Hot Widget

Type Here to Get Search Results !

Advt 720

সমাজ-চেতনা ছিল তার মননে। মানুষের সামাজিক শ্রেণিবিন্যাসের মূল্যায়ন ও মূল্যবোধ নিয়ে কাজ করে যাচ্ছিলেন তিনি

বিভিন্ন মঞ্চে বাবাজী মহারাজের দেওয়া ভাষণ বা আশ্রমের সান্ধ্য প্রবচন বা অসম বা এই রাজ্যের নানা জায়গায় বাবাজী যে সমস্ত বক্তব্য রেখেছেন, সেগুলি যদি ভালোভাবে শোনেন, তাহলে বুঝতে পারবেন, তার মূল লক্ষ্য কী ছিল। 
তার বক্তব্যে বারে বারে উঠে এসেছে ব্যক্তি-মূল্যবোধ, সামাজিক মূল্যবোধ আর সামাজিক অবক্ষয়ের কথা। সোজা ভাষায় বলতে গেলে বলা যেতে পারে, সমাজ চেতনা। আর এই সমাজ চেতনার প্রথম অঙ্কুরটি মাথা চাড়া দেয় একেবারে বালক অবস্থাতে।
নানা ধরণের ঘটনা, বিদ্যালয় জীবনের অভিজ্ঞতা, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা অভিজ্ঞতা তাকে এই সমাজ সম্পর্কে নানা অভিজ্ঞতা প্রদান করে। পাশাপাশি, তার শ্রীগুরুদেব তাকে এমন কিছু কর্তব্য করার দায়িত্ব দিয়ে যান, যা একেবারেই এই সমাজ-কেন্দ্রিক। 
স্বভাবতইঃ বাবাজী মহারাজের জীবনের অধিকাংশ সময় ব্যয়িত হয়েছে সমাজের মঙ্গল সাধন ও সেই মঙ্গল সাধনের পথ খুঁজে বের করায়। এই সমাজের বুকে নানা ঘটনা, পুজোকে কেন্দ্র করে উশৃঙ্খলতা, মানুষের প্রেম ও অপ্রেম, দেব-দেবীর ‘ভর’ নামক কুসংষ্কার, মানুষের লোভ-লালসা ও তার পরিণাম, একশ্রেণির সাধুদের জীবন-যাপন – সবকিছুই ছিল তার নজরে।
 তিনি এ নিয়ে অনেক কথা বলেছেন। এই ধরণের অনিয়ম, স্বেচ্ছাচার থেকে বেরিয়ে আসার পথ বা উপায় বলেছেন। নিজেও ভেবেছেন, এই সামাজিক অবক্ষয়ের সঠিক উৎস কি, তা নিয়ে। তাই আমাদের বাবাজী মহারাজ এই পৃথিবীতে নিছক একজন ধর্মীয় গুরু হিসাবে আসেন নি।
আশ্রমে বসে জ্ঞান বিতরণ, কিংবা শিষ্য বাড়ি ঘোরা কিংবা পুজো-পাঠের মধ্যে তার স্বল্পকালীন জীবন সীমাবদ্ধ ছিল না। তিনি এই সমাজকে এমন কিছু দিতে এসেছিলেন, যাতে, ভারতীয় সমাজ ও সনাতন ধর্ম কুসংষ্কার ছেড়ে এগিয়ে যেতে পারে। বিশ্বে এই সনাতন ধর্ম হয়ে উঠতে পারে এক উল্লেখযোগ্য ধর্ম হিসাবে। 
মানুষের হানাহানি তাকে ব্যথিত করেছে বার বার, স্বামী-স্ত্রী সম্পর্কের মধ্যে অধঃপতন, তাকে ভাবিয়েছে। তিনি তার প্রবচনে বার বার সাবধান করেছেন, বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্ক নিয়ে, এর পরিণাম নিয়ে। বে-আইনি পথে অর্থ উপার্জন, জাত-পাতের লড়াই নিয়েও সরব হয়েছেন বারংবার। একশ্রেণির সাধুদের ত্যাগী জীবন ও ভোগের জীবনকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন। বুঝিয়ে দিয়েছেন, সাধু কাকে বলে, সাধুদের সঠিক পথ ও কর্ম কী। 
দূর্ভাগ্যের বিষয়, আমরা বুঝিনি। নিজেরাই পাপ করছি, আর মুক্তির উপায় জানতে ছুটছি মন্দিরে, জ্যোতিষির কাছে, কিংবা গুরুর কাছে। একবারো ভেবে দেখছি না, ‘য্যায়সি করনি, ত্যায়সি ভরনি’।

 নীচের বইএর ছবিতে ক্লিক করে সরাসরি প্রকাশকের কাছ থেকে বইটি সংগ্রহ করতে পারেন। 


বাবাজী জানতেন, ভারতের সাধু সমাজের একটা বিরাট দায়িত্ব আছে সমাজের প্রতি। তারা যদি সমাজ সম্পর্কে উদাসীন থাকেন, তাহলে এই সমাজ একসময় নানা অনাচার আর পাপে পূর্ণ হয়ে উঠবে। তিনি, তাই জগত ও ঈশ্বরকে সমানভাবে দেখেছেন। অর্জিত জ্ঞান ও ধর্মের সাহায্যে কীভাবে মানুষের অন্তর ও বাহিরিকে পরিষ্কার করা যায়, সেই কথা শুধু ভাবেন নি, কাজেও তা করে যাচ্ছিলেন। 
বহু কাজ তিনি করেছেন সবার অগোচরে। তার মূল লক্ষ্য ছিল সমাজ। তার গবেষণার বিষয় ছিল সমাজ। আর এই সমাজ নিয়ে গবেষণা, ভাবনা ও নতুন চিন্তার বিষয়ে পথ-প্রদর্শক ছিলেন শ্রীজানকীদাসজী। তিনি বাবাজী মহারাজের গবেষণার বিষয় নির্বাচন করে দিয়েছিলেন। 
মার্ক্সের চিন্তাধারা ও তার সঙ্গে নিম্বার্কীয় চিন্তাধারার মিশ্রনে এই সমাজের খোল-নলচে পালটে দেওয়া যেতে পারে বলে, তিনি মনে করতেন। মার্ক্স ও নিম্বার্ক মতবাদ গড়ে উঠেছিল বাস্তবের মাটিতে দাঁড়িয়েই। আধ্যাত্মিক সমাজতত্ববিদ নিম্বার্ক এর পরামর্শ ছিল সমাজের ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তির মধ্যে সমতা উপলব্ধির মাধ্যমে সমাজকে পরিবর্তন করা। মার্ক্স ও নিম্বার্ক উভয়েরই ভাবনার ভিত্তিভূমি ছিল মানবিকতা।
বাবাজী মহারাজ বলেছেন, বর্তমান সমাজের একটা শ্রেণি, দূর্বল আর একটা শ্রেণিকে ‘এক্সপ্লয়েট’ করে। একটা শ্রেণি আর একটা শ্রেণিকে শোষণ করে অধিক পেতে চায়। এর ফলে, সমাজে সৃষ্টি হয় শোষণ ও বঞ্চনার একটা ধারাবাহিকতা। 
মার্ক্স ও নিম্বার্ক তাই চেয়েছিলেন এমন একটা শ্রেণিহীন সমাজ যেখানে একটা শ্রেণির সমৃদ্ধি, অন্য শ্রেণির উন্নতির পথে বাধা হবে না। তিনি বলছেন, ভারতের আধ্যাত্মিক সমাজবিদদের একটা বড়ো অংশ চিরন্তন সত্য, ঈশ্বর ও জ্ঞানের পিছনে দৌড়ান, পিছনে পড়ে থাকে মানুষের প্রাথমিক চাহিদাগুলো, উপেক্ষিত হয় বেচে থাকার উপকরণ সংগ্রহের প্রচেষ্টা। যার পরিণতিতে, আধ্যাত্মিকতা এখানে সাধারণ মানুষের জীবনে খুব একটা সফল হয় না। তাদের অন্তরকে সেইভাবে জাগাতে পারে না। 



অন্যদিকে মার্ক্সের কমিউনিজম মানুষের কিছু ‘বেসিক চাহিদা’ পূরণ করতে পারলেও, দিনের শেষ সব চাহিদা পূরণ করতে ব্যর্থ। শিল্পের উন্নতি সমাজ-জীবনকে প্রভাবিত করে, উন্নতি ঘটাতে পারে মানুষের সামাজিক অবস্থানের। যতক্ষণ না মানুষের আধ্যাত্মিক উন্নতি ঘটে এবং তাকে সীমাবদ্ধতার ঊর্ধ্বে নিয়ে যাওয়া যায়, ততক্ষণ সম বণ্টনের স্বপ্নকে জীবনের মধ্যে আনা যাবে না । 

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

Top Post Ad

Below Post Ad

Hollywood Movies