “পার্থ নাকি বৌদির কাছে ভোগ খেতে চেয়েছে। 

সবাই অবাক। 

সেই সময়টা এমনই যে, টাকা থাকলেও খাবার পাওয়া যেত না, কেউ কাউকে সাহায্য করতে যেতে ভয় পেত। এমন অবস্থায়, গোপালদাদা স্বয়ং ঠাকুরজী, নেপালদাদা বলভদ্রের মতো পাশে এসে দাঁড়ান। যখন, বাইরের পরিস্থিতির একটু উন্নতি হয়েছে, দোকান-পাট খুলতে শুরু করেছে, কাছের একটি ছোট হোটেল থেকে দু-বেলা ডাল-তরকারী-রুটির ব্যবস্থা করেছিলেন আমার স্ত্রী নিজেই। 

আরেক দিন, হোটেলের খাবার আমি খাওয়ার পর, বাড়ির অন্যরা খেতে গিয়ে তাতে কেরোসিনের গন্ধ পায়। আমিও তখন দেখি, হ্যা, সত্যি, কেরোসিনের তীব্র গন্ধ। অথচ, তার একটু আগে আমি ওই খাবারই খেয়েছি। একটুও গন্ধ পাইনি। পরে হোটেলের ওই লোকটি ক্ষমা চেয়ে যায়। সে নাকি কয়লাতে কেরোসিন দিতে গিয়ে, খাবারে পড়ে যায় বলে।

 মীরা বাঈকে দেওয়া বিষের পেয়ালা যেমন তার ক্ষতি করতে পারেনি, বাবাজীর কৃপায় কেরোসিন আমাদের কিছু করতে পারেনি।

বাবাজী মহারাজ একবার এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘মানুষ প্রশ্ন করে, আপনারা এত জ্ঞানের কথা বলে যান, সমাজ বদলানোর কথা বলে যান, মূল্যবোধের 

 কথা বলে যান, তাতেও তো কোন পরিবর্তন হয় না বাবাজী বলেছিলেন – ‘আমরা আসি, বলি, তাতেও এই অবস্থা আমাদের আসতে হয় কেননা, আমাদের আসা বন্ধ হয়ে গেলে, আমাদের বক্তব্যকে মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দিতে না পারলে, সমাজ পিছিয়ে যাবে

 বাবাজী দেখিয়েছিলেন সন্ন্যাসীর জীবন – ‘এলাম, দেখলাম, জয় করলাম’ – এরকম নয় আচমকাই ইচ্ছে হলো জটা-দাড়ি রেখে সাধু হয়ে গেলাম, এটাও নয় তার মতে, এই পথে আসতে গেলে আগে যোগ্যতা অর্জন করতে হয় যোগ্যতা অর্জন না করে কেউ এই পথে এলে তার কথার মধ্যে গাম্ভীর্য্য থাকে না ফাঁকা আওয়াজ হয়ে যায় তার কথা



 আপনাদের আর একবার সেই কথাটা বলি, বাবাজীর শ্রীগুরু শ্রীজানকীদাসজী তাকে বলে গিয়েছিলেন, শিষ্য-ভক্তদের দেখতে। সেই জন্যই তাকে দিয়ে গিয়েছিলেন গুরুশক্তি, তাকে আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত করেছিলেন, যাতে তিনি হয়ে উঠতে পারেন যুগপোযোগী। শ্রীগুরুর সেই আদেশ তিনি আজও পালন করে চলেছেন সবার অলক্ষ্যে, যেমন দেহে থাকালীন গুরুদেবের কোন আদেশ তিনি অমান্য করতে পারেন নি। 

একইসঙ্গে তার এই কর্মের মাধ্যমে আমাদের বুঝিয়ে দিচ্ছেন, গুরুদেবের ভালোবাসা পেতে গেলে, তার আদেশ নির্বিচারে পালন করতে হয়, তাকে ডাকতে হয় মন-প্রাণ দিয়ে ডাকার মতো ডাকা, দেখার মতো চোখ নিয়ে। তাকে চিনতে পারার মন নিয়ে।

 

 

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

Top Post Ad

Below Post Ad

Hollywood Movies