বাবাজী মহারাজের দৃষ্টিতে ছিল জ্ঞানের গভীরতা আর নিঃষ্কাম কর্মের প্রতিফলন, তিনি শিখিয়েছেন কীভাবে নিঃষ্কাম কর্ম করতে হয়

 



তারক ঘোষ

 

আপনারা সকলেই জানেন, সমুদ্রের যত আষ্ফালন তটভূমতে,  ঢেউএর যত উন্মাদনা সবই বালিয়ারীতে। যতই গভীর সমুদ্রে যাবেন, ধীরে ধীরে সমুদ্রের শান্ত-সমাহিত রূপটাই দেখতে পাবেন। জ্ঞানও তাই। যতই গভীরতা বাড়িএ, ততই শান্ত রূপ ধারণ করেন জ্ঞানী ব্যক্তি। চঞ্চলতা থাকে না কথায় কিংবা চোখে। শান্ত দুটি চোখের দৃষ্টি তখন শুধু মানুষকে ছুয়ে চলে যায় পরমাত্মার পদতলে। আমাদের বাবাজী মহারাজ ছিলেন এইরকম দুই আশ্চর্য্য চোখের অধিকারী। যে চোখে জ্ঞানের গভীরতা আর নিঃষ্কাম কর্মের প্রতিফলন।

জ্ঞান কী? আর বিদ্যাই বা কী?

আমাদের বাবাজী মহারাজ বলছেন, বিদ্যা হলো Theoritical knowledge   আর জ্ঞান হলো  Practical knowkedge. ডক্তার, শিক্ষক, ইঞ্জিনিয়র বিদ্বান হতে পারেন, কিন্তু যদি ফলিত বিজ্ঞানী না হন, তবে কর্মজগতে উন্নতি করতে পারে না।



বাবাজী ছিলেন জ্ঞানের সাগর আর সেই সাগররের জ্ঞানকে প্রয়োগ করেছেন বাস্তব সমাজে, মানুষের মঙ্গল সাধনের জন্য। কারণ, জ্ঞানী যদি তার জ্ঞানকে কাজে না লাগিয়ে শুধুই অর্জন করে যান, তার ব্যবহার না করেন, তাহলে ব্যক্তিগতভাবে উপার্জিত জ্ঞান কারও কোন কাজে আসে না, ফলে সমাজ সেই জ্ঞান থেকে বঞ্চিত হয়। আর সেই ব্যক্তির মৃত্যুর পর তার অর্জিত জ্ঞানও বিলুপ্ত হয়। আর এখানেই একজন ডাক্তার আর ইঞ্জিনিয়রের সঙ্গে চিকিতসাবিজ্ঞানী আর পদার্থ-বিজ্ঞানীর পার্থক্য।

কথায় কথায় ‘জয় রাধে জয় রাধে’ বলা বাবাজী মহারাজও পছন্দ করতেন না, স্বামী শ্রীজানকীদাসজীর মতোই - SANGBAD VOICE 9 English News, Latest News, Stay Informed with Sangbad Voice 9: Your Trusted News

 বিজ্ঞানীরা তাদের জ্ঞগানকে সমাজ, দেশ ও বিশ্বের উন্নতির কাজে লাগান। সমগ্র জাতি তার সুফল ভোগ করে। তাই বিশেষ কৃতিত্বধারী  না হলে ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়রদের কেউ মনে রাখে না, বা রাখার দায়ও থাকে না। কিন্তু, যে বিজ্ঞানীরা দেশ ও দশের স্বার্থে কাজ করেছেন, তাদের নাম চিরষ্মরনীয় হয়ে থাকে।



সেইরকম বহু সাধু-সন্ন্যাসী আসেন, কিন্তু, দশের স্বার্থে, সমাজের মঙ্গলের স্বার্থে তারা কাজ করেন না, বা গ্রন্থ রচনা করে যান না বা এমন কোন তত্ব সমাজকে দিয়ে যান না, যা মানুষের মঙ্গলে লাগে। ফলে, এদের কথাও মানুষ মনে রাখে না। কারণ, জ্ঞান নিজের জন্য নয়, ধর্ম সাধন শুধু নিজের জন্য নয়, সমাজের মঙ্গলের জন্যই ধর্ম। মানুষকে পথ দেখিয়ে সঠিক লক্ষ্যে নিয়ে যাওয়ায় ধর্মগুরুদের কাজ। যেহেতু, তারা সমাজ থেকেই সবকিছু নিয়ে বেঁচে থাকেন, তাই সমাজ তথা জগতকে উপেক্ষা করা তাদের মানায় না।


                    

  

বাবাজী মহারাজ বলছেন –ভারত মায়াবাদী এবং অদৃষ্টবাদী হয়ে পড়ায় আজ বিশ্বের অন্য দেশ ও জাতি থেকে পিছিয়ে পড়ছে। কারণ, শুধু ঈশ্বরকে নিয়ে থাকলে জগতের মঙ্গল হয় না, ঈশ্বরের যা কিছু সবকিছু তার সৃষ্টির মধ্যেই। ভগবান হলো ভক্তের, প্রকৃতির সব রহস্য মুক্ত হয় তার সৃষ্টির কাছেই। কাজেই জগত ও জাগতিক বিষয়কে অস্বীকার বা তাচ্ছিল্য করে সেই পরমাত্মার কাছে পৌঁছানো অলীক কল্পনা। এটা স্বামী বিবেকানন্দ থেকে আমাদের বাবাজী মহারাজ সবাই বুঝেছেন।




আর একজন প্রকৃত সাধকই পারেন মানুষকে সেই ভক্তির পথে টেনে নিয়ে যেতে। সেই সাধকের কোন কোন গুণাবলী থাকতে হবে?  বাবাজী বলছেন তার চিত্ত হবে সংযত, কথাবার্তা হবে সংযত, ইন্দ্রিয় বিষয়ে বৈরাগ্যযুক্ত, আসক্তিহীন। এরাই সমাজকে পথ দেখাতে পারে। যে সাধকের লোভ নেই, সেই সাধকই পারেন অন্যকে লোভ জয় করার উপদেশ দিতে।


সাংবাদিক হিসাবে দীর্ঘ ৩৪ বছর, ভারতের নানা ধর্মীয় মেলা ও সমাবেশ কভার করেছি। অসংখ্য সাধু-সন্ন্যাসীর সংশপর্শে এসেছি, কখনো কুম্ভে, কখনো সাগরদ্বীপে, কখনো জয়দেবে, বা পাথরচাপুড়িতে। কখনো জল্পেশ, কখনো বা অমরনাথে, হিংলাজে। দেখেছি ধর্মের নানা রূপ। লোভ আর লোভহীনতার নানা চেহারা। স্বর্গীয় জীবনের খোজে মানুষের চলা দেখেছি। র‍্যাগের মহিমা মুছে সাধুকে দেখেছি নারীতে অবগাহন করতে। বাবাজী মহারাজও দেখেছিলেন, তাই বারে বারে আমাদের বলতেন, প্রকৃত ধর্ম মানুষকে সংযমের শিক্ষা দেয়, ধর্ম জীবনের অর্থ বয়ে আনে। কতজন, সেই কথা মনে রেখে কর্ম করতে পেরেছি? সবাই পারিনি। সকাম কর্মের মধ্যে থেকে শুধু বইয়ে পড়ে চলেছি নিঃষ্কাম কর্মের কথা। ভাবছি, আজ না হোক একদিন এই নিঃষ্কাম কর্ম করে পার হবো দুঃখের সাগর।




এই প্রসঙ্গে আর একটা কথা বলার আছে। সেটা হলো বিষয়। বিষয় কী? বেদান্ত দর্শন বলছে – ‘বিষিন্বন্তি অবধনন্তি যে তে বিষয়াঃ’ অর্থাৎ, যা মানুষের মনকে বিষণ্ণ করে তোলে তাই বিষয়। মানুষ যতই বিষয়ী হয়ে পড়বে, ততই তার মানসিক চিন্তা বাড়বে। দেখা দেবে লাইফ-স্টাইল ডিজিজ, যেমন, ব্লাড সুগার, হাইপারটেনশন। এসব থেকে নিজেকে মুক্ত রাখার জন্য, বিষয় থেকে মনকে সরিয়ে নিতে হবে শ্রীভগবানের পাদপদ্মে, শ্রীগুরুর পদতলে। বাবাজী বলতে, বিষয় এমনই জিনিষ যা মনকে শ্রীভগবানের থেকে অনেক দূরে নিয়ে যায়। তাই জপ করা ভালো। নিম্বার্ক মন্ত্রে বৈরাগ্যের ভাব প্রবল। এই জপ নিয়মিত করলে, অন্তরে বৈরাগ্য আসবে। আর অন্তরের বৈরাগ্যই আসল বৈরাগ্য।

বাবাজী মহারাজ গীতার ব্যাখ্যায় লিখছেন – বেশ বা নাম পরিবর্তন করে সন্ন্যাস আশ্রম গ্রহণ করলেও, যদি আসক্তি ত্যাগ না হয়, তা হলে সেই সন্ন্যাস শুধু বাহ্য সন্ন্যাস। বাহ্য সন্ন্যাস হলেও, তাতে কোন দোষ হয় না, যদি কর্মফলে আসক্তি না থাকে।পুলিশের বেশ ধারণ করলেই যেমন সে পুলিশ হয়ে যায় না। সন্ন্যাসীর ক্ষেত্রেও তাই। তবে, অনেকের মনের উপর এই বেশের প্রভাব পড়ে। আর এটাই ঠকে যাওয়ার ভয়।

             যারা এই বইটি কিনতে চান, যোগাযোগ করুন  8927042594  Whatsapp নম্বরে।


নিঃষ্কাম কর্ম কী? যে কর্ম কোন কিছু পাওয়ার আশা না করে করে হয়। সন্তান মানুষ নিষ্কাম কর্ম হবে তখনই, যখন সন্তানরা ভবিষ্যতে দেখবে একথা না ভেবে তাদের মানুষ করে কর্মের যোগ্য করে তুলবেন।পোয়ার আশা করে কর্ম করলে, সেই কর্ম আপনাকে দুঃখ দেবেই। আর একটা কথা সব কাজই ভগবানের কাজ – এই মনে করে করুন, কর্মফলের আশা চলে যাবে। কর্মের মধ্যে আনন্দ পাবেন। মনে রাখবেন, বন্ধন হলো সব কষ্টের মূল। নিজেকে ঈশ্বরের পদতলে সমর্পণ করে সংসারের দায়িত্ব পালন করুন, দেখবেন বন্ধনে থেকেও আপনি মুক্ত। আমাদের বাবাজী মহারাজ সব বন্ধনে থেকেও ছিলেন মুক্ত পুরুষ। নিঃষ্কাম কর্মের শ্রেষ্ঠ উদাহরণ।

প্রকৃত গুরু চিনতে হলে, বেশ কয়েকটি বিষয়ে নজর রাখতে হয়। যেমন, তিনিই গুরু যিনি শিষ্যের সব প্রশ্নের যুক্তিগ্রাহ্য ও স্বচ্ছ উত্তর দেওয়ার যোগ্যতা রাখেন। যে গুরুর মন ও মুখ এক, তিনিই যথার্থ গুরু। যে গুরুর জীবন যাপন ও উপদেশের মধ্যে কোন পার্থক্য থাকবে না, তিনি গুরু হওয়ার উপযুক্ত। যার সমস্ত কর্মই পরম্পরা রক্ষা ও ভক্তদের স্বার্থে, তিনিই গুরু। যে গুরুর মধ্যে পুঁথিগত জ্ঞানের পাশাপাশি থাকবে বাস্তব জ্ঞান। যার দু চোখ হবে নির্লিপ্ত, অচঞ্চল ও জ্ঞানের গভীরতা সম্পন্ন, তিনিই গুরু।

বাবাজী মহারাজের লেখা থেকে জানতে পারি – গুরু কিন্তু দেহ নয়। পরমাত্মা। দেহটাকে মনে রাখলে, সেই পরমাত্মাকে পাওয়া যায় না। দেহকে অবলম্বন করে তিনি শিষ্যদের শেখান। আর এই দেহের সমাপ্তি হলেও তিনি থেকে যান, শিষ্যদের কল্যাণ কামনায়। তাকে জপের মাধ্যমে ডাকতে হয়। যিনি পারেন, তিনি শ্রীগুরুকে সবসময় কাছে পাবেন। তাই গুরু করতে হয়, অনেক কিছু দেখে। একটা কথা প্রচলিত আছে – ‘পানি পিও ছান কর, গুরু কর জান কর।‘

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

Top Post Ad

Below Post Ad