পুলিশ সব পারে…কিন্তু
তারক ঘোষ
পুলিশ সব পারে। ভবানীপুরের দম্পতি খুনের মাত্র দু দিনের মধ্যে তার কিনারা করে পুলিশ প্রমান করলো তাদের সেই ক্ষমতা আছে, যে যাইই বলুক না কেন। আর এটা শুধু কলকাতা পুলিশের ক্ষেত্রে নয়, রাজ্য পুলিশের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। পুলিশ ভালো করেই জানে, তারা আইনের প্রতি দায়বদ্ধ। অশোকস্তম্ভ লাগানো টুপি মাথায় আর ইউনিফর্ম গায়ে চড়ানো মানেই একই সঙ্গে তার দায় কাঁধে নেওয়া। দীর্ঘ ২৬ বছর সাংবাদিকতা পেশার সঙ্গে যুক্ত থাকার কারণে আমি বহু পুলিশ অফিসারকে চিনি, যারা অন্যায় দমনের জন্য নিজের জীবন দিতেও দ্বিধা করতেন না। তাদের অনেকেই আজ অবসর নিলেও বাহিনীর মধ্যে একটা উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত তারা রেখে যেতে পেরেছেন, তাই আজও হাজার হাজার পুলিশ অফিসার ও সাধারণ পুলিশ কর্মী আছেন, যারা আইনের মান্যতা দিয়েই কাজ করতে ভালোবাসেন। কিন্তু, তারপর আর একটা প্রশ্ন থাকে…’পুলিশ সব পারে, কিন্তু’… এই কিন্তুটা কেন? সেটা সবাই জানেন। বিশেষ করে নেতা-মন্ত্রীরা। একটা অদৃশ্য চাপ। প্রত্যক্ষ কিংবা চোখে দেখা যায় না। যার কথা কোনো পুলিশকর্মী সরাসরি প্রকাশ করতে পারেনা। সেই চাপ। আসলে পুলিশ হলো রাষ্ট্রের ক্ষমতার একটা উৎস। আর এই উৎসমুখটা যার দিকে থাকে, সে তখন ‘হয় কে নয়’ করাতে পারে। পুলিশের উপর এই যে চাপ, এটার খুব একটা পরিবর্তন হয় না। রাজা আসে, রাজা যায়। কিন্তু পুলিশের উপর ‘লাগাম’ পরানোর ইচ্ছেটা থেকেই যায়। কিন্তু সব ক্ষেত্রে দোষের ভাগী হয় কারা? অবশ্যই পুলিশকর্মীরা। যখন রাজ্যে খুন বাড়ে, ধর্ষণ বাড়ে, তার দায়ও স্বভাবতইঃ পুলিশের ঘাড়েই পড়ে। অপরাধীকে ধরা তাদের আইনগত কর্তব্য, কিন্তু রাজনৈতিক কারণে যদি বাধা আসে, বা ‘ধীরে চলো’ নীতি নিয়ে পুলিশকে চলতে বাধ্য করা হয়। তার দায়ও পুলিশকে নিতে হয়। মিডিয়া বিরোধীপক্ষ তাদের এক হাত নিয়ে ‘দলদাস’ আখ্যা দিতে ছাড়ে না। আর বিপাকে পরে সরকার, শাসক দল তখন জনগণের সামনে পুলিশের ভূমিকার সমালোচনা করে। পুলিশকে এসব নীরবে মেনে নিতে হয়। কারণ তারা বলতে পারেনা। বলতে গেলে বহুদিন অপেক্ষা করতে হয়, যতদিন না চাকরি থেকে অবসর না আসে। পুলিশের উপর আস্থা না রেখে মানুষ যখ কেন্দ্রিয় এজেন্সির হস্তক্ষেপ দাবি করে, কিংবা আদালত কেন্দ্রিয় এজেন্সির হাতে মামলা তুলে দিতে বলে, তখন ‘মুখ পোড়ে’ কার? পুলিশ জানে, তাদেরই। কারণ সরকার বা দল এ নিয়ে ‘গেল গেল’ রব তুললেও, পুলিশ জানে অপরাধী হয় তারাই। আমরা ভুলে যাই, পুলিশ সামাজিক মানুষ। পুলিশকে নিয়ে খারাপ ইঙ্গিত, তাদের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা- এটা তাদের পরিবার-পরিজন মিডিয়াতে দেখে। ছেলে-মেয়ের সামনে বহু সময় তাদের মাথা হেঁট হয়। কিন্তু দায়ী কারা? একশ্রেণির রাজনীতির কারবারীরা তাদের মাথায় চাপিয়ে দিয়েছে এই অসম্মানের বোঝা। কিন্তু, আজ যদি পুলিশকে পুলিশের কাজ করতে দেওয়া হয়। তাহলে তারা প্রমান করবে বার বার—তারা এই সমাজকে রক্ষা করার যোগ্য। কিন্তু কে শুরু করবে? যারা আজ বিরোধীপক্ষ, পুলিশকে ‘দলদাস’ আখ্যা দেয়, তারা যখন মসনদে বসবে, তারাই দেখবে পুলিশের উপর তাদের অদৃশ্য লাগামটা ঠিক আছে কিনা।