জীবন ও মূলবোধ সম্পর্কিত বাবাজী মহারাজের কিছু কথা


অর্থ তাকে কোনদিন ছুঁতে দেখিনি, দেখিনি সাংসারিক আলোচনাকে গুরুত্ব দিতে। যে পূর্বাশ্রমকে তিনি ফেলে এসেছিলেন বহুদূরে, সেই পূর্বাশ্রম তার সাধক জীবনে কোন ছায়া ফেলে নি। তিনি ছিলেন এক নির্লিপ্ত যোগী, যার বিশ্বাস কর্ম-ধর্ম-জ্ঞান আর বিজ্ঞানের মেলবন্ধনে। আমাদের বর্তমান সমাজেও সাধু-সন্ন্যাসীদের একটা বিরাট সম্মানের আসন রয়েছে।

আর সেই আসনের সম্মান রক্ষার দায়িত্ব একমাত্র সাধকের বলেই মনে করতেন বাবাজী মহারাজ। তিনি নিজে অর্থ স্পর্শ করতেন না, কাউকে বলতেন টাকা তুলে রাখতে। অর্থ জীবন চালায়, কিন্তু জীবনকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না- এই বিশ্বাস তিনি করতেন। আমারও মনে হয়, অর্থ যখন মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করা শুরু করে, তখনই শুরু হয় অন্য কিছুর। 

 


ভক্তের বিশ্বাস যাতে কোনরকম ভাবে আঘাত পায়, এমন কর্ম করতে তিনি সাধুদের নিষেধ করতেন।

 

বাবাজী নিজে সাধক হলেও মনে করতেন, গৃহী মানুষ চাইলে সাধনপথে অনেকদূর এগোতে পারেন। কারণ, তারা সংসার জীবনের অসংখ্য বন্ধনে আবদ্ধ থেকেও যদি ভগবানকে ডাকার সময় করে নিতে পারেন, তাহলে সেটার তূল্য সাধন আর কিছু হতে পারে না। একইসঙ্গে তিনি শ্মশান বৈরাগ্যকে পছন্দ করতেন না 

বার বার বলেছেন, তোরা যখন এখানে আসিস, আমার কথা শুনিস, ভালো লাগে। ভাবি তোরা জীবনে সেগুলো পালন করবি। কিন্তু, কিছুদিন পর যে কে সেই। মনে রাখিস, বৈরাগ্য ভালো, কিন্তু শ্মশান বৈরাগ্য নয়। মনটাকে বিরাগী কর, আচরণে বৈরাগ্য আন, কিন্তু বসনে বৈরাগ্য আর চিন্তায়-চেতনায় বিষয়াসক্তি মটর দানার মতো গজগজ করবে, তাহলে কিছু হবে না। 

 


বাবা বারবার বলতেন মানুষের চাওয়ার শেষ নেই। ছেলের স্বাস্থ্য, ছেলের লেখাপড়া, ছেলের চাকরি, তারপর ছেলের বিয়ে, তারপর বৌমার সঙ্গে মানিয়ে চলার সমস্যা, তারপর নাতি নাতনি, তাদের স্বাস্থ্য, লেখাপড়া…… এর শেষ নেই। এ থেকে মুক্তি নেই। 

 

বাবাজীর হৃদয় ছিল কোমল, তাই ভক্তদের দুঃখকে নিজের মনে করতেন। সাবধান করতেন বার বার, যাতে দুঃখের কারণ হয়, এমন কর্ম তারা যেন না করেন।

 


আর একটি কথা বাবা বলতেন। কেউ যদি অন্যায় না করে দুঃখ পান বা কষ্ট ভোগ করেন, তাহলে জানবি, তার পিছনে ঈশ্বরের লীলা আছে। বাবা বলতেন – “আমাদের কাছে টানবেন বলেই তিনি বঞ্চিত করেন। তীব্র নিন্দা দুঃখ অপমান দিয়ে তিনি কাছে টানেন। তাই বিনা কারণে আমাদের জীবনে যখন নিন্দা অপমান আসে তখন বুঝে নিতে হয় যে তিনি কাছে টানছেনআর একটি কথা তিনি বলতেন, “অনুগত জনকে তিনি ত্যাগ করেন না। বরং ধীরে ধীরে আগুনে পুড়িয়ে তাকে খাঁটি সোনায় পরিণত করে নেবেন।

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

Top Post Ad

Below Post Ad