Breaking News

6/trending/recent
সংবাদ ভয়েস ৯ বাংলাদেশ, ত্রিপুরা, পশ্চিমবঙ্গ ও অনাবাসী বাঙ্গালীদের প্রিয় নিউজ পোর্টাল হোয়াটসঅ্যাপ +৯১-৮৯২৭০৪২৫৯৪ সম্পাদক : তারক ঘোষ

Hot Widget

Type Here to Get Search Results !

এতটা পথ যখন, সাধন করলি, জীবনের বাকি দিনগুলো করে যা, কী হবে, ছেড়ে দিয়ে? রাত তো শেষ হবার পথে

 



তারক ঘোষ

দাদাগুরুজী মহারাজের  এই ছবিগুলি  এক ভক্ত-শিষ্যের পাঠানো


সঠিক জীবন গড়তে তিনি তিনটি বিষয়ের উপর গুরুত্ব দিতে বলেছিলেন প্রথমটি হলো সংযম, সংযম অভ্যাস করতে পারলে মানুষ পাপের পথে এগোতে পারে না দ্বিতীয়টি হলো কর্ম কেননা কর্মই মানুষকে জ্ঞানের পথে এগিয়ে নিয়ে যায় আর শেষটি হলো লক্ষ্য স্থির করা লক্ষ্য স্থির না হলে সংসার জীবন বা ধর্মীয় জীবন পথচ্যূত হয় আর ব্যাপারে পিছুটান যেন বাধা হতে না পারে, সে ব্যাপারেও বাবাজী মহারাজ লক্ষ্য রাখতে বলেছিলেন উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেছেন, নোঙ্গরে আটকে থাকা নৌকো কোনদিনই দাঁড় বেয়ে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায় না যেখানে প্রথমে ছিল, সেখানেই থেকে যায় সেই রকম অন্য কোন বিষয়ে আসক্ত হয়ে যে যত কাজই করুক না কেন, সেই কাজ কোন ফল দিতে পারে না জীবনকে অসত্য থেকে সত্যের দিকে নিয়ে যেতে হবে কর্ম পরিত্যাগ না করে, সৎ কর্মের দিকে নিজের ভাবনা কাজের অভিমুখ ঠিক করতে হবে




বাবাজী বলতেন, এখন বহু সংসারেই ছেলে বৌমার সঙ্গে বৃদ্ধ-বৃদ্ধা বাবা-মার মিল থাকে না অনেক যুবক সন্তানরা তাদের বৃদ্ধ বাবা-মাকে সেই সম্মান দেয় না তাদের যে একটা ইচ্ছা আছে, সেটাও মনে রাখে না। একটা প্রশ্ন বারবার করলে, রেগে যায় কটূকথা শুনিয়ে দেয় অথচ, তারা ভুলে যায়, তারা যখন ছোট ছিল, হাজারটা প্রশ্ন করে যেত বাবা-মাকে তারা হাসিমুখে সেই সব প্রশ্নের উত্তর দিতেন

বাবা, ওটা কী?

বাবা বলতেন, ওটা একটা গরু

ছেলে বলত, বাবা, এটা কী? বাবা বলতেন, এটা ছাগল ছেলে আবার গরুকে দেখিয়ে জিজ্ঞাসা করত, বাবা , এটা কী? বাবা রাগ না করে না করে বলতেন, ওটা গরু

আমার মনে হয়, মানুষের নানা কর্ম তাদের ভবিষ্যৎ ভাগ্য নির্ধারণ করে দেয়। কেউ যদি তাদের সন্তানকে টাকা উপার্জনের একটা মেশিনে পরিণত করার শিক্ষা দিতে থাকেন, তার কাছ থেকে ভবিষ্যতে খুব একটাভালো ফল আশা করা যায় কি? আমি যদি আমার বাবা-মা কে সম্মান না করি, পুত্রবধূ যদি তার সন্তানদের দাদু, ঠাকুমাকে সম্মান করা, ভালোবাসার শিক্ষা না দিতে পারেন, তাহলে তারা কী শিক্ষা পাবে? ভবিষ্যতে কি তারা সেই শিক্ষাটাইফেরত দেবে না? 




আসলে, কেউ যদি আশা করে যে কোন কাজ করেন, তাহলে, ভবিষ্যতে আশাহত হওয়ার একটা ব্যাপার থাকে, আর সেটাই বয়ে আনে দুঃখকেসন্তান মানুষ করার মধ্যে কোন আশা রাখতে নেই, পিতা-মাতার কর্তব্য তাদের মানুষ করা। ভবিষ্যতের ইনভেস্টমেন্টহিসাবে মানুষ করলেই বিপদ। সেই আশা পূরণ না হলেই, আসে অশান্তি। সবাই এক নয় জানি, তবে, যে মানুষ ফলের আশা না রেখে কর্ম করেন, তার জীবনে অশান্তি খুব কম। কেননা, তার কোন চাওয়া থাকে না। বাবাজী বলতেন, এই সংসারে ৪ ধরণের ভক্ত আছে। যেমন, কেউ বিপদে পড়ে ডাকে। তারা হলেন আর্ত ভক্ত। কেউ অর্থের জন্য ডাকে, তারা অর্থাথি। আর আছেন জিজ্ঞাসু ভক্ত, যিনি জানতে চান আর শেষ ভক্ত হলেন যিনি ভগবানকে জানতে চান আর তার কাছে থাকতে চান। 


 

বাবাজী মহারাজ নিউটনের তৃতীয় সূত্রের কথা উল্লেখ করে বলতেনপ্রত্যেক ক্রিয়ার একটা সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া আছেতুই বাবা-মাকে প্রণাম করিস না, ধর্ম পথে চলিস না, সাধু-সন্ন্যাসী দেখলে বলিস, ভগবান নেই আরে বাবা, ভগবানকে মানিস না বলার আগে ভাব, ভগবানকে না মানার যোগ্যতাও তোর আছে কি না

আসলে, না মানার জন্যও একটা যোগ্যতা লাগে সব জিনিসকে চুম্বকে পরিণত করা যায় না চুম্বক করতে হলে লোহা লাগে, ভালো চুম্বক করতে ইস্পাত লাগে কাঠকে চুম্বকে পরিণত করা সম্ভব নয় তেমনি, ভগবানকে দর্শন করতে হলে, সেই দর্শন করার মন তৈরি করতে হয় সবাই এটা পারে না যারা পারেন, তারা সংসারে থেকেও হয়ে যান যোগীতিনি রবীন্দ্রনাথের ভাষা তুলে ধরে বলেছেন –“দুঃখের বেশে এসেছ বলে তোমায় নাহি ডরাব হে/যেথায় ব্যথা সেথায় আরও নিবিড় করিয়া ধরিব হে” –যে সর্বনাশের পরও আশা ছাড়ে না তার কাছে তিনি আসেন, ভক্তকে আলোর জগতে এনে একাত্ম করে নেন। 




বাবাজী বলতেন, এই মহাবিশ্বের রহস্য লুকিয়ে আছে মায়ের গলায় ৫১ টি মুন্ডের মালা, কিংবা ৫১ টি সতীপীঠ এর মধ্যে এই মহাকাশেও রয়েছে ৫১ লক্ষ গ্যালাক্সী বিজ্ঞানীরা জানেন, মহাভারতের ভারত জ্ঞানে-বিজ্ঞানে কোন অবস্থায় পৌঁছেছিল আর আমরা, কিছুই না জেনে বলে দিচ্ছি ভগবান মানি না আগে ভগবানকে দেখাও, তারপর মানবো

বাবা হেসে বলতেন, তুই জলের মধ্যে অক্সিজেন, হাইড্রোজেন দেখাতে পারবি? তার জন্য রাসায়নিক বিশ্লেষণ প্রয়োজন, একটা ল্যাবরেটরী দরকার তেমনি ভগবান মিশে আছেন এই জগতের প্রতিটি বস্তু ও জীবকণায় এটাই ‘Unity in diversity’ একের মধ্যে বহুত্ব ও বহুর মধ্যে এক ভগবান না থাকলে, কে করল, এই বিরাট মহাবিশ্ব? কে রঙ আনলো প্রজাপতি আর ফুলে?  জগৎসত্য বলেই ঈশ্বরও সত্য তোরা না চিনলি জগতকে, না চিনতে পারলি ঈশ্বরকেজীবনে আর একটা কথা মনে রাখার কথা বাবাজী মহারাজ বলতেন জীবনের প্রতিটি ভাগের আলাদা আলাদা সৌন্দর্য্য আছে




এই সৌন্দর্য্য কে অস্বীকার করা ঠিক নয় শিশুর মধ্যে যেমন সৌন্দর্য্য আছে, তেমনি বৃদ্ধ অবস্থারও একটা সৌন্দর্য্য আছে চুল পাকলে পাকুক তাতে কলপ করে রঙ মাখিয়ে তরুণ সাজলে কি সেই তারুণ্য ফিরে আসবে? না খুব সুন্দর লাগবে জীবনের প্রতিটি ধাপকে মেনে নিতে হয়

এটাই জীবন আর এই জীবনকে চিনে নেওয়ার কথা দাদাজী মহারাজ যেমন বলে গেছেন, বাবাজী মহারাজও বলেছেন তাই বাবাজী বলতেন, এতটা পথ যখন, সাধন করলি, জীবনের বাকি দিনগুলো করে যা, কী হবে, ছেড়ে দিয়ে? রাত তো শেষ হবার পথে

Post a Comment

0 Comments

Top Post Ad

Below Post Ad