তিনি আসার পর পর্যবেক্ষক পদ তুলে দেওয়া হয়েছিল। তার পরামর্শে মমতা পর্যবেক্ষক পদ তুলে কো-অর্ডিনেটর নিয়োগ করেছিলেন। কিন্তু, পঞ্চায়েত ভোটের আগে সাগরদিঘী উপনির্বাচনের ফল কাটাছেঁড়া করার পর, আবার বদলে গেল দলীয় সংগঠনের খোলনলচে। দলের নতুনদের চেয়ে পুরানো নেতাদের উপর আস্থা রাখলেন তৃণমূল সুপ্রীমো।
স্বভাবতইঃ, এই নিয়ে রাজনৈতিক মহলে আলোড়ন সৃষ্ট হয়েছে। যখন, একদিকে দলের সংগঠনে অভিষেকের লাগাম দৃঢ় হতে যাচ্ছে, ঠিক সেই সময়েই মমতা দলে তার নিজের আধিপত্যই বজায় রাখলেন। এটার কী বিশেষ কোন তাৎপর্য্য রয়েছে? দলের পুরানো নেতাদের উপর ভরসা করে তিনি ঠিক কী বার্তা দিতে চাইলেন? কাদের লক্ষ্য করে তার এই বার্তা? এইরকম অনেক প্রশ্ন এখন ঘুরছে রাজনৈতিক মহলে।
অনেকের ধারণ, মমতা পরিকল্পনা করেই দলের রাশ রাখলেন নিজের হাতে। এর সাহায্যে তিনি ভোটের আগে জনগণকে বোঝাতে চাইলেন, এখনো, গ্রামবাসীরা তার উপর ভরসা রাখতে পারেন। এর আগে, তিনি যেমন ঘোষণা করেছিলেন, রাজ্যের সবকটি বিধানসভায় তিনিই প্রার্থী।
এছাড়া, সম্প্রতি, দলের একাধিক যুবনেতার বিরুদ্ধে নানা ধরণের দূর্নীতির অভিযোগ উঠেছে, গ্রেপ্তারও হয়েছে কেন্দ্রিয় তদন্তকারী সংস্থার দ্বারা। দুই অভিযুক্ত যুবনেতাকে দল থেকে বহিষ্কারও করা হয়েছে। কিন্তু, দলের পুরানো নেতা অনুব্রতকে পদ থেকে সরানো হয়নি। যদিও তিনিও গ্রেপ্তার হয়েছেন কেন্দ্রিয় তদন্তকারী সংস্থার দ্বারা।
তাহলে, এই দু রকম নীতি কেন? আবার অন্যদিকে, পঞ্চায়েত নির্বাচনে অনুব্রতের জেলার দায়িত্ব মমতা নিজের হাতেই রেখেছেন। তাহলে, এর দ্বারা তিনি কী বার্তা দিলেন? সেই পুরানোতেই আস্থা? পুরানোরা জেলে থাকুক বা না থাকুক, পুরানোরাই দলের সম্পদ, এই বার্তা।
আর যদি, তিনি এই বার্তাই দিতে চান, সেটা কাকে উদ্দেশ্য করে? স্বভাবতইঃ দলের পুরানো নেতারা খুশি। কারণ, বিগত দিনগুলিতে নব্য ও পুরানো তৃণমূলীদের মধ্যে বারবার বাগবিতন্ডার খবর উঠে এসেছিল। তখন দলকে এই বার্তাও দিতে হয়, সকলে মিলেমিশে কাজ করুন – আগে দল, তারপর ব্যক্তি।
কিন্তু, শেষপর্যন্ত পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে, দলকে ফিরে যেতে হলো সেই পুরানো পথেই। ফিরিয়ে আনা হল পর্যবেক্ষক পদ। জেলয় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেওয়া হলো দলের পুরানো নেতাদের। ফিরহাদ হাকিম দেখতেন হাওড়া ও হুগলি জেলা। তাঁকে সেই দায়িত্বে ফিরিয়ে আনা হল। তাপস রায়কে দেওয়া হল দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা। মলয় ঘটককে দেওয়া হল বাঁকুড়া ও পুরুলিয়া জেলার দায়িত্ব। আর অনুব্রতহীন বীরভূম জেলার দায়িত্ব নিজের হাতে রাখলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।