Hot Widget

Type Here to Get Search Results !

Advt 720

বাবাজী মহারাজের জীবনের শেষ দিনগুলিই তার সবচেয়ে বড়ো বাণী, সবচেয়ে বড়ো প্রবচন

আপনাদের কাছে বাবার কথা বলার জন্য আবার ফিরে এলাম। কারণ, বাবার কথা কখনও শেষ হয় না।

পনাদের এর আগেও বলেছি, বেশ কিছু বিষয় নিয়ে বাবাজীর আক্ষেপ ছিল। সর্বসমক্ষে মাঝে মাঝে সে কথা বলে ফেললেও, বেশিরভাগ সময় নিজের মধ্যেই সে কথা রেখে দিতেন। যখন একান্ত পারতেন না, তখন বলে ফেলতেন। সব সাধু যে এক নয়, সকলের উদ্দেশ্য যে এক নয়, সেই কথাটা বাবাজী মহারাজ হাজার চেষ্টা করেও বুঝিয়ে উঠতে পারেন নি।
 আমাদের এই সমাজে যেমন অনেক ‘সাধু’ রূপী চোর বা ডাকাত আছে, যারা দেখবেন পুলিশের জালে মাঝে মাঝেই ভারতের নানাপ্রান্ত থেকে ধরা পড়ে, জেলে যায়, তেমনই সত্যিকারের সাধু-সন্ন্যাসীও রয়েছেন। দুঃখের বিষয় অসৎ‘সাধু’ দের জন্যই দূর্নাম হয় সৎ সন্ন্যাসীদের। আর এক শ্রেণির সাধু আছেন, যাদের মূল উদ্দেশ্য হলো শিষ্য সংখ্যা বাড়ানো। যে কোনভাবে ধনী শিষ্যের সংখ্যা এরা বাড়িয়ে চলেন। ঘুরে বেড়ান ধনী শিষ্যদের বাড়ি বাড়ি। সেখানে গিয়ে আবার শিষ্য তৈরি করেন। 
উদ্দেশ্য, মানুষের মঙ্গল সাধন বা তাদের সঠিক আধ্যাত্মিক পথ দেখানো নয়, শিষ্যদের অর্থে নিজের জীবন চালানো। অনেকটা ব্যবসার মতো। বাবাজী মহারাজ বা জানকীদাসজী মহারাজ এই সমস্ত ‘গুরু’দের কাছ থেকে দূরে থাকার উপদেশ দিতেন। 
কারণ, গুরু যদি নিজেই বিষয়ে আসক্ত হন, প্রয়োজনের অতিরিক্ত অর্থ সংগ্রহ করেন, বিলাসী জীবন যাপন করেন, তার যদি শিষ্যদের দেওয়ার মতো আধ্যাত্মিক জ্ঞান কিছু না থাকে, শুধু নেওয়ার থাকে, তিনি গুরু হওয়ার উপযুক্ত মোটেই নন। এদের কাছে দীক্ষা নিয়ে, কাজের কাজ কিছু হয় না। যারা কাঠিয়বাবাদের জীবন কথা পড়েছেন, তারা এটা সকলেই জানেন। 
শিষ্যদের সঠিক পথ দেখাতে পারেন একমাত্র সদগুরুরা। কিন্তু, সদগুরু চেনা খুব কঠিন। সদগুরুদের মধ্যে অনেক লক্ষণ থাকে। এই লক্ষণ যাচাই না করে শুধু জটা-দাড়ি দেখে বড়ো সাধক ভেবে পায়ে গিয়ে পড়লে শেষপর্যন্ত ঠকে যেতে হয়।
আর একটা বিষয়, শুধুমাত্র অর্থ উপার্জনের জন্য গুরুদেবের নামে প্রতিষ্ঠান তৈরি করাটা গুরুভক্তির লক্ষণ নয়, এতে গুরুদেবকেই অর্থলোভী মনে করতে পারেন প্রকৃত ভক্তরা। গুরুদেবের নামাঙ্কিত প্রতিষ্ঠানকে দাতব্য হতে হবে। সেখানে মানুষ যেন বিনা পয়সায় সুবিধা পায়, বা বাজার চলতি অর্থের বদলে অনেক কম অর্থে পরিষেবা পায়। 
আমাকে বাবাজী মহারাজের এক ভক্ত-শিষ্য বলেছিলেন, ‘ইচ্ছা আছে বাবার নামে একটা হাসপাতাল করি।‘ 
বলেছিলাম, ‘আপনার ইচ্ছাটা অতি মূল্যবান। কিন্তু, দেখবেন, হাসপাতালের নামে নার্সিং হোম খুলে বা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল বানিয়ে রোগীদের সর্বস্বান্ত করার ব্যবস্থা করবেন না। কারণ, বাবার নামাঙ্কিত হাসপাতালের সঙ্গে যদি অন্য হাসপাতাল বা নার্সিং হোমের কোন পার্থক্য না থাকে, অর্থ গুনে পরিষেবা পেতে হয়, তাহলে কোথায় যেন সবাই বুঝে ফেলেন, ওনার গুরুদেব বোধহয় এটাই চেয়েছিলেন।
এই প্রসঙ্গে আমার গ্রন্থ রচনা সম্পর্কে বলি। আমি বাবার নানা সময়ের নানা কথা নিয়ে যে গ্রন্থ রচনা করছি, সেগুলির জন্য পাঠকদের কাছ থেকে প্রকাশকের খরচ বাদ দিয়ে বই পিছু মাত্র ৫৯ টাকা আমি রয়ালটি বাবদ পাই। এই অর্থ জমা রেখে আমার ইচ্ছে বাবাজীর একটা প্রবচন কেন্দ্র তৈরি করা, যেখান থেকে আমাদের টেলিভিশন মিডিয়ার সাহায্যে বাবার বাণী বিশ্বময় ছড়িয়ে দেওয়া। 
এই কাজের জন্য, আমি কারো কাছ থেকে কোন দান, অর্থ সংগ্রহ করি না। নিজের সঠিক পথের উপার্জন থেকে তা করার চেষ্টা করছি। পাঠকরা যদি মনে করেন, তারা কিনতে পারেন। না ইচ্ছা হলে, তারা কিনবেন না।

নীচের বইএর ছবিতে ক্লিক করে সরাসরি প্রকাশকের কাছ থেকে বইটি সংগ্রহ করতে পারেন। 
 
গুরুদের নামে দোকান-ব্যবসা খুলে অনেকেই এসব করেন। এটা গুরুভক্তি না গুরুদেবের নামটাকে ‘ইউনিক সেলিং প্রাইস’ বা USP হিসাবে ব্যবহার করা হয়, সেটা বুদ্ধিমান ব্যক্তিরা সহজেই বুঝে যান। অবশ্য শিষ্য যেমন, তার গুরুদক্ষিণা তেমনই হয়। সবাই একলব্য হতে পারেন না, সবাই স্বামীজী হন না। সবাই আমাদের বাবাজী মহারাজ হতে পারেন না।
 কারণ মহাপুরুষরা শতাব্দীতে একজন কি দু জন আসেন। যদি শ’য়ে শ’য়ে জন্মাতেন তাহলে মুড়ি-মুড়কির এক দর হয়ে যেত। অবশ্য, যেত কেন বলছি, হয়ে যাচ্ছিল। আর সেখানেই ছিল বাবার আপত্তি, পরোক্ষ একট সূক্ষ অভিযোগ। অনেকেই বাবাকে সাধারণ একজন সন্ন্যাসী ভেবে নিয়েছিলেন, তাই অন্য সন্ন্যাসীদের মতোই বাবাকে দেখতে শুরু করেছিলেন। 
অন্নপ্রাশন, উপনয়ন দেওয়ার জন্য বাবার কাছে আবদার আসতো ভক্তদের। বাবা হয়তো শিষ্যদের দুঃখ দিতে পারতেন না বলে, সেই ব্যাপারে খুব একটা ‘না’ বলেন নি, কিন্তু, একবার বিরক্তির সঙ্গে আশ্রমেই বলে ফেলেছিলেন – ‘তোরা আমাকে কী মনে করেছিস, তোদের জ্বালায় আমাকে এখান থেকে চলে যেতে হবে দেখছি। 
এই ‘জ্বালা’ শব্দটা অন্যকে অসম্মান করার জন্য ব্যবহার করেন নি, করেছিলেন, নিজের অবস্থানটা কোথায় পৌঁছে যাচ্ছে সেটা বোঝানোর জন্য।‘ 
তাই অনেক কষ্ট নিয়েই তিনি বলেছিলেন – ‘আমি কেন এসেছি, এই কথাটাই কেউ আমার কাছে জানতে চাইলো না।‘
এটা যে কতবড়ো কথা, তা খুব সহজে বোঝা যায় না। কারণ, বাবাজী এই ধরণীতে শিষ্য বাড়ানো বা আশ্রম বাড়ানোর জন্য আসেন নি। এসেছিলেন মানব কল্যাণের জন্য। কী সেই মহান উদ্দেশ্য, আমি চেষ্টা করবো আপনাদের সামনে তুলে আনার।
 বাবার খুব কাছের কিছু মানুষজনের কাছে বলে যাওয়া সেই উদ্দেশ্য শুনলে আপনারা বুঝতে পারবেন, অন্যদের চেয়ে বাবাজী মহারাজ কেন আলাদা ছিলেন। তিনি কেন সমাজবিজ্ঞান সম্পর্কে এতোটা উৎসাহী ছিলেন। তার গবেষণার মূল উদ্দেশ্য কী ছিল। বিদ্যালয়-লাইব্রেরী স্থাপনের পিছনে তার কী উদ্দেশ্য ছিল। কেন তিনি জাত-পাতের ব্যাপারে নতুন ব্যাখ্যার প্রবর্তন করেছিলেন। কেন চেয়েছিলেন বিজ্ঞানমনষ্ক ধর্মের প্রবর্তন। যাই হোক, এই প্রসঙ্গে যাওয়ার আগে বাবার লেখা জানকীদাসজীর জীবন-চরিত থেকে একটু অংশ আপনাদের বলি – ‘গুরু যে কি জিনিস তা বুঝতেই অনেকের জন্ম কেটে যায়। খাঁচার মধ্যে টিয়াপাখিকে শেখালে সে ‘রাধেশ্যাম-রাধেশ্যাম’ বলে, কিন্তু বেড়ালে ধরলে তার আসল বুলি ট্যাঁ ট্যাঁ বের হতে থাকে।। সেরকম বিপদ-আপদের সময় নিজের অপ্রিয় কিছু ঘটলে বা আমার পছন্দমাফিক কথা গুরুদেব না বললে গুরুভক্তি ছুটে যায়। শ্রীগুরুদেবকে স্বয়ং ভগবান জেনে তার চরণে নিজেকে সমর্পন করে দিতে পারলে তবেই শ্রীগুরুদেব তার ভার নেন।“

Post a Comment

1 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.
Anonymous said…
রাধে রাধে. বই টা ছি চাছিললম্

Top Post Ad

Below Post Ad

Hollywood Movies