Hot Widget

Type Here to Get Search Results !

Advt 720

বাবাজী মহারাজ তার প্রবচনের মধ্য দিয়ে সুস্থ সংসার ও রুচিশীল সমাজ গঠনের চাবিকাঠি দিয়ে গেছেন

Top Post Ad



প্রথমেই ধন্যবাদ জানাই যারা প্রতিদিন বাবাজীর উপর লেখা এই প্রবন্ধটি পড়েন, কিংবা তার শ্রীচরণে প্রণাম জানান। তাদের ভক্তি ও ভালোবাসাকে আমি সম্মান জানাই
 তিনি একটা সুস্থ সংসার চাইতেন, সুস্থ সমাজ গঠনের জন্য। যে সমাজ গড়ে উঠবে মূল্যবোধ, আধ্যাত্মিকতা, বিজ্ঞানমনস্কতা ও সু-শিক্ষা, পারস্পরিক সম্মান ও সৌজন্য, সু-চরিত্রের উপর। আর এভাবে সমাজ গড়তে হলে, তার শুরুটা হতে হবে সংসার থেকেই।
তারক ঘোষ 

 বাবাজী মহারাজ ঈশ্বর ও জগৎ – দুটোকেই সমান গুরুত্ব দিয়ে গেছেন। তার পাঠচক্রে পঠিত গ্রন্থের মধ্যে ছিল শ্রীভাগবত, বেদ, পুরাণ, উপনিষদ, শ্রীগীতা। তিনি বলতেন মহাভারত ও রামায়ণের উপাখ্যানও। স্বামীজী, নেতাজী ও রবীন্দ্রনাথ ছিলেন তার মননে, চিন্তায় ও চেতনায়। 
বাবাজীর মতে, রবীন্দ্রনাথ সাহিত্য-পথের পথিক ও আধ্যাত্মিক পথিককে একই জায়গায় দাঁড় করাতে পেরেছিলেন। যা রবীন্দ্রনাথের ‘রাজা’ না পড়লে বা উপলব্ধি না করলে সম্ভব নয়।
তার কথায় উঠে আসত শ্রীরামকৃষ্ণএর কথা। 
কিন্তু, কেন বলতেন- এসব কথা?
 তিনি জানতেন, সুস্থ ও রুচিশীল সমাজ গড়ার আগে গড়ে তুলতে হবে একটা বিবেকবান, দায়িত্বশীল, চেতনা-সম্পন্ন মানুষ অর্থাৎ individual. সেই মানুষদের নিয়ে তৈরি হবে একটা সুস্থ সংসার। আর বহু সুস্থ সংসার তৈরি করবে একটা সুস্থ সমাজ। আর সেই সমাজ নিয়েই তৈরি হবে একটা দেশ।
 আধ্যাত্মিকতার দেশ এই ভারত। এখানে, জাগতিক উন্নতির পাশাপাশি চাই আধ্যাত্মিক চেতনার বিকাশ। বিজ্ঞানের মেলবন্ধনে, সেই আধ্যাত্মিক চেতনা আরো বিকশিত হবে। এক নতুন ভারতের জন্ম হবে, যেখানে থাকবে না অন্ন-চিন্তা, চাকুরি-চিন্তা। মানুষ তার আপন ক্ষমতাবলে তার যোগ্য আসন পাবে।
 আমার মতে, রামায়ণ, মহাভারতকে শুধুমাত্র ধর্মের গন্ডীতে বেঁধে রাখলে আমাদের তথা এই হিন্দু জাতির উন্নতি সম্ভব নয়।
 কারণ, এই দুই মহাকাব্য অসাধরণ দুই সমাজ-দর্শন। মানুষের সম্পর্ক, সম্পর্কের ভাঙ্গন, বন্ধন ও বন্ধন ছেঁড়ার কাব্য-কাহিনী। এখানে সমাজ যেমন আছে, তেমনি আছে রাষ্ট্র। একটা রাষ্ট্রের ভূমিকা কী, সুস্থ রাষ্ট্র-ব্যবস্থা এবং তার সঠিক পরিচালনা কীভাবে একটা জাতিকে সমৃদ্ধির পথ দেখাতে পারে, তারও ইঙ্গিত আছে। 
এই দুই মহাকাব্যে, আমরা দেখতে পাই স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক ও সম্পর্কের ভাঙ্গন। দেখতে পাই বিশ্বাস ও বিশ্বাস-হীনতা। দেখতে পাই লোভ-লালসা ও কামনার বিকৃত রূপ ও তার পরিণাম। এক অসাধারণ সমাজতত্ব এই দুই মহাগ্রন্থ। যেখানে ধর্মের আলোকে জাতিকে সঠিক পথ দেখানো হয়েছে।
দুর্ভাগ্যের বিষয়, ছোটদের এই দুই মহাকাব্য পাঠ থেকে একেবারেই বঞ্চিত করা হচ্ছে। আজকে যদি, কোন তরুণ-তরুণীকে বলা হয়, তারা রামায়ণ, মহাভারত পড়েছে কি না, তারা অদ্ভুতভাবে আমার দিকে তাকাবে। যেন আমি কোন মধ্যযুগের মানুষ আজও মধ্যযুগীয় মানসিকতা নিয়ে বেঁচে আছি। 
কেউ বলবেন – ‘ওই পড়েছি’, কেউ বলবেন, ‘টিভিতে সিরিয়াল দেখেছি।‘ 
অনেকে ভাবেন, এই দুই গ্রন্থ পাঠ করলে, আধুনিক হওয়া যায় না। আমি জোরের সঙ্গে আপনাদের বলি, এই দুই মহাকাব্য আর শ্রীগীতা জাতির মেরুদন্ড। ভালো আর মন্দের পার্থক্য দেখিয়ে এক নতুন সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থার প্রতীক এই দুই মহাকাব্য, শ্রীগীতার মধ্যে ব্যাখ্যাত হয়েছে মানুষকে মানুষ হিসাবে গড়ে তোলার মূলমন্ত্র। 
গীতার বাণী তাই শুধু পাঠ করার জন্য নয়, জীবনে তার প্রতিফলন প্রয়োজন। বাবাজী মহারাজ তাই বারবার সম্পর্ক সৃষ্টি ও কীভাবে তা রক্ষা করা যায়, তা নানা নিদর্শন সহ ব্যাখ্যা করতেন। একজন স্ত্রীর কর্তব্য কী, প্রকৃত স্বামী কীভাবে হওয়া সম্ভব, তা ধর্মীয় মোড়কে বোঝানোর চেষ্টা করতেন। বহুগামীতার কুফল কী, স্বামী বা স্ত্রী বিপথে গমন করলে তার ফল কী হতে পারে, নানা ভাবে তা ব্যাখ্যা করেছেন। একজন পড়ুরার মূল লক্ষ্য কী হবে, কেন তাকে মোবাইল ফোন দেওয়া উচিত নয়, বাবা বারেবারে তা বলেছেন। 
বাড়ির গুরুজনদের সঙ্গে বর্তমান প্রজন্ম কী ধরণের আচরণ করলে, পরবর্তী প্রজন্মের কাছ থেকে সেই আচরণ ফেরত পাবে, সেই পথ দেখিয়ে গেছেন বাবাজী। 
তিনি একটা সুস্থ সংসার চাইতেন, সুস্থ সমাজ গঠনের জন্য। যে সমাজ গড়ে উঠবে মূল্যবোধ, আধ্যাত্মিকতা, বিজ্ঞানমনস্কতা ও সু-শিক্ষা, পারস্পরিক সম্মান ও সৌজন্য, সু-চরিত্রের উপর। আর এভাবে সমাজ গড়তে হলে, তার শুরুটা হতে হবে সংসার থেকেই।
আমরা বাড়ির ছেলেটিকে ও মেয়েটিকে যদি একই গুরুত্ব দিয়ে মানুষ করতে পারি, তাহলে লিঙ্গ-বিভাজনের কদর্য পরিণতি দেখতে হবে না। বা
ড়ির মা ও দিদির উপর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার শিক্ষা দিয়ে যদি নারীজাতির উপর শ্রদ্ধাবোধ জাগাতে পারি, তাহলে একদিন না একদিন ধর্ষণের ঘটনা থেকে মুক্ত হবে সমাজ। নারী জাতির প্রতি অশ্রদ্ধা ও নারীকে লোভের দৃষ্টিতে দেখা যদি ছোটবেলা থেকে বন্ধ করা যায়, সমাজ অন্য হবে। নিজে যদি, গুরুজন অর্থাৎ শ্বশুর-শাশুড়ীকে সম্মান না দেখাই, আবার বাবা-মাকে নানাভাবে অসম্মান করি, আমরা কিছুতেই নিজেদের সন্তানের কাছ থেকে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা পেতে পারবো না। 
‘নিম্বার্ক দর্শনে শিক্ষা’ প্রবন্ধে বাবা লিখছেন –“যে পিতামাতা মিথ্যা কথা বলতে পছন্দ করেন, সেই পিতামাতা শিশুকে সত্যবাদী করে তুলতে পারেন না। শিশুর ছোট্ট চোখ খুব তীক্ষ্ণভাবে পিতামাতাকে লক্ষ্য করে। শিশুর কারণে পিতামাতাকে সংযত হতে হয়।“ 
বাবাজী বলছেন – ‘বৈদেশিক সাম্যবাদ শুধু মানুষ নিয়েই। তার বহু আগে গীতায় সেই সাম্যভাবের আলোচনা রয়েছে। 
পঞ্চম অধ্যায় এর ১৮ নং শ্লোকে বলা হয়েছে –
 
“বিদ্যাবিনয়সম্পন্নে ব্রামহনণ গবি হস্তিনি। 
শুনি চৈব শ্বপাকে চ পন্ডিতাঃ সমদর্শিনী।।“

 বাবাজী বলছেন –“’সম’ কথাটি একটি আপেক্ষিক শব্দ। বৈষম্য না থাকলে ঐক্যের কোন অর্থ থাকে না। তাই বৈচিত্রের মধ্যেই ঐক্যের চিন্তা করতে হয়।“ 
সমতার কথা গীতায় সুন্দরভাবে বলা হয়েছে। 

“যাবত ভ্রিয়তে জঠরম তাবত স্বত্বং হি দেহিনাম
 অধিকং যোহভিমন্যেত স স্তেনো দণ্ডমর্হতি।।“ 

একটি মানুষের সমাজ থেকে এতটুকু পাওয়ার অধিকার যতটুকুতে তার গ্রাসাচ্ছাদন চলে। যদি সে বেশি জমায়, তাহলে সে চোর, তাকে শাস্তি পেতে হবে।
ভেবে দেখুন বর্তমান সময়ে এই কথা কত বেশি প্রাসঙ্গিক। তিনি যে সমাজের কথা বলতে চেয়েছিলেন, তা গীতার সাম্যবাদ, নিম্বার্ক্তত্বের উপর ভিত্তি করে।
 তিনি সেই সংসারের কথা বলতে চেয়েছেন, যা হবে মানুষ ও ঈশ্বরের আবাসস্থল। তিনি যে মানুষের কথা বলতে চেয়েছেন, সেই মানুষের এক হাত কর্মে আর এক হাত থাকবে ঈশ্বরের পদতলে আর তার মনে থাকবে ভক্তি, বিশ্বাস, সম্পর্ককে রক্ষা করার মন্ত্র। 
চলবে..

Below Post Ad

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

Hollywood Movies