Hot Widget

Type Here to Get Search Results !

Advt 720

শ্রীশ্রী ১০৮ স্বামী প্রজ্ঞাদাস কাঠিয়াঃ যেমন দেখেছি তাঁরে... পর্ব ৮



একবিংশ শতাব্দীতে ধর্মের সঙ্গে বিজ্ঞানের মিলন হবে আর এই শতাব্দী হবে ' চেতন শক্তির বিজ্ঞান ' বা ' কনসাসনেস অফ সাযেন্স '

শ্রীশ্রী বাবাজী মহারাজ

একজনের ‘থাকা’ আর ‘না-থাকা’টা অনেক বড় পার্থ্যকের সৃষ্টি করতে পারে 


 শ্রীবাবাজী মহারাজ থাকাকালীন আশ্রমে দেখেছি আনন্দের একটা ভুবন। দূরাগত ভক্তদের আগমনে, আমবাগানের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া বাতাসে, গোয়ালে গাভীদের ডাকের মধ্যে সেই আনন্দের প্রকাশ ঘটতো। মন্দিরের কাঁসর আর ঘন্টার শব্দে মনে হতো, এ যেন আনন্দ-পুরী। সাংসারিক জীবনের সব তর্ক-বিতর্ক, ক্ষোভ-হতাশা, রাগ-দুঃখ সব পড়ে থাকত আশ্রমের গেটের বাইরে। 
 শ্রীবাবাজী চলে যাওয়ার পর সব একই আছে, অন্ততঃ যা চোখে দেখা যায়। সেই বিরাট নব-নির্মিত মন্দির, অতিথিশালা, গোয়াল, আমবাগান। সেই সন্ধ্যা আরতি। কিন্তু, যা চোখে দেখা যায় না, অন্তর দিয়ে উপলব্ধি করতে হয়, সেটা নেই। নেই সন্ধ্যা হলেই সেই মানুষের ঢল, নেই সেই গাভীদের ডাক, নেই সেই আমবাগান থেকে ঝুড়ি-ভর্তি পাকা আম তুলে এনে ভক্তদের মধ্যে বিলিয়ে দেওয়া। নেই সেই সারি দেওয়া অতিথিশালায় ভক্তদের কলরোল। 
প্রতিদিন, দুপুরে ও রাতে পুরানো মন্দিরের সামনের চাতালে প্রসাদ দেওয়া হতো। গরম ভাত, সঙ্গে রুটি, ডাল-সব্জি, পাপড়, চাটনি। কোনোদিন দই বা মিষ্টি। এক অদ্ভুত আবেশ। বাবার সেই সুমধুর উপস্থিতি, প্রসাদের পর তার সামনে কিচ্ছুক্ষণের নীরব উপস্থিতি, বাড়ি ফেরার আগে এক অনাস্বাদিত শক্তিতে ভরে দিত দেহ-মন। আসলে, তিনি ছিলেন এক আশ্চর্য্য ব্যক্তিত্বের অধিকারী, যার সামনে দাঁড়ালে নিজের অস্তিত্ব বলে কিছু থাকে না। সব বিলীন হয়ে যায়। মাথা আপনি আপনি নীচু হয়ে যায়। কাউকে বলতে হয় না সাষ্টাঙ্গে প্রণামের কথা। এমনিতেই প্রণতঃ হয়ে যায় দেহ-মন।

 আজ সব স্মৃতি। বাবার চলে যাওয়ার পর বেশ কয়েকবার গিয়েছিলাম আশ্রমে। তখন বিষ্ণুদাসজী ছিলেন, কিন্তু শরীর তার মনের সঙ্গে সেভাবে সায় দিত না। বসেছিলাম তার সামনে কিছুক্ষণ। পিসীমাকেও দেখেছিলাম। একজনকে লজেন্স চাইছিলেন। কিন্তু, সেই ভদ্রলোক বললেন, বয়স হয়ে গেছে অত লোভ ভালো নয়। এই পিসীমাকেই বাবা কত সম্মান দিয়ে কথা বলতেন। মনটা খারাপ হয়ে গিয়েছিল। 
ফিরে এসেছিলাম। মন বলছিল, বদলটাই জীবন। কিন্তু আমার আরেক মন প্রতিবাদ জানিয়ে বলেছিল, কিন্তু সেই বদলানো জীবনে এমন অনেক সংষ্কার আমরা ফেলে দিয়ে যাই, যার প্রয়োজন এখনো ফুরোয় নি। যাইহোক, আবার ফিরে আসি ১৩ চৈত্রে, যে দিনে আমি আর আমার স্ত্রী শ্রীশ্রী ১০৮ স্বামী প্রজ্ঞাদাসজী মহারাজের কাছে মন্ত্রদীক্ষা নিয়েছিলাম। 

আশ্রমে ফিরে দেখি আমার স্ত্রী শ্রীবাবাজীর কাছে মাটিতে বসে আছেন। কাছে এগিয়ে গিয়ে দাঁড়ালাম। বাবা বললেন, বোস। 
বসলাম। 
আমার স্ত্রী বাবাকে বললেন, "আমার মা-বাবা-কাকা-কাকিমা শ্রীশ্রীজানকীদাসজীর কাছেই মন্ত্র দীক্ষা নিয়েছিলেন। উনি যখন পাড়াম্বুয়ায় রোবে কাকাদের বাড়িতে বা পালেদের বাড়িতে আসতেন, আমাদের দুর্গামন্দিরে বসতেন। আপনাকেও দেখেছিলাম ওনার সঙ্গে। তখন থেকেই ঠিক করেছিলাম। কাঠিয়াবাবার কাছেই দীক্ষা নেবো।“ 
আমি চুপ করে শুনছি। 
আমার স্ত্রী বলে চলেছেন, “একবার শ্রীজানকীদাসজী আমাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, ‘কোথায় বিয়ে হয়েছে তোর?’ আসলে, আমার মা ওনাকে জিজ্ঞাসা বলেছিলেন, মেয়েটাকে ওর শাশুড়ী ঠিকমতো মেনে নেয় না। যাইহোক, আমি ওনাকে বলি, তারকেশ্বরে। উনি সঙ্গে সঙ্গে বলেছিলেন, ‘বেশ ভালো জায়গাতেই তো বিয়ে হয়েছে। পারলে সপ্তাহে ২-৩ দিন মন্দিরে যাবি।‘ উনি চলে যাওয়ার পর, দীক্ষার ব্যাপারটাও মাথা থেকে চলে গিয়েছিল। আমার স্বামীও দীক্ষাতে বিশ্বাসী ছিলেন না।“ 
আমার স্ত্রী চুপ করলেন। 
শ্রীবাবাজী ভাবের ঘর থেকে আচমকাই আমার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলেন, কি রে! দীক্ষা নিবি, গুরুকে যাচাই করেছিস তো?” 
যে আমি বড়-বড় নেতা-মন্ত্রীদেরও অসংখ্য প্রশ্নবাণে জর্জরিত করতাম, সেই আমার মুখে একটাও কথা নেই। নিঃশ্চুপ। একটা বিরাট ব্যক্তিত্ব যেন আমার সমস্ত বাক হরণ করে নিয়েছিল। চোখ তুললাম। ওনার মুখে হাসি। এক শিশুর হাসি। যে হাসিতে আশ্রম হয়ে ওঠে দেবতাদের আবাস, যে হাসিতে সব পাপ নাশ হয়ে যায়, যে হাসিতে থাকে এক অভয় – ভয় কীরে- আমি তো আছি। 

আজ ২০ বছর পর, যখন প্রতিদিন ভোরে প্রার্থনার আগে ও পরে বাবার ছবিটার দিকে তাকাই, মনে হয় বাবা বলছেন, ভয় কী রে, এগিয়ে যা। আমি তো আছি। তিনি আছেন। ভিন্ন ভিন্ন মানুষের মধ্য দিয়ে তিনি আজো ও আমার কাছে আসেন। 
 যেমন আমার মেয়ের মাধ্যমিক পরীক্ষার আগে দেখেছিলাম এমন এক সন্ন্যাসীকে, যাকে আর কোনদিন দেখিনি। ত্রিপুরা থেকে ফেরার পথে গুয়াহাটিতে দর্শন পাই এমন একজনের যার কোন মোবাইল ফোন ছিল না, যিনি আমাকে দিয়ে যাননি যোগাযোগের কোন ঠিকানা, শুধু বলে গিয়েছিলেন সময়ে দেখা হবে। সে সব কথা পরে বলব। 
বাবা হাসি থামিয়ে আমার স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে বললেন, "তাহলে আজই তোদের দীক্ষা হবে।"
 উনি উঠে দাঁড়িয়ে দৃঢ পদক্ষেপে পাশের ঘরে চলে গেলেন। 

এই প্রসঙ্গে আপনাদের আর একটা কথা বলি। অনেকে এই ‘১৩’ সংখ্যাকে ‘আনলাকি’ ভাবেন। অথচ, আমার জীবনে অনেক কিছুর সঙ্গে জড়িয়ে আছে এই ‘১৩’ সংখ্যাটি। আমার বিবাহ হয় ১৩ মার্চ, আমি কলেজের হোস্টেলে যে ঘরে থাকতাম, তার নম্বর ছিল ১৩। আমার রোল নম্বর ছিল ১৩। আর আমার জন্মদাতা বাবার মৃত্যু হয় এই ১৩ তারিখে। 
যাইহোক, বাবা তো রাজী হলেন, কিন্তু এবার। কোনো প্রস্তুতি ছাড়াই গিয়েছিলাম আশ্রমে। আমার স্ত্রী বললেন, ওনার কাছে একটা নতুন কম্বলের আসন আছে। কিন্তু দীক্ষা নেওয়ার নিয়ম কি আমরা কেউই জানতাম না। আমার স্ত্রী ওখান থেকে এসে, রাধামাধবকে ডাকলেন।
 রাধামাধব এলে ওকে জিজ্ঞাসা করলেন, কী কী লাগে দীক্ষা নিতে? রাধামাধব আমার স্ত্রীকে বলল, দিদি, শুধু নতুন দুটো কম্বলের আসন, অল্প চাল, ফুল আর ৫ টা ফল। আমার স্ত্রী বললেন, চলো অগ্রদ্বীপ থেকে কিনে আনি। আশ্রমে এলাম। সেদিন দীক্ষা হলো। নিজের কোনো নতুন ধুতি ছিল না। রাধামাধব একটা নতুন ধুতি এনে দিল, সেটাই পরে দীক্ষা নিলাম।
(আগামিকাল...)

Post a Comment

1 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.
Anonymous said…
Babar abhab konodin puron habe na

Top Post Ad

Below Post Ad

Hollywood Movies