১৯৮৫ সালে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রথম শ্রেণিতে স্বর্ণপদকসহ প্রথম হয়ে শেষ করলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা।
এরপর কী? তার গুরুদেব শ্রীজানকীদাসজী তাকে বলবেন গবেষণা করার কথা। কারণ, শ্রীজানকীদাসজী বুঝে গিয়েছিলেন, তার এই শিষ্য সাধারণ শিষ্য নন, তার মধ্যে লুকিয়ে আছে, এক ধর্ম ও সমাজ-সংষ্কারী মন।
তাই, শিষ্যকে একান্তে বলেছিলেন – ‘তুই গবেষণা শুরু কর বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।‘
বাবাজী মহারাজ গুরুজীর কাছে জানতে চেয়েছিলেন, গবেষণার বিষয় কী হবে। শ্রীগুরু তখন তার প্রিয় এই শিষ্যকে বললেন এমন একটা বিষয়, যা শুনে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তখন হতভম্ব। অনুমতি কিছুতেই মেলে না।
জ্ঞানতপস্বী সাধক স্বামী জানকীদাসজী মহারাজের শিষ্য প্রজ্ঞাদাস কাঠিয়া যখন সমাজতত্বের এক দূরূহ বিষয় নিয়ে গবেষণায় পরিকল্পনা করেন তখন পশ্চিমবঙ্গে বামপন্থী শাসন চলছে।
বামপন্থীরা ঈশ্বরের অস্তিত্বে বিশ্বাস করেন না। জ্যোতি বসু তখন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী। তার দাপটে তখন রাজ্যে বাঘে গরুতে জল খাচ্ছে।
এইরকম অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বাবাজীর পেশ করা গবেষণার বিষয় নিয়ে মত দিতে পারছে না। কারণ, তারা বুঝতে পারছে না, সরকার যদি, কোন কারণে রুষ্ট হন। বাবাজীও ছাড়বার পাত্র নন। তিনি হাল ছাড়লেন না।
বারবার একই বিষয় নিয়ে আবেদন-নিবেদন করতে লাগলেন। কিন্তু, অনুমতি আর পাওয়া যায় না। বাবাজী মহারাজের বিষয় নির্বাচনকে কিছুতেই গুরুত্ব দিতে নারাজ বিশ্ববিদ্যালয়। বাবাজীকে বারবার হয়রানি করা হচ্ছে। বাবাজী আবার গুরুজীর কাছে দাঁড়ালেন।
শ্রীগুরুর সাফ জবাব, - ওই বিষয়টাই হবে প্রজ্ঞাদাসজীর একমাত্র বিষয়। দাদাজী মহারাজ তার শিষ্যের গবেষণার বিষয় ঠিক করে দিয়েছিলেন – ‘বেদান্তের আলোকে মার্ক্সবাদ।‘
বাবাজী যখন আবার বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে তার গবেষণার বিষয় জানালেন এবং তার গুরুদেবের ইচ্ছার কথা জানালেন, কর্তৃপক্ষ সাফ জানিয়ে দিলেন –‘তোমার গুরুজী দেখছি বাঘে-বলদে এক ঘাটে জল খাওয়াতে চাইছেন।‘
বাবাজী ফিরে এসে আবার শ্রীজানকীদাসজীকে জানালেন সেকথা। আর সেই কথা শোনামাত্রই হুঙ্কার দিয়ে উঠলেন শ্রীজানকীদাসজী।
শিষ্যকে বললেন –‘তুমি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে জানাও, তুমি গুরু নির্দেশিত বিষয় ছাড়া অন্য বিষয় নির্বাচন করতে পারবে না। বাবাজী মহারাজ সেই কথাই গিয়ে জানালেন বিশ্ববিদ্যালয়ে। কারণ, তার শ্রীগুরু বাঘে বলদে এক ঘাটে জল না খাইয়ে ছাড়বেন না।
অবশেষে বহু টালবাহানার পর মিলল অনুমতি। ‘বেদান্তের আলোকে মার্ক্সবাদ’ নিয়ে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গবেষণাপত্র রচনায় মন দিলেন সমাজবিজ্ঞানের ছাত্র প্রজ্ঞাদাস কাঠিয়া। ডঃ অমরনাথ ভট্টাচার্যের তত্বাবধানে শুরু হল গবেষণার কাজ।
একদিকে, মার্কসবাদ ও অন্যদিকে নিম্বার্কবাদ- দুটি ভিন্নমুখী ও ভিন্ন-চিন্তাধারাকে তিনি নিয়ে এলেন এক মঞ্চে।
শীঘ্রই প্রকাশিত হবে গ্রন্থাকারে
এটা এক ভয়ঙ্কর চ্যালেঞ্জ ছিল ওই ছাত্র জীবনে। কেননা, তিনি ছাত্র-জীবন থেকেই ভেবে নিয়েছিলেন, তার পথ হবে সমাজের মঙ্গল সাধনের পথ।
কিন্তু, কেন বাবাজী এই দুটি বিষয়কে বেছে নিয়েছিলেন? যোগসূত্র খোঁজার চেষ্টা করেছিলেন। তার কারণ, তার আধুনিক সমাজ-চেতনা। তিনি বুঝেছিলেন, ধর্মের সঠিক ব্যাখ্যা পেতে হলে, সাম্যবাদ প্রয়োজন।
আবার ধর্মকে বাদ দিয়ে সাম্যবাদ আনার চেষ্টা করলে, তার ফল ভালো হয় না। অন্তরে সন্ন্যাসী এই ছাত্রের তপস্যা ছিল মানুষের জন্য তথা এই মানব-সমাজের জন্য এমন কিছু করা, যা সার্বিক মঙ্গল করবে সমগ্র সমাজ-ব্যবস্থার। বদলে যাবে, ভারতীয় সমাজের প্রচলিত ফর্মূলা। আর এইখানেই তার সঙ্গে অন্যদের পার্থক্য। ১৯৯১ সালে, সমাজবিজ্ঞানের এই ছাত্র লাভ করলেন ডক্টরেট। তার এমএ ডিগ্রির সঙ্গে যুক্ত হল- পিএইচডি –ড.প্রজ্ঞাদাস কাঠিয়া।
এখন দেখা যাক, এই বিষয়টা নিয়ে কেন এত আগ্রহ ছিল শ্রীজানকীদাসজীর।
শ্রীজানকীদাসজী বলছেন –“ছাত্রজীবন থেকেই কার্ল মার্কস ও তাঁর নীতির প্রতি আমার মনোযোগ আকৃষ্ট হয়। অনেকে বিশ্বাস করেন যে মার্কসবাদী অর্থনৈতিক নীতিগুলি পৃথিবীতে স্বর্গ নিয়ে আসতে পারে এবং সমাজের সমস্ত মানুষের সম্পূর্ণ সন্তুষ্টির গ্যারান্টি দিতে পারে।
আমি মনে করি, মার্কসবাদের ভিত্তি প্রস্তর হল দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদ। যা জগতকে কঠিন বাস্তবতা হিসাবে গ্রহণ করে এবং এর বাইরে কিছুই নয়। মার্কসবাদ ঈশ্বর, আত্মা বা সার্বজনীন ধর্মের জন্য কোনও বিশেষ জায়গা তৈরি করেছে কিনা তা নিয়ে আমার অনেক সন্দেহ রয়েছে।
একজন ভারতীয় হিসাবে আমি সনাতন ধর্মের পথ অনুসরণ করে আমার জীবন যাপন করতে পছন্দ করি। বেদান্ত দর্শন অধ্যয়ন করার সময় আমি শঙ্করের চরম অদ্বৈতবাদের সংস্পর্শে এসেছিলাম যা জগতের বাস্তবতাকে অস্বীকার করে এবং ব্রম্ভাকেই একমাত্র বাস্তব হিসাবে স্বীকার করে। যেহেতু চরম অদ্বৈতবাদের মতবাদ আমাকে পুরোপুরি সন্তুষ্ট করতে পারেনি, তাই আমি সত্যের সন্ধানে বেদান্ত দর্শনের অন্যান্য বিষয় অধ্যয়ন করতে নিজেকে নিয়োজিত করেছিলাম এবং শ্রী স্বামী নিম্বারকাচার্য মহারাজের দ্বৈতাদ্বৈত বা দ্বৈতবাদী অ-দ্বৈতবাদের মতবাদের সংস্পর্শে এসেছিলাম।
এই বইটি কেনার জন্য ছবিটিতে ক্লিক করুন।
ভগবান নিম্বার্কের দেওয়া শাস্ত্রীয় গ্রন্থগুলির বিস্ময়কর যুক্তি এবং অনন্য ব্যাখ্যায় আমি খুব সন্তুষ্ট হয়েছি। এই তত্ত্ব অনুসারে ব্রহ্ম যেমন সত্য, তেমনই জগতও সত্য। এই শিক্ষা আমাকে বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য এবং ঐক্যের মধ্যে বৈচিত্র্যকে উপলব্ধি করতে সাহায্য করেছে।“
সঠিক শিক্ষার অভাব একটা জাতিকে পিছনে ফেলে দিতে পারে। সমাজে শিক্ষিত, কুসংষ্কারমুক্ত মানুষের সংখ্যা যত বাড়বে, সমাজ হয়ে উঠবে শক্তিশালী। এই সমাজের স্বপ্ন বাবাজী দেখতেন বলেই হাত দিয়েছিলেন এমন একটা গবেষণায়, যে গবেষণার ফসল, ভবিষ্যত সমাজের একটা মডেল। বাবাজী বলছেন – “The transformation of human society through dialectical materialism and class struggle is nothing but transformation of Real man-ship to a True man-ship.” তিনি তাই বলছেন –“Human being is an organ of human society.”
তিনি বলছেন –“ মার্ক্স বলেছেন – কম্ম্যুনিস্ট শাসনে ‘State will be withered away.’ মার্ক্সের সাম্যবাদের চিন্তা ভারতে নতুন কিছু নয়। আর ঈশ্বরকে বাদ দিয়ে, ধর্মকে বাদ দিয়ে সাম্যবাদ আনার চেষ্টা ভয়ঙ্কর পরিণতির মুখোমুখী হতে পারে।
ড. স্বামী প্রজ্ঞাদাস কাঠিয়া, এম.এ. পি. এইচ.ডি. তিনি যদি শুধুমাত্র সন্ন্যাসী হতেন বা শুধু ধর্মের গন্ডীর মধ্যেই নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখতে চাইতেন, তাহলে রাতের পর রাত জেগে গবেষণা চালিয়ে যেতেন না। তার সঙ্গে অন্য সন্ন্যাসীর পার্থক্য – তিনি শুধু একজন সাধু, দার্শনিক বা সমাজ-সংষ্কারক নন, তিনি এক নতুন মতবাদের প্রবক্তা।
বাবাজী মহারাজ তার “নিম্বার্ক দর্শনে শিক্ষা’ প্রবন্ধে লিখছেন – “ ভগবানকে বাদ দিয়ে কেবল ইন্দ্রিয়ভোগের মাধ্যমে শান্তি পাওয়া যায় না। জগতকে তাচ্ছিল্য করায় আমরা নিঃস্ব হয়েছিলাম। এখন ধর্মকে বাদ দিয়ে আমরা উচ্ছৃঙ্খল হলাম।
ব্রম্ভ মিথ্যা, জগত সত্য ভাবলে অর্থাৎ ভগবান নাই, জগৎটাই সব – এই ভাবনা দীর্ঘদিন ভারতের মাটিতে কাজ করেছে।
শ্রীনিম্বার্কাচার্য্য শঙ্করাচার্য্যের বহু আগেই বলে গেছেন ‘ ব্রম্ভ সত্য, জগৎও সত্য। জগতকেও বাদ দেওয়া যাবে না, আবার ভগবানকেও বাদ দেওয়া যাবে না। পরাবিদ্যার জন্য অপরাবিদ্যার দরকার, কিন্তু মনে রাখতে হবে শ্রীভগবানকে লাভ করার জন্য জাগতিক বিদ্যার দরকার।“
বাবাজী মহারাজ লিখছেন, “আজ হয়েছে উলটো। বৈষয়িক উন্নতির জন্যই আজ আমরা ভগবানকে ডাকি। আসলে জীবনের মূল লক্ষ্য ঈশ্বরলাভ। সেই ঈশ্বরকে পেতে হলে আহার, বস্ত্র এবং বাসস্থানের দরকার।“
বাবাজী বলছেন – “সাম্যের জাগরণ কীভাবে সম্ভব হয়েছিল, এই প্রশ্নের উত্তর নিহিত রয়েছে প্রাচীন সমাজ-ব্যবস্থা ও জীবনচর্যার মধ্যে। পরিশীলিত শৃংখলতা মানুষকে আত্মবোধে বা সাম্যবোধে প্রতিষ্ঠিত করেছিল। তাই সাম্যবাদ কোন মুখস্থ বুলি ছিল না, ছিল অন্তরের আন্তরিকতা।“
তিনি বলতেন, ‘সাম্যের জাগরণ না ঘটলে সবই নিছক কথাতে পরিণত হয়।
কেন এ কথা তিনি বলেছেন? আমরা ফিরে যাই সূদূর অতীতে। শ্রীমদ্ভগবতগীতায় বলা হয়েছে –
“যাবত ভ্রিয়েত জঠরম তাবত স্বত্বং হি দেহিন…
অধিকং যোহভিমন্যেত স স্তেনো দণ্ডমর্হতি।।“ (৭/১৪/৮)
এর বাংলা অর্থ হল – যতটুকুতে একজনের গ্রাসাছাদন চলে, সমাজ থেকে সেটুকুতেই তার অধিকার, যদি সে অতিরিক্ত সে নেয়, তাকে শাস্তি পেতে হয়।
বাবাজী বলছেন –পুঁজিবাদকে এ ভাবেই প্রাচীনকালে নস্যাত করা হয়েছে। আর তার বাস্ত রূপায়নের জন্য অনুসাসনও ছিল।
বাবাজী রন্তিদেবের উপাখ্যান তুলে বলেছেন – “রাজা বলেছেন –‘আমি ব্যক্তি সুখ চাই না, মুক্তি চাই না, সমস্ত দুঃখী মানুষের দুঃখ আমার কাছে আসুক, তারা সুখী হোক, এটাই আমি চাই।‘ – সাম্যবোধের কী অপরূপ সমাপ্তি।“
তিনি বলেছেন –‘সম’ শব্দটির সাধারণ অর্থ সমান ভাব। শ্রীগীতায় বলা হয়েছে –
“বিদ্যাবিনয়সম্পন্নে ব্রাম্ভণে গবি হস্তিনি।
শুনি চৈব শ্বপাকে চ পন্ডিতাঃ সমদর্শিনঃ।।“
এর বাংলা অর্থ হল – জ্ঞানী মানুষরা - বিদ্যা ও বিনয়ী ব্রাম্ভণ, গোরু, হাতি, কুকুর এবং চণ্ডালকে সমান দৃষ্টিতে দেখে থাকেন।
বৈদেশিক সাম্যবাদের শুধু মানুষ নিয়ে চিন্তাভাবনার চেয়ে তাই গীতা অনেক এগিয়ে। বাবাজী বলতেন, ‘সাম্য নিজেই সাধনা, নিজেই সিদ্ধি।‘ ধর্মের স্বরূপ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলা হয়েছে – ধর্মের সার হল, যা নিজের কাছে খারাপ, দুঃখকর বা প্রতিকূল, সেই আচরণ অন্যের সঙ্গে করবে না।
তিনি তার গবেষণাপত্রে লিখছেন - আধ্যাত্মিক সমাজতন্ত্রের সূত্রটি চরম অদ্বৈতবাদের মতবাদ থেকে পাওয়া যেতে পারে। বৈচিত্র্যকে বিবেচনায় না রেখে ঐক্য শব্দটির কোন অর্থ বহন করে না। একটি আদর্শ সমাজে গোঁড়া সমাজতত্ববিদ ঐক্যকে তার প্রকৃতি এবং তার ভিন্নতার দ্বারা স্বীকৃতি দেয়। কাজেই, একজন বিশিষ্ট সমাজতান্ত্রিক চিন্তাবিদ মহান নিম্বার্ক তুলে ধরেছিলেন, প্রাকৃতিক পার্থক্য-অপার্থক্যের মতবাদটি।
নিম্বার্ক যেভাবে ব্যাখ্যা করেছেন, এই মত কোনও ব্যক্তির ব্যক্তিত্বকে ধ্বংস করে না। বরং এটি অন্য সকলের সঙ্গে মিলনের কথা বলে।
ভারতীয় ঐতিহ্য গৃহ জীবন ত্যাগ করার পরামর্শ দেয় না, বরং এটি সমাজের অন্যান্য সদস্যদের কাছে নিজের নিজেকে উপলব্ধি করার পরামর্শ দেয়।
মার্ক্স বলছেন, The abolition of religion as an illusory happiness is the pre-requisite for the attainment of true happiness.
বাবাজী প্রশ্ন তুলছেন –মার্ক্স ‘True happiness’ বলতে ঠিক কী বলতে চেয়েছেন। ‘happiness’ সম্পর্কেই বা তারা কী বলছেন। বাবাজী এই প্রসঙ্গে তার লেখায়, তার প্রতিটি বক্তব্যে, সভায় এবং সাংবাদিকের সঙ্গে সাক্ষাতকারে বারবার বলেছেন –“ধর্মের বাহানা দিয়েই বলুন বা নাস্তিকতার বাহানা দিয়েই বলুন- আপনারা সমাজটাকে কোথায় নিয়ে যেতে চাইছেন – এটা জানার অধিকার আমার আছে।“
এই প্রশ্নটা শুধু পশ্চিমী দুনিয়া নিয়ে নয় প্রাচ্যের বিষয় নিয়েও করেছিলেন। বাবাজী মার্ক্স ও নিম্বার্ক-তত্বের আলোকে সমাজের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বলছেন- “As one cannot deny the economic needs, so one cannot refuse to accept the necessity of the removal of inhuman qualities. Marx thinks of externalinsecurity and suggests remedies for putting an end to it. Nimbarka takes of internal insecurity and advocates principles that are in a position to combat this insecurity. All this leads a curious reader to jointly apply the methods projected by Marx and Nimbarka.”
ধর্ম প্রসঙ্গে মার্ক্সিবাদের একটি দিক নিয়ে বাবাজী বলছেন –“Marxism rejects religion altogether, because it is likely to foster dependence on gods and put an end to individual freedom so necessary for generation of wealth as also to accept inequality due to birth and economic status as something sacrosanct in nature. This, unfortunately ensues from a wrong notion of religion.”
আবার নিম্বার্কবাদ নিয়ে তিনি বলছেন- “Religion, as Nimbarka conceives, is a process by which man can maintain himself and his relation with others, and at the same time can manifest his latent possibilities to the fullest extent. In this sense, religion and philosophy are identical and possibly both lead the man to fulfilment in the way education leads to it”
বাবাজীর মতে –“Philosophy of Marx and that of Nimbarka both ultimately enter the arena of humanism while Marxism is radical humanism, Nimabarka’s humanism is spiritual humanism having a realistic tone.”
সমাজের প্রতিটি সদস্য যদি সমাজের সেবার মনোভাব নিয়ে তার দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করে এবং সকল সদস্যের মধ্যে অপরিহার্য সমতা উপলব্ধি করে তবে আধ্যাত্মিক সমাজতন্ত্র জগতের আলো দেখতে পারে।
দুধে জল মেশানো হলে, জল যতক্ষণ না দুধের সাদা রঙকে আত্মস্মাৎ করতে পারছে, দুধ ততক্ষণই সাদা থাকে। দুধ হিসাবে সে যতই নিজেকে প্রচার করুক না কেন, দুধের গুণগত মানে সে কিন্তু নিকৃষ্ট।
অসাধারণ এই কথাগুলো। এর অর্থ ভিন্ন ভিন্ন মানুষের কাছে ভিন ভিন্ন রূপে ধরা দেবে। সোজা কথায় চটক দেখে ভুললে হবে না, গুণ বিচার করতে হাবে। সত্যিই দুধ পান করছি, না কি ‘জল মেশানো দুধ’ বা ‘দুধ মেশানো জল’ পান করছি দেখতে হাবে। রঙ দেখে ভুল করলেই বিপদ।
অনেকে হয়ত বলতে পারেন, আগে রূপ বিচার করা উচিত, পরে গুণ। তাদের সবিনয়ে বলি, আমরা যেখানে গুণের কারণে যাব, সেখানে ‘গুণ’ বিচার করব, আর যেখানে রূপের টানে যাব, সেখানে রূপ বিচার করব।
এই প্রসঙ্গে আর একটা কথা চালু আছে। কথাটা হলো – বিদ্যাসাগরের মতো চটী জোড়া পায়ে দিলেই কেউ বিদ্যাসাগর হয়ে যায় না। তার মতো বিদ্যার সাধনা প্রয়োজন, অধ্যন প্রয়োজন।
এই কথা বলার একটা কারণ, আমরা যেন সত্য আর মিথ্যার মধ্যে পার্থক্য করতে শিখি। ইংরাজীতেও একটা প্রবাদ আছে ‘All that glitters is not gold.’ অর্থাৎ চকচক করলেই সোনা হয় না। সোনার ধর্ম থাকা প্রয়োজন। আমাদের দাদাগুরুজী, বাবাজী মহারাজরা ছিলেন খনির সোনা। চকচক করার আগেই হোক বা পরেই হোক। এক নিখাদ সোনা তাই অনায়াসে চিনে নিতে পেরেছে আর এক নিখাদ সোনাকে।
গ্রাম বড়র। মেমারী থানার অন্তর্গত ছোট এক গ্রাম। তখন একেবারেই গণ্ডগ্রাম। তবে এই গ্রামের একটা বৈশিষ্ট ছিল। সেটা হলো সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি। গ্রামে হিন্দু-মুসলমান একসাথে নিশ্চিন্তে প্রতিবেশীর মতো বসবাস করত। তাদের মধ্যে কে হিন্দু, কে মুসলমান, নাম না বললে চেনাও যেত না।
বাবাজী মহারাজ লিখেছেন – ওই গ্রামে ‘মহামিলন সমিতি’ নামে একটি ক্লাব ছিল। এই ক্লাবের সদস্য ছিল এলাকার হিন্দু- মুসুলমান। তারা সকলে মিলে যাত্রাপালার আয়োজন করত। ফলে গ্রামের মুধ্যে ছিল একটা সুস্থ সাংষ্কৃতিক পরিবেশ।
সালটা ১৯৭৫, একেবারে শেষের দিকে।
এই গ্রামেই পরিচয় হয় গুরু-শিষ্যে। আর তারপরই ঠিক হয়ে যায়, শিষ্যের ভবিষ্যত জীবন কোন দিকে প্রবাহিত হবে, পাওয়া যায় তার একটা পূর্বাভাস।
দাদাগুরুজী মহারাজ তখন বৃন্দাবন আশ্রম ত্যাগ করে টাটানগরে এসে রয়েছেন। তিনি তখন ব্রজবিদেহী মহন্ত, আব্র চতুঃসম্প্রদায়েরও মহন্ত। কিন্তু, এই শিল্প শহরের কোলাহল তার ভালো লাগত না। কারণ তিনি ছিলেন নির্জনতার বাসিন্দা। নির্জন স্থান তাকে বারবার ডাক দিয়ে যেত। টাটানগরের যান্ত্রিক জীবনে তিনি বন্দীত্বের আস্বাদ পাচ্ছিলেন। ভাবছিলেন কোথায় যাওয়া যায়, যেখানে গেলে তিনি পাবেন নির্জনতার স্বাদ। আনন্দে মেতে উঠতে পারবেন সাধন-ভজনে।
এই শহরে শ্রীজানকীদাসজীর বেশ কিছু শিষ্য ছিল। তিনি তাদের বিষয়টা জানান। টাটায় তখন চাকরি করতেন নিরঞ্জন মজুমদার নামে এক ব্যক্তি। একসময়বাংলাদেশের সিলেট জিলার বাসিন্দা ছিলেন তিনি। আপনারাও জানেন শ্রীজানকীদাসজীর আদিনিবাস ছিল পূর্ববঙ্গে। নিরঞ্জনবাবু অসম্ভব ভালো ভাটিয়ালি গাইতেন। তার কন্ঠের যাদুতে যেন পদ্মা-মেঘনায় ঢেউ খেলা করতো। তার ভাটিয়ালি গানের উদাস সুরে দাদাগুরুজীও যেন হারিয়ে যেতেন শষ্য-শ্যামলা পদ্মা-মেঘনার দেশে।
মানস চোখে দেখতে পেতেন গ্রাম-বাংলার অসামান্য রূপ।
নিরঞ্জনবাবু বললেন, তাদের গ্রাম বেশ নির্জন। তিনি ইচ্ছা করলে তাদের গ্রাম ঘুরে আসতে পারেন। কথাগুলো বলে তিনি শ্রীজানকীদাসজীকে তাদের বড়র গ্রামের ঠিকানা দিয়েছিলেন। কিন্তু, শ্রীজানকীদাসজী যে সত্যি সত্যি একদিন তাদের গ্রামে গিয়ে হাজির হয়ে যাবেন, সেটা নিরিঞ্জনবাবু ভাবতেও পারেন নি। কিন্তু, নিরঞ্জনবাবুর আর্থিক ক্ষমতা সেরকম ভালো ছিল না।
যাইহোক, একদিন শ্রীজানকীদাসজী তার সঙ্গে জনা-দুএক লোক নিয়ে হাজির হয়ে গেলেন বড়র গ্রামে। নিরঞ্জনবাবু ভাবতেই পারেন নি, সত্যি সত্যিই শ্রী জানকীদাসজী তার বাড়িতে হাজির হয়ে যাবেন। তিনি তো দিশেহারা।
শেষপর্যন্ত তিনি শ্রীজানকীদাসজীকে নিয়ে হাজির হলেন বড়র গ্রামের এক বর্ধিষ্ণু ভট্টাচার্য পরিবারের সিদ্ধেশ্বর ভট্টাচার্যের বাড়ি। সিদ্ধেশ্বরবাবু দাদাগুরুজী মহারাজকে দুটি জমি দেখিয়েছিলেন আশ্রম করার জন্য। আপনারা দেখতেই পাচ্ছেন গুরু-শিষ্যে ছিল এক অসাধারণ মিল। আমাদের বাবাজী মহারাজ যখন নতুনগ্রামে আসেন, তার দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন ঘোষাল পরিবার।
যাইহোক, দাদাগুরুজীক তখনকার মতো বড় ছেড়ে ফিরে যান লিলুয়ায়, তার এক গুরুভাইয়ের কাছে। এর এক সপ্তাহের মধ্যেই বড়র গ্রামে আশ্রমের জমি রেজেস্ট্রি করে দিলেন সিদ্ধেশ্বরবাবু।
বড়র গ্রামে এসে দাদাগুরুজী তখন বিমলবাবুর দালানে অবস্থান করছিলেন। বাবাজী মহারাজ তখন স্কুলের ছাত্র। তার এই আগমন বার্তা তার হৃদয়ে এক তীব্র আলোড়ন তুলল। কিন্তু কেন? তবে কি সবটাই পূর্ব-নির্ধারিত ছিল? একদিন শ্রীজানকীদাসজী আসবেন, সেখানে প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় নামে এক কিশোরের দেখা হাবে, ভবিষ্যতে, তিনি হয়ে উঠবেন স্বামী প্রজ্ঞাদাস। তাকে তিনি বলে যাবেন, তার এই পৃথিবীতে আসার কারণ কী।
বাবাজী মহারাজ ওই নবাগত সাধুকে প্রশ্ন করেছিলেন – মানুষের জীবনের উদ্দেশ্য কী? মানব জীবনের সার্থকতাই বা কোথায়?
একটা বালক কী এই দূরূহ প্রশ্ন করতে পারে? সেদিন শ্রীজানকীদাসজী কই এই কথাটা ভেবেছিলেন? না কি তিনি আশা করেছিলেন, প্রদীপ তাকে এই প্রশ্নগুলোই করবে?
সব ঠিক ছিল। সব পূর্ব নির্ধারিত। ্সেদিন ঠিক হয়ে গিয়েছিল, এই ছোট্ট স্কুল-বালক সাধারণ নন, অসামান্য। আর সাধক প্রজ্ঞাদাসজী যে সত্যিই অসামান্য, তার আগমন যে বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে সেদিন তার প্রথম প্রকাশ ঘটেছিল।
.