এর মধ্যে হাওর এলাকায় আবাদ হয়েছে ৮৪ শতাংশ এবং সামগ্রিকভাবে ২১ শতাংশ। ইতোমধ্যে হাওর এলাকাসহ দেশের অন্যান্য অঞ্চলে ধান কাটা প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। কৃষক ঘরে ধান তুলছে। সমস্যা দেখা দিয়েছে, ধানের ন্যায্য ও যৌক্তিক মূল্য পাওয়া নিয়ে। কৃষকের উৎপাদিত ফসলের ন্যায্যমূল্য না পাওয়া একটি সাধারণ ঘটনায় পরিণত হয়েছে।
একটি ইংরেজি পত্রিকার প্রতিবেদন অনুযায়ী, এক বোরো চাষী আক্ষেপ নিয়ে বলেছে, এক মণ ধান উৎপাদনে তার খরচ হয়েছে ১২শ’ টাকা। সরকারও এক মণের দাম নির্ধারণ করেছে একই।
তাহলে আমার কি লাভ হলো? তার কথা যুক্তিযুক্ত। কারণ, শ্রম-ঘাম এবং অর্থ খরচ করে যে ধান উৎপাদন সে করেছে, সেই একই দামে যদি বিক্রি করতে হয়, তাহলে সেটা তার জন্য অত্যন্ত হতাশার। শুধু এই কৃষকেরই হতাশা নয়, ন্যায্যমূল্য না পাওয়া নিয়ে অন্যান্য কৃষকেরও হতাশা রয়েছে।
বলার অপেক্ষা রাখে না, কৃষক যদি হতাশ হয়ে পড়ে, তবে ফসল উৎপাদনে তার আগ্রহে ভাটা পড়া স্বাভাবিক।
খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার যে কথা বলা হয়, তার সিংহভাগ কৃতিত্ব দেশের কৃষকদের। তাদের স্বপ্রণোদিত উদ্যোগ এবং আগ্রহেই দেশে ফসল উৎপাদিত হয়।
তারা শুধু প্রচলিত শস্যই উৎপাদন করে না, ব্যাপক আগ্রহ নিয়ে অন্যান্য অপ্রচলিত শস্য, ফলমূল, শাক-সবজিও উৎপাদন করে। স্ট্রবেরি, ড্রাগন, আঙ্গুর থেকে শুরু করে অন্যান্য ফল যা আমাদের দেশে সাধারণত উৎপাদিত হয় না, তা তারা সাফল্যের সাথে উৎপাদন করছে।
রবিশস্য থেকে শুরু করে কৃষিজাত যত ধরনের পণ্য রয়েছে, সেসব উৎপাদনে নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এ কারণেই, করোনা পরবর্তী এবং ইউক্রেন যুদ্ধে সারাবিশ্বে খাদ্যপণ্যের যে সংকটের কথা বলা হচ্ছে, দেশে তার প্রভাব খুব কমই পড়েছে। এর মূল কারণ, আমাদের কৃষকদের ফসল ফলানোর অদম্য ইচ্ছা ও আগ্রহ।
এক্ষেত্রে সরকারের ভূমিকা কিছুটা থাকলেও কৃষকদের ইচ্ছাটাই ফসল উৎপাদন বাড়িয়ে দিচ্ছে। অবশ্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খাদ্য সংকট যাতে না হয়, সেজন্য দেশের প্রতি ইঞ্চি জায়গায় আবাদ করার জন্য বারবার আহ্বান জানিয়েছেন। তাঁর এ কথাও কৃষকদের উদ্ভুদ্ধ করেছে। দুঃখের বিষয়, দেশে খাদ্যে স্বয়ংভর করতে যে কৃষক শ্রম ও অর্থ বিনিয়োগ করে ফসল ফলায়, সে ফসলের ন্যায্যমূল্য পায় না। অনেক সময় তার উৎপাদন খরচও উঠে না। সরকার দাম নির্ধারণ করে দিলেও সে দাম পায় না।
ইতিমধ্যে অভিযোগ উঠেছে, সরকার বোরো ধানের মণপ্রতি যে দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে, এক শ্রেণীর মধ্যসত্ত্বভোগী তার চেয়ে কমে কৃষকদের ধান বিক্রি করতে বাধ্য করছে। বলা বাহুল্য, এই মধ্যসত্ত্বভোগীদের কারণে যুগের পর যুগ কৃষক ও ভোক্তারা ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছে। এদের কিছুতেই দমানো যায় না। অনেক সময় এর প্রতিবাদে কৃষকরা উৎপাদিত ফসল রাস্তায় ফেলে দেয়। এ চিত্র নিয়মিত হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাদের এ প্রতিবাদে খুব একটা লাভ হয় না। হতাশ হয়েই থাকতে হয়। আফসোস এবং আশা নিয়ে তারা পুনরায় ফসল ফলায়।
দেশের খাদ্য সংকট নিরসনে ভূমিকা পালন করে।
করোনার অভিঘাতে দেশের শিল্পকারখানা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়। অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। অসংখ্য প্রতিষ্ঠানে উৎপাদন ব্যাহত, রফতানি কমে যাওয়া থেকে শুরু করে খরচ কমাতে কর্মী ছাঁটাই হয়। গার্মেন্ট থেকে শুরু করে বিভিন্ন শিল্পখাতে সরকার প্রণোদনার ব্যবস্থা করে সহায়তা করেছে।
কৃষিখাতে প্রণোদনা দিলেও শিল্পখাতের তুলনায় তা ছিল খুবই অপ্রতুল।
খাদ্যের যোগান ঠিক রাখার জন্য কৃষক স্বেচ্ছায় ফসল ফলিয়েছে। এটা তাদের চিরায়ত স্বপ্রণোদিত কাজ। কৃষকদেরই সবচেয়ে বেশি কদর ও সহায়তা পাওয়ার কথা। তারা সেটা খুব কমই পাচ্ছে। তাদের চাওয়া একটাই, উৎপাদিত ফসলের ন্যায্যমূল্য। এটা নিশ্চিত করতে পারলেই তারা খুশি। তারা খুশি হতে পারে না।
সরকারের উচিত কৃষকের এই খুশি এবং ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি অব্যাহত রাখতে ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা। দেশকে খাদ্যসঙ্কটমুক্ত রাখতেই তা করতে হবে। কৃষক যাতে লাভবান হয়, তার উপযুক্ত ও ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে হবে। এক্ষেত্রে, সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি ফসল কিনতে হবে।