বাবাজী মহারাজ ‘গীতা-চিরন্তনে’ র একটি শ্লোকের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে লিখছেন –“বেশিরভাগ মানুষ সাংসারিক বিষয়সুখ যাতে আরো বাড়ে, তার জন্য ঈশ্বরচিন্তা করে অর্থাৎ মোহ যাতে আরো বাড়ে, তার জন্য। এই ভয়ঙ্কর অবস্থাই গীতার বীজ। যদি সাংসারিক সুখ না বাড়ে,সাংসারিক দুঃখ না কমে, তবে আমরা বলি ভগবানকে ডাকার দরকার কি?”
প্রবচনে বসে বাবাজী বলছেন, “যতক্ষণ আমার সামনে বসে আছে । আমার দিকে তাকিয়ে থাকবে, যেই বেরিয়ে যাবে সব ভুলে যাবে । আমার গুরুদেবের সাবধান বাণী শোনেনি । আমিও শুধু বলে যাচ্ছি”
সংসার আছে, থাকবে। সংসার আমাদের আনন্দ দেবে, কষ্ট দেবে। সংসার যা দেবে না, তা হল – কষ্ট থেকে মুক্তির উপায়। সেটা দিতে পারেন একমাত্র ভগবান ও সদগুরু।
বাবাজী বলতেন –“হাজার সাধু শিষ্য পাওয়া যতটা সহজ, একজন সত্যিকারের গৃহী-শিষ্য পাওয়া খুব কঠিন।“
বাবাজী মহারাজ ‘একটি করুণ ইতিহাস’ প্রবন্ধে লিখছেন – গুরুদেবের কোমল হৃদয়ের সুযোগ নিয়ে তাকে দিয়ে নিজেদের স্বার্থে কিছু বলিয়ে বা লিখিয়ে নেওয়া উচিত নয়। কারণ, গুরু যখন ব্যক্তিসত্বায় থাকেন, তিনি ভুল করতে পারেন। আর শিষ্যদের দ্বারা গুরুদেব চালিত হলে তার গৃহিত সিদ্ধান্ত ভুল হতে পারে। এই রকম সিদ্ধান্ত নিলে গুরুদেবও দ্বিধাযুক্ত হয়ে পড়েন।“
বাবাজী লিখছেন –প্রত্যেক সৎ শিষ্যের উচিত গুরুদেব যাতে তার আদর্শে প্রতিষ্ঠিত থাকতে পারেন, তাতে সাহায্য করা।“
বাবাজী মহারাজ ‘অর্ঘ্য’ পত্রিকার আশীর্বাণীতে লিখেছিলেন – “জীবনে আদর্শ নির্বাচনটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। এই নির্বাচনের মধ্য দিয়েই ঠিক হইয়া যায় জীবটি কোন দিকে যাইবে। খুব বিচার করিয়া নিজের জীবনের আদর্শ ঠিক করিতে হইবে। আদর্শ নির্বাচিত হইয়া গেলে মধ্যপথে তাহা পরিত্যাগ করিতে নাই। শত সহস্র ঝঞ্ঝা বাধা অতিক্রম করিয়া নিজের আদর্শের পথে অটুট থাকিতে হয়।“
বাবাজী মহারাজও ক্ষমাতে বিশ্বাসী ছিলেন। আর বিশ্বাস করতেন কর্মে। কর্ম আর ধর্মের মাঝে বিজ্ঞানকে তিনি যুক্ত করেছিলেন। কারণ, বিজ্ঞানমনস্কতা মানুষের অন্তরকে স্বচ্ছ করে।
তিনি একবার বলেছিলেন, “মানুষের উপর দেবতার ভর হওয়া, এই ব্যাপারটা আমি বিশ্বাস করিনা। এগুলোর পিছনে উদ্দেশ্য থাকে, অনেক সময়, মৃগি রোগের শিকার হওয়া কোন রমনীকে বিশেষ উদ্দেশ্যে ভর হয়েছে বলে প্রচার করে, সাধারণ মানুষের বিশ্বাসকে কাজে লাগিয়ে অনেক অসাধু কাজ করা হয়।“
বিশ্বাসভঙ্গ পাপ বলে তিনি মনে করতেন।