গুমনামীবাবার ডিএনএ নমুনার ইলেক্ট্রোফেরোগ্রাম রিপোর্ট পাওয়ার জন্য আর টি এ করার পর নেতাজী গবেষক হুগলির কোন্নগরের বাসিন্দা সায়ন সেনকে কেন্দ্রীয় ফরেনসিক সায়েন্স ল্যাবরেটরি জানিয়েছে, তারা তিনটি কারণে ইলেক্ট্রো ফেরোগ্রাম রিপোর্ট শেয়ার করবে না। নেতাজি গবেষক সায়ক সেন জানিয়েছেন, কেন্দ্র তাঁর আরটিঅআই প্রত্যাখ্যান করেছে।
ভয়েস ৯, নিউজ ডেস্কঃ নেতাজী সুভাষচন্দ্রের অন্তর্ধানের পর কেটে গেছে বহু বছর, কিন্তু আজও বাঙালির হৃদয়ে, বিশ্বাসে তিনি জীবিত। তার মৃত্যু নেই, আর তার হারিয়ে যাওইয়া, আজও রহস্যে মোড়া। রাজনৈতিক নেতাদের সদিচ্ছার কারণেই হোক, বা অন্য কোনো কারণেই হোক, আজও তার মৃত্যু রহস্য উদ্ঘাটনে সেই পদক্ষেপ কি নেওয়া হয়েছে? প্রশ্নটা দেশের স্বাধীনতাকামী মানুষের। নেতাজীর বিকল্প, আজও নেতাজীই।
সম্প্রতি, নেতাজী রহস্যে আবার এক নতুন মোড়। আর সেটা হলো গুমনামীবাবার ডিএনএ নমুনার ইলেক্ট্রোফেরোগ্রাম রিপোর্ট পাওয়ার জন্য আর টি এ করার পর ‘মিশন নেতাজি’র সদস্য নেতাজী গবেষক হুগলির কোন্নগরের বাসিন্দা সায়ন সেনকে কেন্দ্রীয় ফরেনসিক সায়েন্স ল্যাবরেটরি জানিয়েছে, তারা তিনটি কারণে ইলেক্ট্রো ফেরোগ্রাম রিপোর্ট শেয়ার করবে না। তথ্য জানার অধিকার আইনে ২০০৫-এর ধারা ৮(১), (এ), (ই) এবং ১১(১) উল্লেখ করে তাঁর ডিএনএ রিপোর্ট জানতে চাওয়া হয়। তিনি ২৪ সেপ্টেম্বর আরটিআই দায়ের করেন। কিন্তু এক মাসের মধ্যে তাঁকে জানিয়ে দেওয়া হয় রিপোর্ট দেওয়া সম্ভব নয়।
কেন্দ্রীয় ফরেনসিক সায়েন্স ল্যাবরেটরি মূলত তিনটি কারণ দর্শিয়েছেন। তাঁদের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, ইলেক্ট্রো ফেরোগ্রাম হল ইলেক্ট্রো ফোরোসিস স্বয়ংক্রিয় সিকোয়েন্সিং দ্বারা একটি বিশ্লেষণ থেকে ফলাফলের একটি প্লট। ইলেক্ট্রো ফেরোগ্রাম ডেটার একটি ক্রম সরবরাহ করে তা একটি স্বয়ংক্রিয় ডিএনএ সিকোয়েন্সিং মেশিন দ্বারা উৎপাদন করা হয়। ইলেক্ট্রো ফেরোগ্রামগুলির ফলাফলগুলি বংশগত ডিএনএ পরীক্ষা বা পিতৃত্ব পরীক্ষার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। গুমনামি বাবার ডিএনএ রিপোর্ট প্রকাশ করলে, তা বিতর্ক আরও জটিল করবে, তাই কেন্দ্রীয় স্বারাষ্ট্রমন্ত্রক পিছু হটল।
এর আগে, চলতি বছরের মে মাসে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর দাদা শরৎচন্দ্র বসুর বড় ছেলে অশোকনাথ বসুর সন্তানরা সম্মিলিতভাবে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখে দাবি করেছিলেন ফৈজাবাদের গুমনামি বাবা বা ভগবানজিই নেতাজি। তা জানতে নিরপেক্ষ তদন্ত হোক।
শরৎচন্দ্র বসুর নাতনি জয়ন্তী বসু রক্ষিত, তপতী ঘোষ, নাতি আর্যকুমার বসু তাদের চিঠিতে লিখেছিলেন - নেতাজি অন্তর্ধানের পর গুমনামি বাবা মানুষের মনে সাড়া ফেলে দিয়েছিল। মানুষ বলতে শুরু করেছিলেন, গুমনামি বাবাই আসলে নেতাজি। কেন, তা খতিয়ে দেখা হল না। তিনি কে, কোথ থেকে এসেছেন, মানুষ যা বলছে, তা সত্যি কি না। মানুষ যে দাবি করেছিল, তা তো উড়িয়ে দেওয়া যায়নি। নেতাজি বিষয়ক গবেষক চন্দ্রচূড় ঘোষ, অনুজ ধর-রা যেমন প্রমাণ সংগ্রহের চেষ্টা চালিয়েছেন, তেমনই বিচারপতি মনোজ মুখোপাধ্যায়ও গুমনামি বাবা নেতাজি হতে পারেন বলে মত প্রকাশ করেছিলেন। তারপরও সরকার তা আমল দেয়নি। তাই প্রধানমন্ত্রী মোদীর কাছে আর্জি বিষয়টি নিরপেক্ষ তদন্ত করে দেখতে।
বসু পরিবারের তরফে দাবি করা হয়েছে, ১৯৪৫ সালের অগাষ্টে তাইহোকু বিমান দুর্ঘটনার তত্ত্বও মানুষ মানেন না। নেতাজি পরিবারের তৎকালীন সদস্যরাও তা উড়িয়ে দিয়েছিলেন। সেই হিসেবেই নেতাজির চিতাভস্ম হিসেবে যা রাখা ছিল রেনকোজি মন্দিরে, তা দেশে আনার কোনও পদক্ষেপ না করাই উচিত বলে তাঁরা মনে করেন। তা দেশে আনার আগে ল্যাবে তা পরীক্ষা করা উচিত। নিরপেক্ষতা বজায় রেখে তা করা দরকার বলে বসুর পরিবারের সদস্যরা দাবি করেন। কেননা জাপানি ল্যাবরেটরিতে ডিএনএ টেস্টের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা।