আর সেই গৌরব আজ বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশকে পরিচিত করে তুলেছে।
তাদের হাত ধরেই এ বিশ্ব পেয়েছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। বায়ান্নোর শুরু থেকে রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই বলে শ্লোগানে রাজপথ ভরিয়ে দিয়ে ছাত্রসমাজ যে লড়াইয়ের মুখোমুখি হয়েছিল, রাষ্ট্রভাষা কেন বাংলা হবে না সে প্রশ্ন করতে শিখেছিল, এই মাস সেই জবাবদিহিতা চাওয়ার সক্ষমতা।
১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার ও শফিউরসহ নাম না-জানা শহীদ ঢাকার রাজপথে বুকের রক্ত ঢেলে দিয়ে রচনা করেছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের ভিত্তি। তাদের আত্মদানের স্মৃতিকে মনে রেখে দেশে উদযাপিত হয়ে আসছে মাসজুড়ে অমর একুশে। মাতৃভাষার গুরুত্ব নিয়ে যারা প্রশ্ন তোলেন তাদের জন্য আবুল ফজল ১৯৬৯ সালে লিখেছিলেন ‘ভাষা এক ভয়ঙ্কর হাতিয়ার’ প্রবন্ধটি।
তিনি লিখেছেন- পূর্ণাঙ্গ মানুষ হওয়ার পথে ভাষা তার প্রধানতম হাতিয়ার। ভাষা মানে, মাতৃভাষা- কারণ এ ভাষা তার সহজাত। এরই মধ্যে কেটে গেছে ৬৭ বছর। বাংলা এখনও রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা পেলো কাগজে কলমে। এখনও কাজের ভাষা বাংলা নয় অনেক জায়গায়। যে লক্ষ্য নিয়ে ছাত্ররা সেদিন ১৪৪ ধারা ভেঙে বুক পেতে দিয়েছিল বন্দুকের নলের সামনে, জীবন দিয়েছিল, তাঁদের আত্মত্যাগকে আমরা যথাযথ মর্যাদা দিতে পেরেছি কিনা, সে নিয়ে প্রশ্ন উঠছে নতুন করে।
আজও আইনি আদেশ বা রায়ের ক্ষেত্রে, চিকিৎসা সেবায়, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামকরণে, মুঠোফোনে ইংরেজিই অগ্রাধিকার পায়।
অথচ বায়ান্নোর এসময় উত্তাল ছিল বাংলাকে প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা ১৪৪ ধারা অমান্য করে রাজপথে বেরিয়ে এলে পুলিশ গুলি চালায়। নিহত হন সালাম, বরকত, রফিক ও জব্বারের মতো তরুণ প্রাণ। প্রতিবাদে ক্ষুব্ধ ঢাকাবাসী ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হোস্টেলে সমবেত হয়।
পরের দিন ২২ ফেব্রুয়ারি আবারও রাজপথে নেমে আসে। ভাষা শহীদদের স্মৃতিকে অমর করে রাখতে ২৩ ফেব্রুয়ারি এক রাতের মধ্যে মেডিকেল কলেজের হোস্টেল প্রাঙ্গণে গড়ে ওঠে একটি স্মৃতিস্তম্ভ।এরপর একাধিকবার গুঁড়িয়ে ফেলা হয়েছে সেই বেদী। আবারও মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে ভাষা শহীদদের স্মৃতি।