Hot Widget

Type Here to Get Search Results !

Advt 720

শ্রীশ্রী ১০৮ স্বামী প্রজ্ঞাদাস কাঠিয়াঃ যেমন দেখেছি তাঁরে..পর্ব ২৬

সুখের বাক্স খোলার পাসওয়ার্ড হল দুঃখ, আর শান্তি হল শত্রুর মধ্যেও ভগবান দর্শন

 তারক ঘোষ

পর্ব  ২৬

 সুখের পাসওয়ার্ড খোজার জন্য মানুষ কী না করে! একটু সুখের জন্য কখনো নারী, কখনো অর্থ, কখনো যশের নেশায় ছুটে মরে। শেষে দেখা যায়, সুখ অধরাই থেকে গেছে, এতদিন যাকে সুখ ভেবে এসেছে, সেটা মরীচিকা ছাড়া আর কিছু নয়। একসময় পুত্র-কন্যাও তাদের নিজের জীবনে চলে যায়, ব্রাত্য হয়ে যায় বাবা-মা। শরীরে বাসা বাধে রোগ। 
মানুষের সঙ্গ লাভের জন্য মনটা যখন হু হু করে ওঠে, দেখা যায় মানুষ বলে কিছু নেই, আছে কিছু স্বার্থপর, যারা প্রয়োজন মিটিয়ে ফিরে গেছে তাদের নিজভূমে। এটাই জীবন। আর এই জীবন নিয়ে মেতে ওঠার দিন শেষ হলে, পড়ে থাকে শুধু স্মৃতির যন্ত্রণা আর ‘সুখ’ নামক অলীক পাখির শূন্য খাঁচাটা। 
সুখ কি সত্যি কোন অলীক পাখি, যার বাস্তবে কোন অস্তিত্ব নেই! শুধু সুখের খাচাটা নিয়েই আমরা ভেবে ফেলি, সুখ খুঁজে পেয়েছি। 


আসলে, এক এক মানুষের কাছে সুখের সংজ্ঞা এক এক রকম। কেউ একাকীত্বে সুখ পায়, কেউ দেহে সুখ পায়, কেউ মনে সুখ পায়, কী ধনী হয়ে সুখ পায়, কেউ অন্যকে দরিদ্র হতে দেখলে সুখ পায়, কেউ ক্ষমতায় সুখ পায়, কেউ যশ আর খ্যাতিতে সুখ পায়। অর্থাৎ, সুখের কোন স্থায়ী সংজ্ঞা নেই। মানুষ ভেদে সংজ্ঞা ভিন্ন। 
কিন্তু তথাকথিত সুখের একটা শেষ আছে। রাজনীতিতে মন্ত্রিত্ব চলে গেলে হারিয়ে যায় ক্ষমতার সুখ, দেহ বিকল হলে অরুচি আসে দৈহিক সুখে। বাড়ির কর্তৃত্ব চলে গেলে, হারায় মনের সুখ। এর উপর আছে, নানা সমস্যা। সেই সমস্যা ডেকে আনে অশান্তিকে – মন ক্রমশঃ হারাতে থাকে সুখের হাসি। নিজেরই মনে হয়, এর মধ্যে সত্যি কি আসল সুখ কোনদিন পেয়েছি? 
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবনে একের পর এক এসেছে দুঃখের বন্যা। একদিকে খ্যাতি, অন্যদিকে বড় মেয়ে মাধুরীলতার নিদারুণ মৃত্যু। ছোট ছেলে শমীন্দ্রনাথের অকালে চলে যাওয়া। 
তাই তার শেষ জীবনের কবিতায় তিনি লিখছেন – 

“চিনিলাম আপনারে 
আঘাতে আঘাতে 
বেদনায় বেদনায়;” 

কবির মনেও তাই প্রশ্ন জেগেছিল। তিনি আর একটি কবিতায় বলছেন – “দুঃখের আধার রাত্রি বারে বারে এসেছে আমার দ্বারে;” তাহলে কি এই পৃথিবীতে সুখ বা স্থায়ী সুখ বলে কিছু নেই? কেউ কি কোনদিন খুঁজে পাবে না সুখের সঠিক পাস-ওয়ার্ড? 


গীতায় ভগবান বলছেন – 

যে হি সংস্পর্শভোগ্য দুঃখযোনয় এব তে, 
আদ্যন্তবন্তঃ কৌন্তেয় ন তেষু রমতে বুধঃ। 

যতগুলো সংস্পর্শ ভোগ আছে, তাই দুঃখের কারণ। এদের শুরু আছে, শেষ আছে, তাই জ্ঞানী ব্যক্তিরা এতে আসক্ত হন না। একটা সুখে তৃপ্তি না হলে, আর এক সুখের সন্ধান। এভাবে, সারাজীবন চেষ্টা করেও সুখ অধরাই থেকে যায়। প্রশ্ন ওঠে – কোন পথে গেলে প্রকৃত সুখের সন্ধান পাওয়া যেতে পারে? 
উপনিষদ বলছে – 

“নাল্পে সুখমস্তি ভুমৈব সুখম।“ 

এর অর্থ হল – ইন্দ্রিয়ভোগে সুখ নাই, আত্মাতেই সুখ। আজ দেখুন চারিদিকে প্রেমের ছড়াছড়ি। 
আবার দেখুন, স্বামীর হাতে স্ত্রী খুন, প্রেমিকাকে টুকরো টুকরো করে কাটছে প্রেমিক। প্রেমিকের জন্য স্বামীকে খুন করাচ্ছে স্ত্রী। চারিদিকে ধর্ষণ আর খুনের বন্যা বইছে। ধনী ক্ষমতাবান মানুষরাও অতিরিক্ত অর্থের মোহে পড়ে জেলে যাচ্ছে। এক অদ্ভুত আনন্দ আর সেই আনন্দের নিদারুণ পরিণতি। 


বাবাজী বলতেন, ছেলে-মেয়েদের হাতে মোবাইল দিবি না। এটা বিপদের কারণ হবে।
 আজ তাই হচ্ছে। মোবাইলে পর্ণ ছবি দেখে নিজেদের ও অন্যদের সর্বনাশ করছে কিশোর সময়। বাবাজী বারে বারে মেয়েদের দায়িত্ব কী, বাবা-মায়ের দায়িত্ব ও কর্তব্য কী, ছেলেরা কীভাবে চলবে – এসব কিছু নিয়ে আলোচনা করেছেন। দুঃখ যে মানুষকে খাঁটি করে এ কথাও বলেছেন। কিন্তু, সেই দুঃখ কি না-পাওয়ার দুঃখ? কখনোই না। সেই দুঃখ হল, ঈশ্বরকে ভুলে, বিবেককে অস্বীকার করে কর্ম বা দুষ্কর্ম করে যাওয়া। 
তিনি উপনিষদের কথা তুলে ধরে বলেছেন –“ঈশ্বরচিন্তা ছাড়া শান্তিলাভের আর কোন রাস্তা নাই। ‘নিম্বার্ক দর্শনে শিক্ষা’ প্রবন্ধে বাবাজী মহারাজ লিখছেন –
“শ্রী ভগবান ছাড়া অন্য কোন কিছু হইতে শান্তি বা সুখের সন্ধান করিতে চাহিলে ঠকিতে হয়। পার্থিব যতগুলি জিনিসের সহিত আমরা আমাদের হৃদয়ের যোগস্থাপন করি, হৃদয়ে ততগুলি শোকশলাকা প্রোথিত করিয়া রাখি। হয় সেই বস্তুগুলি আমাদের ছাড়িয়া যায় নতুবা আমরাই তাহাদের ছাড়িয়া চলিয়া যাই। জড়বস্তু হইতে সুখ পাইতে চাহিলে ব্যর্থই হতে হয়। নারী বা পুরুষ দেহ, খাদ্য, টিভি, ঘর-বাড়ি, গাড়ি, পোশাক – সবই জড়বস্তু। এই সবের উপভোগের মাধ্যমে যথার্থ সুখ পাওয়া যায় না। নশ্বর বস্তু শাশ্বত সুখ সুখ দিতে পারে না।“
  বাবাজী মহারাজ বলতেন, ‘আমাদের দু ধরণে প্রকৃতি আছে – বহিঃপ্রকৃতি ও অন্তঃপ্রকৃতি। বহিঃপ্রকৃতি চায় বাইরের জগত থেকে ইন্দ্রিয়ভোগের মাধ্যমে সুখী হতে। অন্তঃপ্রকৃতি চায় শাশ্বত শান্তি। বহিঃপ্রকৃতি জয়লাভ করলে আমরা লাভ করি সংসার আর অন্তঃপ্রকৃতি জয়লাভ করলে আমরা ভগবানকে লাভ করি, লাভ করি শাশ্বত শান্তি।“ 
বাবাজী বলেছেন- বুদ্ধির দ্বারা মনকে নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। জ্ঞানের সাহায্যে মন যখন বোঝে বিষয় ভোগে শান্তি নেই, শান্তি আছে আত্মদর্শনে, তখন ইন্দ্রিয়ভোগ এর ব্যাপারে মন সংযত হয়।“ তার কথায়, প্রথমেই মনের চঞ্চলতা ত্যাগ করতে হয়, কারণ এই চাঞ্চল্য মানুষকে এক অবস্থা থেকে অন্য অবস্থায় তাড়িয়ে নিয়ে যায় আর মানুষও ক্রমশঃ আরো—আরো চাইতে থাকে।
আগামিকাল

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

Top Post Ad

Below Post Ad

Hollywood Movies