Hot Widget

Type Here to Get Search Results !

Advt 720

বাবাজী মহারাজ প্রবচনে মজার ছলে বলেছিলেন - কিছু গুরু আবার তার 'মন্ত্রী আর ধনী শিষ্যের গুরু' বলে প্রচার করতে ভালোবাসেন

Top Post Ad



দাদাজী মহারাজ চেয়েছিলেন, তার অসমাপ্ত কাজ শেষ করুক তার সুযোগ্য শিষ্য স্বামী প্রজ্ঞাদাসজী। কিন্তু স্বামী প্রজ্ঞাদাসজীর অসমাপ্ত কাজ কে শেষ করবে? এরকম জ্ঞানের অধিকারী সুশিক্ষিত কেউ আর আছে নাকি? আমাদের আরো অপেক্ষা করতে হবে। হয়ত, আবার তিনিই ফিরে আসবেন, তার অসমাপ্ত কাজ শেষ করতে। ততদিন চলবে আমাদের প্রতীক্ষা।

 

তারক ঘোষ


ভারত আধ্যাত্বিকতার দেশ, ভারত ধর্মের দেশ। আর এই দেশে ধর্ম কখনো ব্যবহৃত হয়েছে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে, কখনো বা ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে। শুনতে খারাপ লাগলেও এটাই সত্য। ব্রিটিশ সরকারও এটা বুঝেছিল। তাই তারা চালু করেছিল Divide and Rule নীতি। এর ফল ওদের পক্ষেই গিয়েছিল। এটা যে ব্রিটিশরা চলে যাওয়ার পর লুপ্ত হয়ে গেছে, তা কিন্তু নয়। বরং, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, ভিন্ন ভিন্নভাবে তার প্রয়োগ করেছে।

আর একশ্রেণির মানুষ এই পৃথিবীতে এসেছিলেন, যারা ধর্মের প্রকৃত সত্যকে অনুধাবন করে, সমাজে তার প্রতিফলন ঘটাতে চেয়েছিলেন, যাতে ধর্মের আসল সত্য মানুষের মঙ্গলের কাজে লাগে। মানুষ যেন ধর্মকে বিভেদের কারণ না ভাবে। ধর্ম যে মিলন আর শান্তির রূপ – এটা যেন তারা বুঝতে পারে।

আমাদের বাবাজী মহারাজ ছিলেন এরকম এক মহামানব যিনি কখনো হিন্দু-মুসলমানে বিভেদ সৃষ্টির কথা বলতেন না। তিনি সর্ব ধর্মকে গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলতেন। তিনি বলতেন, ‘শুধু আমার গুরুকে আমি সম্মান করব, তা নয়, আমার কাছে সব গুরুদেবই সম্মানের, এমনকি আমার শিক্ষকরাও আমার গুরুদেব, যারা আমাদের জীবনে প্রথম জ্ঞানের আলো জ্বালিয়েছিলেন।‘

সেপ্টেম্বর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে এই গ্রন্থটি প্রকাশিত হবে। কেউ কিনতে চাইলে নীচের হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে যোগাযোগ করতে পারেন -
৮৯২৭০৪২৫৯৪

পরিবার হলো সমাজ তৈরির প্রথম ধাপ আর পরিবার তৈরি হয় এক একটি ব্যক্তিকে নিয়ে। বাবাজী মহারাজ এই ব্যক্তি-সত্বাকে বেছে নিয়েছিলেন সমাজ তৈরির ‘ইউনিট’ হিসাবে। অনেকেই হয়তো জানেন না, আমাদের বাবাজী কেন বিভিন্ন প্রবচনে মানুষকে নানা ধরণের উপদেশ দিতেন, কেন বলতেন একজন সৎ মানুষ হিসাবে নিজেকে গড়ে তুলতে। আসলে ধর্মের মধ্যে দুটো প্রাথমিক শিক্ষা আছে, আমরা হয়তো বুঝতে পারি না। এর একটা হল সংযম আর অন্যটি হলো নিয়মানুবর্তিতা। 

এই দুই শিক্ষাকে বাবাজী মহারাজ জীবনের অঙ্গ করে নিতে বলেছিলেন। কারণ, সংযম আমাদের বেড়া ভাঙ্গতে দেয় না। এর ফলে ষড়রিপু আমাদের জ্বালাতন করতে পারে না, আর নিয়মানুবর্তিতা ছত্রিজীবন থেকে আমাদের সুন্দর ভবিষ্যত জীবনকে বেছে নিতে শেখায়। আর এই ধরণের এক একজন ব্যক্তি একটা সুষ্ঠু পরিবারের জন্ম দেয়। আর এরকম বেশ কিছু পরিবার মিলে তৈরি হয় একটা স্থিতিশীল সমাজ।

আমাদের দাদাজী মহারাজ অর্থাৎ শ্রীশ্রী জানকীদাসজী মহারাজ ছিলেন এরকম নিয়মের দাস। বাবাজী মহারাজ বলছেন – সংযমের কঠিন নিয়মে বাধা ছিল বাবাজী মহারাজের (শ্রীশ্রী জানকীদাসজী মহারাজ) জীবন। আহার-নিদ্রা সবই ছিল পরিমিত। প্রসাদ পাওয়ার থালার নীচে একটা ভাতের দানাও আমরা কোনদিন পড়ে থাকতে দেখিনি।




ধর্ম তো বিভেদের হাতিয়ার নয়। ধর্ম একটা সুস্থ সমাজ গঠনের চাবিকাঠি। বাবাজী মহারাজকে এই চাবিকাঠির সন্ধান করতেই বলেছিলেন শ্রীশ্রী জানকীদাসজী মহারাজ। তাই তার গবেষণা, এমনকি ইংরাজী  অনার্স ছেড়ে দর্শন –এ অনার্স নিয়ে দর্শন শাস্ত্রে মাস্টার্স করা। ভালো করে দেখুন, এর আগে শ্রীশ্রী জানকীদাসজী মহারাজ কিন্তু বাবাজীকে সন্ন্যাস ধর্মে দীক্ষা দেন নি। অনেকে মনে করেন, দাদাজী মহারাজ একটু অপেক্ষা করছিলেন। কারণ, তার মনে ছিল তার নিজের জীবনের কথা। তাই তিনি ভেবে রেখেছিলেন, মাস্টার্স করার পরই বাবাজী মহারাজকে সন্ন্যাস দেবেন।

শ্রীশ্রী জানকীদাসজী মহারাজ বাবাজীকে বলেছিলেন, তোর কাজ হবে, সমাজ গঠন করা, এক নতুন সমাজ, এক আদর্শ সমাজ। প্রাচীন নিম্বার্কীয় দর্শন ও মার্কসীয় দর্শন থেকে সমাজ গঠনের নতুন চাবিকাঠি বের করা। তাই বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় বাবাজী মহারাজকে এই বিষয়ে গবেষণার অনুমতি দিতে না চাইলেও দাদাজী মহারাজ হাল ছাড়েন নি। শেষ পর্যন্ত, বাবাজী মহারাজ ওই বিষয়েই গবেষণা শেষ করেন।




অনেকেই জানতে চান, কী এমন বিষয় আছে, ওই গ্রন্থে যা আমাদের একটা নতুন ভাবনা যোগাবে সমাজ গঠনে। আমার মনে পড়ে, আজ থেকে ২০ বছর আগে বাবাজীর সঙ্গে আমার প্রথম সাক্ষাতে বাবাজী মহারাজ রাধামাধবকে ওই গবেষণা গ্রন্থটি আমাকে দিতে বলেছিলেন আর বলেছিলেন – ‘তারক সাংবাদিক, ও এর মর্ম বুঝবে।‘ 

বাবা যতদিন দেহে ছিলেন, আমি তার মর্ম বুঝিনি। তিনি চলে যাওয়ার পর আমি শুরু করি পড়াশোনা। যত পড়তে থাকি অবাক হয়ে যাই। তার সমস্ত লেখা নতুন করে পড়তে থাকি। প্রতিটি ভিডিও ভালোভাবে শুনতে থাকি। বুঝতে পারি, বাবার বহু কথাই দ্বর্থবোধক। বহু কথা শ্লেষাত্বক। তিনি এসেছিলেন সমাজকে সংশোধন করতে ‘গুরু সেবা নিতে নন।




বাবাজী মহারাজের ব্যক্তিগত জীবন আর একজন গবেষক হিসাবে তার জীবন এই দুই জীবনের মধ্যে একটা যোগসূত্র আছে। বাবাজী মহারাজ সন্ন্যাসী হিসাবেই জন্মেছিলেন আর গবেষক হবার জন্যই জন্মেছিলেন। বাকিটা ছিল সময়ের অপেক্ষা। ইচ্ছে হল সন্ন্যাসী হয়ে গেলাম, দাড়ি-জটা রেখে সাধু হয়ে গদিতে বসে গেলাম, মহন্ত হয়ে শিষ্য বাড়ি ঘুরতে শুরু করে দিলাম, এরকম সন্ন্যাসী বাবাজী ছিলেন না।

তাই তিনি মজার ছলে অনেক কথা বললেও, সেই কথাগুলো ছিল একেবারেই শ্লে্ষাত্বক। সাধু সমাজ কোনদিকে এগিয়ে চলেছে, না কি পিছিয়ে চলেছে, এটা বলাই তার উদ্দেশ্য ছিল। বাবাজী এগুলো বুঝতেন, কিন্তু কঠোর সমালোচনাও করতেন। পরে বুঝেছিলেন, এই সমালোচনা কেউ গ্রহণ করছে না, তাই ক্লেশের সঙ্গেই বলেছিলে, ‘সাধু হওয়া ভালো নয়। সাধুদের বড় কষ্ট।

কিন্তু, কোন সাধুদের কষ্টের কথা তিনি বলতে চেয়েছিলেন? একজন সৎ সাধক, যিনি সমাজের জন্য আসেন, মানুষের জন্য কাজ করেন, তার উপার্জিত জ্ঞান সমাজের জন্য ব্যয় করেন এই সাধুদের কথাই বলতে চেয়েছিলেন। যিনি ধনী শিষ্য বা মন্ত্রী শিষ্যের গুরু হিসাবে নিজের পরিচয় দেন,  সেই সাধুর কথা বলতে চাননি।



দাদাজী মহারাজ চেয়েছিলেন, তার অসমাপ্ত কাজ শেষ করুক তার সুযোগ্য শিষ্য স্বামী প্রজ্ঞাদাসজী। কিন্তু স্বামী প্রজ্ঞাদাসজীর অসমাপ্ত কাজ কে শেষ করবে? এরকম জ্ঞানের অধিকারী সুশিক্ষিত কেউ আর আছে নাকি? আমাদের আরো অপেক্ষা করতে হবে। হয়ত, আবার তিনিই ফিরে আসবেন, তার অসমাপ্ত কাজ শেষ করতে। ততদিন চলবে আমাদের প্রতীক্ষা।

Below Post Ad

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

Hollywood Movies