Hot Widget

Type Here to Get Search Results !

Advt 720

বর্তমান ক্ষয়িষ্ণু সমাজে, শ্রীবাবাজী এসেছিলেন এক নতুন মতবাদ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে মানুষের ভিতর ও বাহিরের উন্নতিসাধন করতে

যেভাবে দেখেছি তাঁকে

 বর্তমান ক্ষয়িষ্ণু সমাজে, শ্রীবাবাজী এসেছিলেন এক নতুন মতবাদ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে মানুষের ভিতর ও বাহিরের উন্নতিসাধন করতে

তারক ঘোষ

 পর্ব ৩৫ 

 
ধ্যাত্মিক সমাজতন্ত্রের সূত্রটি চরম অদ্বৈতবাদের মতবাদ থেকে পাওয়া যেতে পারে। বৈচিত্র্যকে বিবেচনায় না রেখে ঐক্য শব্দটির কোন অর্থ বহন করে না। একটি আদর্শ সমাজে গোঁড়া সমাজতত্ববিদ ঐক্যকে তার প্রকৃতি এবং তার ভিন্নতার দ্বারা স্বীকৃতি দেয়। কাজেই, একজন বিশিষ্ট সমাজতান্ত্রিক চিন্তাবিদ মহান নিম্বার্ক তুলে ধরেছিলেন, প্রাকৃতিক পার্থক্য-অপার্থক্যের মতবাদটি। 

 আমার বক্তব্য একান্তভাবেই আমার নিজের। কেননা আমি যেভাবে বাবাজীকে দেখেছি - একজন ভক্ত হিসাবে, পাশাপাশি একজন সাংবাদিক হিসাবে ওনাকে জেনেছি, সেটাই আমি বলবার চেষ্টা করছি। কিছু বিষয় বুঝে নেওয়ার জন্য আমি সাংবাদিকতার দৃষ্টিকোণ থেকে দেখেছি, বা নানা সময় সাংবাদিক হিসাবে নানা প্রশ্নের উত্তরে বেরিয়ে এসেছে নানা কথা। 
আমার সঙ্গে একমত হওয়ার কোন কারণ নেই। আমি বিশ্বাস করি, শ্রীবাবাজী মহারাজের রেখে যাওয়া তত্ব ও দর্শন ভবিষ্যত পৃথিবীর গবেষকদের কাছে সমাজতত্বের একটা নতুন দিগন্ত খুলে দেবে। সমাজ সম্পর্কে, নিম্বার্ক দর্শন সম্বন্ধে তার ভাবনা ও মার্ক্স তত্ব ও নিম্বার্ক তত্বের আলোকে তিনি যে নতুন সমাজের আদর্শ স্থাপন করতে চেয়েছিলেন, তা আজ না হোক, ভবিষ্যতের মানুষের কাছে একটা পথ হতে পারে। তাই, সেদিকে তাকিয়েই আমার এই লেখা। 
ওনার সঙ্গে যেদিন আমার প্রথম দেখা হয়, সেদিন উনি ওনার গবেষণা গ্রন্থটি রাধামাধব দাসজীর হাত দিয়ে আমার হাতে দিয়েছিলেন। আর বলেছিলেন, তোর দ্বারা ভবিষ্যতে আমার একটা কাজ অপেক্ষা করে আছে। আমি আজও জানি না কী সেই কাজ, শুধু জানি বাবাজী আমাকে সাংবাদিকতার সঠিক আদর্শ নিয়ে পথ চলতে বলে গিয়েছিলেন, আমি সেই পথেই আমার কর্ম করে চলেছি।
আমি আগেও বলেছি, আর আবার বলছি, শ্রীবাবাজী মহারাজ ছিলেন এক কর্মযোগী মহাপুরুষ। যুগের এমন একটা সময় তিনি আবির্ভূত হয়েছিলেন, যেখানে সমাজের মধ্যে একটা অদ্ভুত ক্ষয়ের ফল্গুধারা বয়ে যাচ্ছিল। তিনি সেটা বুঝতে পেরেছিলেন। 
শুধু ধর্মের বুলি দিয়ে মানুষের মনকে একটা দিকে চালনা করা হয়তো যায়, কিন্তু, তা থেকে সার্বিক মানুষের উন্নতি করা খুব কঠিন। গৃহী মানুষের নানা সমস্যা, সেই সমস্যাকে দূরে রেখে শুধু ঈশ্বর সাধনা করা সম্ভব নয়। 
কাজেই, এই সমস্ত মানুষজনের মধ্যে যে ‘সাময়িক বৈরাগ্য’ দেখা যায়, সেটা কেটে যেতে সময় লাগে না। তাই তিনি সাধন পথের পাশাপাশি মানুষের আর্থ-সামাজিক অবস্থান নিয়েও চিন্তা-ভাবনা শুরু করেন। আমি এই সম্প্রদায়ের নানা মহামানবদের লেখায় পড়েছি, সন্ন্যাসীকে তার আশ্রমের বিস্তার ঘটাতে নেই, আশ্রমের মধ্যে অর্থের প্রবাহ সন্ন্যাস জীবনকে প্রভাবিত করতে পারে। সন্ন্যাসী তার আদর্শ থেকে বিচ্যুত হতে পারেন।
 প্রশ্ন উঠতে পারে, তাহলে শ্রীবাবাজী কেন আশ্রমের বিস্তার ঘটিয়েছিলেন। এককথায় বলা যায়, শ্রীবাবাজী শুধু সন্ন্যাসী ছিলেন না, তিনি ছিলেন এক কর্মযোগী মহাপুরুষ। শ্রীরামকৃষ্ণ, স্বামী বিবেকানন্দ, নেতাজী সুভাষ, কবিগুরু, বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামী, স্বামী জানকীদাসজী, মহানামব্রতের আদর্শকে নিয়ে তিনি পথ চলতে ভালোবাসতেন। তার গবেষণার বিষয় ছিল ‘মার্ক্স ও নিম্বার্কের চিন্তাধারায় এক সমাজ’। কাজেই তিনি যে অন্য ধর্মগুরুদের থেকে আলাদা হবেন, এ নিয়ে আমার মধ্যে দ্বিমত নেই। অন্যদের থাকলে সেটা তাদের বিষয়।
কর্ম না করলে কারো পেট চলতে পারে না। এটাই সত্য। আর কর্মের সুযোগ না হলে, কর্ম করবে কোথায়? কর্ম আর জীবিকা – এই দুই এর মধ্যে সমন্বয় সাধন যে প্রয়োজন, সেটা তিনি উপলব্ধি করেছিলেন, পাশাপাশি বুঝেছিলেন, শিক্ষা না হলে, মানুষের পূর্ণ বিকাশ হতে পারে না।
 তিনি জানতেন, অর্থ অনর্থের কারণ, অথচ, অর্থ ছাড়া জগত-সংসার অচল। কিন্তু, এটার মধ্যেও প্রয়োজন সঠিক পথে অর্থ উপার্জন। শুধু নিজের সেবা নিয়ে নয়, অন্যের সেবা করার মাধ্যমেই সমাজের প্রকৃত বিকাশ ও উন্নতি সম্ভব।
তিনি তার গবেষণাপত্রে লিখছেন - আধ্যাত্মিক সমাজতন্ত্রের সূত্রটি চরম অদ্বৈতবাদের মতবাদ থেকে পাওয়া যেতে পারে। বৈচিত্র্যকে বিবেচনায় না রেখে ঐক্য শব্দটির কোন অর্থ বহন করে না। একটি আদর্শ সমাজে গোঁড়া সমাজতত্ববিদ ঐক্যকে তার প্রকৃতি এবং তার ভিন্নতার দ্বারা স্বীকৃতি দেয়। কাজেই, একজন বিশিষ্ট সমাজতান্ত্রিক চিন্তাবিদ মহান নিম্বার্ক তুলে ধরেছিলেন, প্রাকৃতিক পার্থক্য-অপার্থক্যের মতবাদটি। 
নিম্বার্ক যেভাবে ব্যাখ্যা করেছেন, এই মত কোনও ব্যক্তির ব্যক্তিত্বকে ধ্বংস করে না। বরং এটি অন্য সকলের সঙ্গে মিলনের কথা বলে। ভারতীয় ঐতিহ্য গৃহ জীবন ত্যাগ করার পরামর্শ দেয় না, বরং এটি সমাজের অন্যান্য সদস্যদের কাছে নিজের নিজেকে উপলব্ধি করার পরামর্শ দেয়। 
সমাজের প্রতিটি সদস্য যদি সমাজের সেবার মনোভাব নিয়ে তার দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করে এবং সকল সদস্যের মধ্যে অপরিহার্য সমতা উপলব্ধি করে তবে আধ্যাত্মিক সমাজতন্ত্র জগতের আলো দেখতে পারে। আমি শ্রীবাবাজী মহারাজের রেখে যাওয়া কর্মের নিদর্শন ও তার ভাবনাগুলো নিয়ে চিন্তা করার সময় দেখেছি, তিনি নতুন এক আলোকে সমাজকে বিশ্লেষণ করে, সেই আলোতে কর্মের মাধ্যমে মানবজীবনের উন্নতির কথা ভাবছিলেন। 
চলবে

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

Top Post Ad

Below Post Ad

Hollywood Movies