Hot Widget

Type Here to Get Search Results !

Advt 720

গুরুভক্তির প্রত্যক্ষ রূপ ছিলেন বাবাজী মহারাজ। কিন্তু, তাকে কটু কথা বলতে কেউ ছাড়েন নি

 


আমরা আমাদের বাবাকে হারিয়েছি – কিন্তু ভারত হারিয়েছে একজন শ্রেষ্ঠ সমাজবিজ্ঞানী ও দার্শনিককে। বাবাকে শুধু একজন গুরু হিসাবেই প্রচার করা হয়েছে বা হচ্ছে। কিন্তু, তার যে দিকটা প্রচার হলে আমাদের দেশ ও দেশের মানুষ উপকৃত হতো, সেই দিকটা উপেক্ষিত থেকে গেছে।
মার্জনা করবেন, সত্য খুব কঠিন হয়, অনেকে সহ্য করতে পারে না।

 

তারক ঘোষ


বাবাজী মহারাজের সমস্ত জীবনটাই ব্যয় হয়েছে শিষ্য, ভক্ত ও সাধারণ মানুষের জন্য। তার অর্জিত জ্ঞান ব্যয়িত হয়েছে, মানুষকে সঠিক পথে চালনা করার জন্য ও একটা সুস্থিত, সুস্থ সমাজ গঠনের জন্য। মানব-কল্যাণে ব্রতী এই মহাপুরুষকে কেউ কিন্তু ছেড়ে কথা বলেন নি। এমনকি, তার দেহান্তের পরও তাকে নিয়ে, তার আদর্শের প্রচার নিয়ে ভক্তদের খুব একটা আগ্রহ আছে বলেও মনে হয় না। যেটুকু করা হয়, সেটা ‘গুরুদেব’ হিসাবে। ‘সমাজ-সংষ্কারক, বিজ্ঞান-মনষ্ক ও দার্শনিক’ স্বামী ডক্টর প্রজ্ঞাদাস কাঠিয়ার  আদর্শের প্রচার কোথায়? তিনি যে সমাজ ও ধর্ম সংষ্কারের কথা বারে বারে বলে গেছেন, তার সেই স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করার উদ্যোগ প্রায় চোখে পড়ে না। সকলের ক্ষমতা থাকে না, বা উপায় থাকে না। তাদের কথা বাদ দিচ্ছি, যাদের ক্ষমতা বা উপায় আছে, তারাও নিঃশ্চুপ।

 এতে একটাই অসুবিধা – সেটা হলো, বাবার জীবন কাহিনী লেখা হয়ে থাকবে সেই লেখকের  বা লেখকদের নিজস্ব ভাবনা থেকে, তাদের দৃষ্টিভঙ্গীতে। সকলের দেখার ও অভিজ্ঞতার ফসল হিসাবে নয়। এটা আমার দূর্ভাগ্য নয়, ভবিষ্যতের গবেষকদের দূর্ভাগ্য, যারা ভবিষ্যতে এই গবেষক-ঋষির ধর্মতত্ব ও সমাজতত্ব নিয়ে গবেষণা করবেন, তাদের।


কিছু ভক্ত এই দূর্লভ ছবি দিয়েছেন বলেই, আমরা দেখতে পাচ্ছি। যারা এইসমস্ত ছবি ভয়েস ৯ কে দিয়েছেন, তাদের প্রণাম জানাই।




সালটা ২০১২। নতুনগ্রামের বাবাজী মহারাজ প্রতিষ্ঠিত নতুন মন্দিরে বাবাজী মহারাজের আসনের পাশে, চেয়ার উপবিষ্ট এক ব্যক্তিকে দেখে একদিন অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। বাবাজী মহারাজের একেবারে শরীরের পাশেই চেয়ারে উপবিষ্ট সুস্থ-সবল একটা মানুষ! ঘোর সংসারী একটা মানুষ।

জানিনা, তিনি নিজেকে কোন কারণে বাবার সমকক্ষ মনে করে তার পাশেই চেয়ারে বসে থাকার অধিকার লাভ করেছিলেন।  এইরকম অনেককে দেখেছি। সেসব এখন অতীত। তবু, মনে হতো – বাবাজী মহারাজ বোধহয় মনের গভীরে কিছু একটা নিরন্তর ভেবে চলেছিলেন। কী সেই ভাবনা, আমি জানি না। যারা জানতেন, তারা নিঃশ্চুপ। আমরা বাবাকে হারিয়েছি – কিন্তু ভারত হারিয়েছে একজন শ্রেষ্ঠ সমাজবিজ্ঞানী ও দার্শনিককে। বাবাকে শুধু একজন গুরু হিসাবেই প্রচার করা হয়েছে বা হচ্ছে। কিন্তু, তার যে দিকটা প্রচার হলে আমাদের দেশ ও দেশের মানুষ উপকৃত হত, সেই দিকটা উপেক্ষিত থেকে গেছে।  বাবা খুব কষ্টের সঙ্গে শেষদিকে বলতেন – কী হবে আর বলে? সবাই শোনাউল্লা হয়েই রইল, আমি বকাউল্লা, বকেই মরছি।



বাবা কী চাইবেন, নিজের প্রচার করতে? বাবা তার গুরুরদেবের কথা প্রচার করেছেন, তার বাণী ও আদর্শ প্রচার করেছেন। এটাই তো সঠিক। মহাপুরুষরা কি নিজেদের প্রচার নিজেরা করবে?

তাহলে কাজটা কাদের? যারা শিষ্যত্ব নেবার জন্য বাবার কাছে ছুটে গিয়েছিলান, বাবা দেহে থাকতে যারা বারবার ছুটে যেতেন আশ্রমে, মন দিয়ে বাবার কথা শুনতেন, বাবাকে বাতাস করতেন, প্রার্থনায় অংশ নিতেন, গান শোনাতেন – দায়িত্ব তাদের। দায়িত্ব তাই আমাদের সকলের। আমরা যারা বাবার আশ্রিত, তাদের। 

আমাদের বাবাজী ছিলেন গুরুঅন্ত প্রাণ। শ্রীগুরু আদেশে তিনি চলতেন। তার কথাকেই জীবনের সারবস্তু বলে মনে করেছেন জীবনভর।



সদগুরুদাসজীর একটি গ্রন্থ থেকে জানতে পারি – একদিন অনেক শিষ্য-ভক্তদের সামনে দাদাগুরুজী বলেছিলেন, ‘প্রজ্ঞাদাস যেভাবে আমার সেবা করছে, কোনো সতীসাধ্বী নারীও এভাবে পতিসেবা করতে পারবে না।‘

 কী না করতেন তিনি! বৃন্দাবনের আশ্রমে গোবর কুড়িয়ে ঘুটে দেওয়া, বাসন মাজা, ঝাড়ু দেওয়া, শৌচাগার নিজের হাতে পরিষ্কার করা। বাবা তার আলস্য, মান-সম্মান বোধ ত্যাগ করে প্রকৃত বৈষ্ণব শিষ্য হয়ে উঠতে পেরেছিলেন। এখন এসব অতীত। তাই তাকেই আমি মনে করি গুরুভক্তির শ্রেষ্ঠ নিদর্শন।


এটি ডকুমেন্টারী নয়, টিজার

অথচ, দাদাগুরুজীর দেহান্তের পর আমাদের বাবাজীকে দাদাজী মহারাজের একশ্রেণির ভক্তরা তার প্রতি কটু বাক্য ও মিথ্যা অভিযোগ আনতেও পিছপা হন নি। কেউ কেউ বলেছিলেন – তিনি না কি অর্থের জন্য গুরুদেবকে গলা টিপে মেরেছেন’- এই তো তার প্রাপ্য ছিল, নইলে তিনি মহাপুরুষ হবেন কীভাবে? সবাই তো মহাপুরুষ হন না, তার জন্য শ্রম লাগেন, কিন্তু, ঐশ্বরিক যোগ্যতা লাগে। বাবাকে ঈশ্বর পাঠিয়েছিলেন শ্রীজানকীদাসজীর মতো আর এক মহামানবের কাছে, সকলের চোখ খুলে দেবার জন্য।



বাবাজীর উপর মানসিক অত্যাচার এখানেই থেমে থাকে নি। তার বিরুদ্ধে শ্রীঠাকুরজীর শালগ্রাম-শিলা চুরুর অভিযোগও আনা হয়েছিল। কিন্তু, সেই শালগ্রাম-শিলা পাওয়া গিয়েছিল শ্রীঠাকুরিজীর ফুল-মালার মধ্যেই। চাপা পড়ে গিয়েছিল। আর তার গুরুদেব শ্রীজানকীদাসজীকেও একইভাবে নানা অপমান-নিন্দা শুনতে হয়েছিল। বাবা তার প্রতিবাদ করে লিখেছেন নানা নিবন্ধে। এটাই তো শিষ্যের কাজ। গুরুর সম্মান রক্ষা করা, তার আদর্শ পালন করা। নইলে আর শিষ্য কীসের?  আর একটা কথা, বাবা তার মধ্যে গুরুভাবকে প্রাধান্য দেন নি, তার শিষ্যভাবকেই প্রাধান্য দিয়ে গেছেন। তাই তার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষককে সাষ্টাঙ্গে প্রণাম করতেন। আর আজ, এমন কিছু ভিডিও চোখে পড়েছে, যা দেখলে লজ্জায় মাথা নত হয়ে যায়। সেই ভিডিও শুধু সম্মানের কারণেই আমি মিডিয়ায় প্রকাশ করতে পারিনি। বাবা থাকলে এসব হতো???????

শ্রীবাবাজী মহারাজ লিখছেন, “ভক্তের নির্বিচার ভাবের সুযোগ লইয়া অনেক সাধারণ মানুষ, নারী্পুরুষ গুরু সাজিয়া বসিয়াছেন। এবং শিষ্য ইহাদের পাল্লায় পরিয়া সর্বনাশপ্রাপ্ত হন। এই প্রসঙ্গে শাস্ত্রে বলা আছে –‘শিষ্যের সন্তাপ অপহারক গুরুর সংখ্যা খুবই কম, কিন্তু বিত্ত মানে অর্থ-সম্পদ অপহারক গুরুর সংখ্যা অনেক।‘” 

স্বামী জানকীদাসজী তাই বাবাজী মহারাজকে বলতেন, “দেখ, তোকে যে এত লেখাপড়া শেখাচ্ছি, সেটা কিন্তু তোর নিজের জন্য নয়। তোর গুরুভাই এবং আগামি দিনের ভক্ত-শিষ্যদের সৎ পথে পরিচালিত করার জন্য। তাদের ভার তোকেই বহন করতে হবে। তোকে অনেক শক্তি সঞ্চয় করতে হবে। 

বুঝতে পারছেন পাঠকগণ, বাবাজী কেন উচ্চশিক্ষিত ডক্টরেট হয়েও, সেই শিক্ষাকে নিজের উন্নতি জন্য কাজে লাগান নি? 


দাদাজী মহারাজ বাবাজীকে শ্রীকৃষ্ণের গীতার বাণী শোনাতেন
 

আমবিশ্য চ ভূতানি ধারয়াম্য হমোজসা। 

বাংলায় যার অর্থ হয় এই পৃথিবী অতি কঠিন এক জায়গা, এখানে দুর্বলের কোন স্থান নেই। দাদাজী মহারাজ তাই বলতেন, “তোর আগামি দিনের লক্ষ্য হবে আত্মিকভাবে দুর্বল মানুষকে শক্তি যোগানো। রক্ষা করতে হবে নিম্বার্ক সম্প্রদায়ের ধারা।

শ্রীজানকীদাসজী বললেন –‘তোর নিজের কোন পৃথক ইচ্ছা রাখিস না। আমি যেমন চালাব, তেমন চলবি। আমার উপর সব ছেড়ে দে

 বাবাজী সেইদিন ওই সন্ন্যাসীকে বলেছিলেন – ‘বাবা আজ থেকে আমার এই জীবন আপনার শ্রীচরণে রইল। আপনি যা বলবেন, আমি তাই করব। 

 বাবাজী তার জীবনভর সেটাই করেছিলেন। তার নিজের ইচ্ছা রাখেন নি। 

আগামীকাল

Post a Comment

1 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.
Anonymous said…
শ্রীশ্রী বাবাজী মহারাজের প্রত্যেক শিষ্যকেই অপমান সহ্য করতে হয়েছিল । শ্রীশ্রী অমরদাসজী মহারাজকেও বাবাজী মহারাজ থাকাকালীন সোনার বালা চুরির অপবাদ দেয়া হয়েছিল । গোষ্ঠীদ্বন্দের শিকার হয়েছিলেন, শ্রীশ্রী গুরুদেব জানকীদাস কাঠিয়াবাবা মহারাজ শ্রী অমরদাসজী মহারাজকে বলেছিলেন, তোর কাছে যা আছে, আমায় দিয়ে তুই সাধনার জন্য দূরে কোথাও চলে যা ।

রাত দুটোর সময় অমরদাসজী মহারাজ একটা টর্চ হাতে বড়র আশ্রম ত্যাগ করেছিলেন । তারপর তাঁর অভিজ্ঞতায় তিনি সর্বত্র গুরুদেব শ্রীশ্রী জানকীদাস কাঠিয়াবাবা মহারাজের কৃপা ভালোবাসা আশীর্বাদ প্রত্যক্ষ করেছিলেন ।

অপমান না এলে শিষ্যকে সাধন উপযুক্ত করা যায় না । সকল গুরু আচার্য্য তাদের শিষ্যদের অপমানের দ্বারাই শুদ্ধ করেন ।

শ্রীশ্রী সন্তদাস মহারাজ শ্রীশ্রী ধনঞ্জয়দাস দাদাজীকে, শ্রীশ্রী দাদাজী গুরুদেব শ্রীশ্রী জানকীদাসজীকে, গুরুদেব ওনার শিষ্যদের বিশেষ করে যাদের সম্পর্কে জানি, অমরদাসজী, প্রজ্ঞাদাসজী, কৃষ্ণপ্রেমদাসজিকে অপমান ও লাঞ্ছনা দিয়েই তারপর সাধনার জন্য অন্তরে অনুপ্রেরণা দিয়েছেন ।

জীবনের অন্তিম সময়েও সিদ্ধ মহাপুরুষ হওয়া সত্ত্বেও শ্রীশ্রী অমরদাসজী মহারাজ বিভিন্ন ভক্ত-শিষ্যদের দ্বারা অপমানিত হয়েও মুখ বুজে শ্রীশ্রী ঠাকুরজীর অন্তিম পরীক্ষার চরম পরাকাষ্ঠাকে অতিক্রম করেছেন, একটি লীলার মাধ্যমে শ্রীশ্রী মধুমঙ্গলদাস কাঠিয়াবাবা কাকাজী মহারাজ এই ব্যাপারটি আমাকে অবগত করেন ।

শ্রীশ্রী প্রজ্ঞাদাসজী মহারাজ, উনার এক লেখনীতে লিখেছিলেন, শিষ্য ও ভক্তদের জন্য যে..... হে ঈশ্বর আরও অপমান, লাঞ্ছনা দাও, ভোগাও.... যাতে আমার কর্মফল ক্ষয় হয়ে যায় । ( যা আমরা প্রারব্ধ, ক্রিয়মান বলে জানি )। তাই সাধারণ সংসারী ব্যক্তিদের চোখে যা পর্বত প্রমাণ বলে মনে হয়, সাধক, ভোজনানন্দ বিশেষ পুরুষদের তাহাই আলিঙ্গন করার মানসিকতা জন্মায় ।

২০২১--২০২২ নাগাদ বেশ কিছু সাধু, শিষ্য ভক্তদের দ্বারা শ্রীশ্রী অমরদাস কাঠিয়াবাবা মহারাজকে কটু, তিক্ত কথা এমনকি তার সাধুসমাজেও অপমানিত করার অপপ্রচার, অপপ্রয়াস করতে বিভিন্ন প্রকারের চেষ্টা করেছেন অনেকেই ।

একদিন কথা প্রসঙ্গে আমি এই অপমান নিয়ে যখন আমার মানসিক বিদ্ধস্থতার অবস্থা শ্রী অমরদাস মহারাজকে বললাম, উনি দৃঢ়তা নিয়ে আমায় বললেন, "যে যা করছে, করুক,.... আমি ঠিক আছি, আমার অপমান হচ্ছে না । সব গুরুদেব করবেন...। তুমি নির্লিপ্ত থাকার চেষ্টা করবে ।

এরপর একদিন রাত ৮ টা নাগাদ শ্রীশ্রী অমরদাস কাঠিয়াবাবা মহারাজের সাথে আমার কথা বলার সময়, শ্রীশ্রী গুরুদেব দ্বারা প্রদত্ত একটি বিশেষ....... সাধন জীবনের বিশেষ জ্ঞান ও বলা যায় ত্যাগের মন্ত্র আমাকে শিখিয়ে দেন । সেই সময় মহারাজজীর পাশে সম্ভবত জয়রামদাসজী ছিলেন ।

তাই সকল মহাপুরুষদের বাণী, আশীর্বানী, উপদেশ, জীবনচর্যা আমাদের এটাই শিক্ষা দেয় । জীবন যদি সমাজের গড্ডালিকা প্রবাহে ভাসিয়ে দাও তাহলে তোমার ওপর তেমন কোনো প্রতিকূলতা আসবে না । কিন্তু নদীর জোয়ার এর বিপরীতে সাঁতার কাটতে যেমন বেগ পেতে হয়, ঠিক তেমনই ভগবানের মায়ার বাঁধন ছিন্ন করে তাঁকে পাবার চেষ্টা করলে, সেই একই রকম বেগ পেতে হবে । এটাই সাধন জগতের নিয়ম । আর এটাই আমরাও শিখেছি বা শিখছি শ্রীশ্রী গুরু পরম্পরা বিভিন্ন আচার্য্যদের জীবন মূল্যায়ন থেকে ।

Top Post Ad

Below Post Ad

Hollywood Movies