প্রথমেই বলে রাখি, বাবাজী মহারাজ যে সমস্ত গ্রন্থ লিখে গেছেন, বা পত্র-পত্রিকায় যা লিখেছেন কিংবা বিভিন্ন আলোচনা সভায় যে বক্তব্য রেখে গেছেন, ভবিষ্যতের গবেষকরা তার ভিত্তিতেই বাবাজী মহারাজের কর্ম ও ভাবনার উপর নতুন গবেষণা করবেন। আজ আমরা যেমন স্বামী বিবেকানন্দর লেখা পড়েই বুঝি তিনি কী চেয়েছিলেন। আজ কে কী বললেন, ভবিষ্যৎ পৃথিবীর গবেষকরা তাদের কথা মনে রাখবেন না। গুরুত্ব পাবে ড. স্বামী প্রজ্ঞাদাস কাঠিয়া, এম.এ. পি. এইচ.ডি. এর লিখিত গ্রন্থ ও তার ভিডিও।
তারক ঘোষ
তিনি ড. স্বামী প্রজ্ঞাদাস কাঠিয়া, এম.এ. পি. এইচ.ডি. তিনি যদি শুধুমাত্র সন্ন্যাসী হতেন বা শুধু ধর্মের গন্ডীর মধ্যেই নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখতে চাইতেন, তাহলে রাতের পর রাত জেগে গবেষণা চালিয়ে যেতেন না। তার সঙ্গে অন্য সন্ন্যাসীর পার্থক্য – তিনি শুধু একজন সাধু, দার্শনিক বা সমাজ-সংষ্কারক নন, তিনি এক নতুন মতবাদের প্রবক্তা।
অথচ, তার এই নতুন মতবাদ নিয়ে খুব কম আলোচনাই হয়েছে। বাবাজী কেন সন্ন্যাসী হয়েও, গবেষণায় ব্রতী হয়েছিলেন, এই দিকটা নিয়েও আলোচনা কম হয়েছে।
অথচ, তার গবেষণা-পত্র “A Society in the Thought of Marx and Nimbark’ এর মধ্যেই লুকিয়ে আছে, তিনি কোন ধরণের সমাজব্যবস্থার দিকে ইঙ্গিত করতে চেয়েছিলেন। তিনি নিশ্চয় ডিগ্রি বাড়ানোর জন্য গবেষণায় রত হন নি?
আমার সঙ্গে ২০০৩ সালে ১৩ চৈত্র সাংবাদিক হিসাবে বাবাজীর সঙ্গে প্রথম সাক্ষাৎ হয়, তিনি ‘A Society in the Thought of Marx and Nimbark’ গ্রন্থ তথা গবেষণাপত্রটি আমার হাতে দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, এটা পড়লেই আপনি (আমাকে সেদিন ‘আপনি’ সম্বোধন করেই বলেছিলেন, পরে সেটা ‘তুই’ তে চলে আসে স্বাভাবিকভাবেই) বুঝতে পারবেন, আমি কেন সন্ন্যাসী হয়েও গবেষণা করে পি এইচডি করেছিলাম।
আমার মতে, এটাই অন্য সাধুদের সঙ্গে বাবার পার্থক্য। আশা করি, কেউ ভাববেন না, আমি অন্য সন্ন্যাসীদের অসম্মান করছি। তাহলে সেটা হবে তাদের বোধের অভাব। কারণ, বাবাজী একজন উচ্চশিক্ষিত দার্শনিক তথা নতুন পথের দিশারী হিসাবে প্রমানিত।
ভবিষ্যত পৃথিবী তাকে এইভাবেই মনে রাখবে। তিনি হয়ে উঠবেন, এই বিশ্বের সমাজ গঠনের এক নতুন মতবাদের প্রবর্তক। তার সঙ্গে কারো তুলনা হয় না, তিনি অতুলনীয়।
বাবাজী কী বলছেন, তার গবেষণা নিয়ে? মার্ক্স বলছেন, The abolition of religion as an illusory happiness is the pre-requisite for the attainment of true happiness.
বাবাজী প্রশ্ন তুলছেন –মার্ক্স ‘True happiness’ বলতে ঠিক কী বলতে চেয়েছেন। ‘happiness’ সম্পর্কেই বা তারা কী বলছেন। বাবাজী এই প্রসঙ্গে তার লেখায়, তার প্রতিটি বক্তব্যে, সভায় এবং সাংবাদিকের সঙ্গে সাক্ষাতকারে বারবার বলেছেন –“ধর্মের বাহানা দিয়েই বলুন বা নাস্তিকতার বাহানা দিয়েই বলুন- আপনারা সমাজটাকে কোথায় নিয়ে যেতে চাইছেন – এটা জানার অধিকার আমার আছে।“
এই প্রশ্নটা শুধু পশ্চিমী দুনিয়া নিয়ে নয় প্রাচ্যের বিষয় নিয়েও করেছিলেন।
বাবাজী মার্ক্স ও নিম্বার্ক-তত্বের আলোকে সমাজের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বলছেন- “As one can not deny the economic needs, so one can not refuse to accept the necessity of the removal of inhuman qualities. Marx thinks of externalinsecurity and suggests remedies for putting an end to it. Nimbarka takes of internal insecurity and advocates principles that are in a position to combat this insecurity. All this leads a curious reader to jointly apply the methods projected by Marx and Nimbarka.”
ধর্ম প্রসঙ্গে মার্ক্সিবাদের একটি দিক নিয়ে বাবাজী বলছেন –“Marxism rejects religion altogether, because it is likely to foster dependence on gods and put an end to individual freedom so necessary for generation of wealth as also to accept inequality due to birth and economic status as something sacrosanct in nature. This , unfortunately ensues from a wrong notion of religion.”
আবার নিম্বার্কবাদ নিয়ে তিনি বলছেন- “Religion, as Nimbarka conceives, is a process by which man can maintain himself and his relation with others, and at the same time can manifest his latent possibilities to the fullest extent. In this sense, religion and philosophy are identical and possibly both lead the man to fulfilment in the way education leads to it”
বাবাজীর মতে –“Philosophy of Marx and that of Nimbarka both ultimately enter the arena of humanism while Marxism is radical humanism, Nimabarka’s humanism is spiritual humanism having a realistic tone.”
চলবে…