বাবাজী মহারাজের জীবনের মূলমন্ত্র ছিল – ‘পরের জন্য বাঁচা’ আর ‘আপনি আচরি ধর্ম, অপরে শেখাও’।


তারক ঘোষ

 সমাজ ও ধর্ম-সংষ্কারককে নানা বিপদের সম্মুখীন হতে হয়, বা হয়েছিল শ্রীচৈতন্যদেব বা যীশুখ্রীস্ট এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ শুধু তাই নয়, নতুন ধারণা সমাজে প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে বহু দার্শনিক, বিজ্ঞানীকে প্রাণ দিতে হয়েছে কিন্তু, পরে জানা গেছে, তারাই ঠিক ছিলেন, আর যারা তাদের প্রাণ নিয়েছিলেন, তারা ভুল ছিলেন, তারা নিজেদের কর্তৃত্ব হারাবার ভয় পেয়েছিলেন তাই তাদের কণ্ঠস্বর বন্ধ করার ব্যবস্থা করা হয়েছিল

 





 পনারা হয়তো লক্ষ্য করেছেন যারা সমাজ বা ধর্ম সংষ্কারের পথে চলেন, তাদের জীবনটা কিন্তু সহজ হয় না তাদের জীবনে প্রতি মুহুর্তে বাধা আসে সেই বাধাকে অতিক্রম করে এগিয়ে যেতে হয় কুসংষ্কার  এমন একটা বিষয়, যা মানুষের মনে গভীরভাবে গেঁথে থাকে এত গভীরে এর মূলটা থাকে যে টেনে উৎপাটন করা সম্ভব হয় না আর যারা এই ধর্মীয় কুসংষ্কারের মূলকে তুলে ফেলতে চান, কিংবা তার একটা বিজ্ঞানসমত ব্যাখ্যা দিয়ে এর প্রয়োজনীয়তা বা অপ্রয়োজনীয়তাকে তুলে ধরার চেষ্টা করেন, তারা কিন্তু পরোক্ষে অনেকের শত্রু হয়ে যান

কারণ, সমাজ এখনো নতুন ধারণাকে নেওয়ার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত হয়নিএটা সত্য নয় আসল সত্য হলো, এর পিছনে থাকে ভিন্ন একটা উদ্দেশ্য তাই সমাজ ও ধর্ম-সংষ্কারককে নানা বিপদের সম্মুখীন হতে হয়, বা হয়েছিল শ্রীচৈতন্যদেব বা যীশুখ্রীস্ট এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ শুধু তাই নয়, নতুন ধারণা সমাজে প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে বহু দার্শনিক, বিজ্ঞানীকে প্রাণ দিতে হয়েছে কিন্তু, পরে জানা গেছে, তারাই ঠিক ছিলেন, আর যারা তাদের প্রাণ নিয়েছিলেন, তারা ভুল ছিলেন, তারা নিজেদের কর্তৃত্ব হারাবার ভয় পেয়েছিলেন তাই তাদের কণ্ঠস্বর বন্ধ করার ব্যবস্থা করা হয়েছিল




বাবাজী মহারাজ এক প্রসঙ্গে বলেছেন, বৈদিক যুগে সংসার জীবন সন্ন্যাস জীবন সমগোত্রীয় বলে গণ্য হতোএই দুটির মধ্যে কোন একটি অপরটি থেকে উচ্চতরএরকম ভাবা হতো নাগৃহস্থ জীবনও সন্ন্যাস জীবনের মতোই তাৎপর্য্যপূর্ণ।“

 

কিন্তু, এরা মৃত্যুর ভয়ে কণ্ঠস্বরককে লুকিয়ে ফেলেন নি ছড়িয়ে দিয়ে গেছেন সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে সেখান থেকে তৈরি হয়েছে মহীরূহ আমাদের এখন সেই মহীরূহরূপ সত্যের ছায়ায় নিশিন্তে আছি

এই প্রসঙ্গে বলি, বাবাজীর জীবনের মূলমন্ত্র ছিল – ‘পরের জন্য বাঁচাআরআপনি আচরি ধর্ম, অপরে শেখাও অসাধারণ শক্তিশালী এই বাক্যগুলো যারা এই বাক্যগুলির অন্তরালে মূল সত্যটাকে বুঝতে পারেন, তারা বুঝবেন বাবাজী কেন এসেছিলেন কী করতে চেয়েছিলেন

যারা চেনবার তারা ঠিক চিনেছিলেন বাবাজী আর দাদাগুরুজী মহারাজকে যারা চিনতে পারেন নিতাদের চিনতে দেন নি তারা লক্ষ্য করে দেখবেন, একেবারে শৈশব থেকেই এনারা সাধারণের চেয়ে অনেক আলাদা ছিলেন যেমন শ্রীরামকৃষ্ণদেব বাবাজী মহারাজের লেখা থেকে জানতে পারি জানকীদাসজী ছোটবেলা থেকেই ছিলেন ভীষণ নির্জনতা প্রিয় 

অন্য ছেলেরা যখন খেলা-ধূলায় মত্ত থাকত, দাদাজী মহারাজ তখন একান্তে কৃষ্ণ পুজো করতেন বাড়ির কাছে জঙ্গলের মধ্যে কিছুটা জায়গা পরিষ্কার করে সেখানে ভগবান কৃষ্ণের ফটো বসিয়ে পুজো করতেন বনফুল তুলে, মালা গেথে বনমালীকে পরাতেন কোন জায়গায় সাধু-সন্ন্যাসী এসেছেন শুনলে সেখানে হাজির হতেন ছোটবেলা থেকেই বৈরাগ্য তাকে আশ্রয় করেছিল তাই তিনি খুঁজে বেড়াতেন এমন সন্ন্যাসী যিনি এই পৃথিবীর বস্তুতে লালায়িত নন আর সেই গুণটাই বাবাজী মহারাজ পেয়েছিলেন শ্রীজানকীদাসজীর কাছ থেকে




কিন্তু, অদ্ভুত বিষয় হলোএনারা শিক্ষাকে কোনদিন অগ্রাহ্য করেন নি শিক্ষার সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছানোর চেষ্টা করে গেছেন কারণ, যারা সমাজ সংষ্কারের উদ্দেশ্য নিয়ে এই ধরণীতে আসেন, তাদের সঠিক শিক্ষা না থাকলে তো চলে না

ডক্টর প্রজ্ঞাদাস কাঠিয়া মহারাজ অর্থাৎ বাবাজী মহারাজের কথা যারা শুনেছেন, তারা সকলেই জানেন বাবাজী মহারাজ বারবার সংসারের বিষয়ে কথা বলতেন, সমাজের নানা বিষয় তুলে আনতেন তার প্রবচনে এমনকি গীতা বা ভাগবত ব্যাখ্যা করার সময়ও উদাহরণ হিসাবে তুলে আনতেন সাম্প্রতিক নানা ঘটনা, অভিজ্ঞতার কথা আর সে সবের মধ্যে থাকত সমাজ-সংসারের কথাও তিনি বলতেন, এই সমাজকে ভালো রাখার দায় সাধুদেরও তারা তাদের জ্ঞানকে কাজে লাগাক এই সমাজের নানা দূষণকে দূর করার জন্য বলতেন বৈদিক যুগের সমাজ-ব্যবস্থা সম্পর্কে কিন্তু কী ছিল ঋকবেদের যুগের সমাজ-ব্যবস্থা সেই ব্যবস্থা কী এই যুগে আবার প্রচলনা করা সম্ভব?




সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে অনেক কিছু বদলে যায় সাংসারিক কাঠামো, সামাজিক বিন্যাস কিন্তু যেটা বদলানো উচিত নয় বলে বাবাজী মহারাজ মনে করতেন, তা হলো মূল্যবোধ প্রাচীন মতবাদ, যা বর্তমান সময়ের উপযুক্ত নয়, সেগুলির বদল ক্ষেত্রবিশেষে সম্ভব সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সমাজে আধুনিকতার প্রবেশ ঘটে, কিন্তু আধুনিকতার নামে মূল্যবোধ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখার কথা বলতেন


আরো পড়ুনঃ  বাবাজী মহারাজের সঙ্গে অন্য সন্ন্যাসীর পার্থক্য – তিনি শুধু একজন সাধু, দার্শনিক বা সমাজ-সংষ্কারক নন, তিনি এক নতুন মতবাদের প্রবক্তা। - SANGBAD VOICE 9 English News, Latest News


প্রাচীন ভারতে সমাজের ভিত্তি ছিল পরিবারআর সমাজ ছিল পিতৃতান্ত্রিকঅর্থাৎ পুরুষরা বা পিতা ছিলেন পরিবারের প্রধানঅবশ্য মাতাও সন্মান ও মর্যাদার অধিকারিণী ছিলেনপ্রাচীন ভারতে পরিবার ছিল যৌথমাতা, পিতা, পুত্র, পুত্রবধূ ও অন্যান্য সবাই একত্রে বসবাস করতকৌটিল্য সমাজের উচ্চ তিন শ্রেণির মানুষের জীবনে ব্রহ্মচর্য, গার্হস্থ্য, ভিক্ষা ও সন্ন্যাসএই চারটি আশ্রমের কথা বলেছেনআর্যদের চতুরাশ্রম প্রথা তখনও প্রচলিত ছিলপ্রথম পর্যায়ে গুরুগৃহে অধ্যায়ন ও চরিত্র গঠন, দ্বিতীয় পর্যায়ে সংসার ধর্ম পালন, তৃতীয় পর্বে সংসার ত্যাগ করে একাকী স্ত্রীসহ অরণ্যে ঈশ্বর চিন্তায় দিন যাপন ও সবশেষে চতুর্থ পর্যায়ে সর্বস্ব ত্যাগ করে ভিক্ষার উপর নির্ভর করে একাকী ঈশ্বর চিন্তায় জীবন যাপনতিনি ভিক্ষা বলতে বানপ্রস্থকে বুঝিয়েছিলেনতবে মৌর্য যুগে উচ্চবর্ণের সবাই শেষ দুটি পর্যায় আদৌ পালন করতেন কিনা, তা বলা কঠিনসাধারণ মানুষ যাতে ন্যায়-নীতি মেনে চলে, সত্যনিষ্ঠ হয়, সৎ গুণের অধিকারী হয়, তার ওপর বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হত




      বইটি কিনতে উপরের ছবিটিতে ক্লিক করুন। সরাসরি প্রকাশকের কাছ থেকে পেয়ে যাবেন 


ভারতীয় সমাজব্যবস্থায় বা সংসারে চার ধরণের আশ্রমের কথা বলা হয়েছিলএগুলি সবাই জানেন - ব্রহ্মচর্য, গার্হস্থ্য, বাণপ্রস্থ ও সন্ন্যাসডক্টর প্রজ্ঞাদাস কাঠিয়া মহারাজ অর্থাৎ বাবাজী মহারাজ প্রায়ই এই আশ্রমের কথা উল্লেখ করতেন নানা জায়গায়কিন্তু, বৈদিক যুগের এই ব্যবস্থা কি আজকের আধুনিক সমাজে প্রয়োগ করা সম্ভব? যদি সম্ভব হতো, সেটাই বা কীরকম হতো!

আমরা জটাজূটধারী সন্ন্যাসী দেখলে, তাকে নিজেদের চেয়ে অনেক উচু স্তরের বলে মনে করিবাবাজী মহারাজ এই প্রসঙ্গে বলেছেন, সেই সময় সংসার জীবন সন্ন্যাস জীবন সমগোত্রীয় বলে গণ্য হতোএই দুটির মধ্যে কোন একটি অপরটি থেকে উচ্চতরএরকম ভাবা হতো নাগৃহস্থ জীবনও সন্ন্যাস জীবনের মতোই তাৎপর্য্যপূর্ণ। 

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

Top Post Ad

Below Post Ad