Hot Widget

Type Here to Get Search Results !

Advt 720

বাবাজী মহারাজ মাথায় কাঠ-কয়লার বস্তা চাপিয়ে মেমারী থেকে হেঁটে বড়র আশ্রমে আসেন



বাবাজী মহারাজের শরীরে এমন এক দীপ্তি থাকতো, দেখলেই ভক্তি আসত যে কোন মানুষের। তার কন্ঠস্বরে ছিল জ্ঞানের গাম্ভীর্য। 




 ছোট্ট স্কুল-পড়ুয়া বাবাজী মহারাজকে শ্রীশ্রী জানকীদাসজী বলেছিলেন –‘যদি শান্তি পেতে চাস, ভগবানকে পেতে চাস, তাহলে শক্তিশালী সদগুরুর চরণে নিজেকে সমর্পণ করে দে। কখনো গুরুর বাক্যে বিচার আনিস না। কেন কেন করিস না। পৃথিবীতে অনেক কেন আছে, সব কেনর উত্তর হয় না।‘ বাবাজী মহারাজ এই সন্ন্যাসীর কথা অন্তর দিয়ে অনুধাবন করার চেষ্টা করছিলেন। কারণ, সেই বয়সে, অনেক কিছুই তার বোধগম্য হচ্ছিল না। 
এরপর, শ্রীজানকীদাসজী বললেন –‘তোর নিজের কোন পৃথক ইচ্ছা রাখিস না। আমি যেমন চালাব, তেমন চলবি। আমার উপর সব ছেড়ে দে।‘
 বাবাজী সেইদিন ওই সন্ন্যাসীকে বলেছিলেন – ‘বাবা আজ থেকে আমার এই জীবন আপনার শ্রীচরণে রইল। আপনি যা বলবেন, আমি তাই করব।‘ 
 বাবাজী তার জীবনভর সেটাই করেছিলেন। তার নিজের ইচ্ছা রাখেন নি। 



শ্রীগুরুকে সামনে রেখেই সব কর্ম করে গেছেন। যেখানে গেছেন, তার গুরুদেবের কথাই বলেছেন। মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দিয়েছেন তার শ্রীগুরুর জীবন ও বাণী। রচনা করেছেন গুরুদেবকে নিয়ে বহু গ্রন্থ। আমাদের বাবাজী মহারাজের মধ্যে শিষ্যভাব ছিল প্রবল। তাই তিনি হয়ে উঠতে পেরেছিলেন এই আধুনিক যুগের এক কর্মবীর স্থিতধী মহাপুরুষ, যার দ্বিতীয়টি আর নেই। 
তার সঙ্গে কারো তুলনা হয় না। না জ্ঞানে, না সাধনায়, না ত্যাগে। বাবাজী মহারাজের শরীরে এমন এক দীপ্তি থাকতো, দেখলেই ভক্তি আসত যে কোন মানুষের। তার কন্ঠস্বরে ছিল জ্ঞানের গাম্ভীর্য। সে সব আজ কোথায়। এখন যে কেউ বিনা আয়াসে গুরু হয়ে বসে পড়ছেন। ইচ্ছা হল, জটা দাড়ি রেখে গুরুজী সেজে বসে পড়লাম।
 ভাবলাম না, আমার সেই সাধনার যোগ্যতা আছে কি না। আমার মনে এখনো ‘কামনার কামড়’ আছে কি না। এই সমস্ত ‘ঝুটা গুরু’ থেকে নিম্বার্ক সম্প্রদায়ের মহাপুরুষরা বারবার সাবধান থাকার কথা বলে গেছেন। 


যাই হোক যা বলছিলাম – শ্রীজানকীদাসজী বলতেন, ‘থুতু যদি একবার ফেলে দিস, আর চাটিস না।‘ শ্রীজানকীদাজী বাবাজী মহারাজকে বলতেন, ‘দেখ একজন এমএ পাশ আর একজন এমএ পাশকে বুঝতে পারে। যিনি সমাধিস্থ হননি, তিনি কী করে সমাধি লাভের অবস্থা বুঝতে পারবেন?’ 
বড় আশ্রম তখন ছিল এক অপরূপ পরিবেশের মাঝে। পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া নদীর শব্দ, বেলফুলের গন্ধে সুরভিত চারিদিক। আর এর মাঝেই জীবনের অনেকটা সময় ব্যয়িত হয়েছিল বাবাজী মহারাজের। জীবনের সব কঠিন শিক্ষা এখান থেকেই আয়ত্ব করেছিলেন এক পড়ুয়া। শিক্ষার সর্বোচ্চস্তরে পৌছানোর সাধনাও এখান থেকেই।
 বাবাজী বুঝেছিলেন, বিদ্যাসাগরের চটি পায়ে দিলেই বিদ্যাসাগর হওয়া যায় না, কাউকে নকল করে আসল হওয়া মুর্খের মুর্খামী ছাড়া আর কিছুই নয়। বড়র আশ্রমের দক্ষিণ দিকে তিন-চারটি পাকা ঘর। বাইরে থেকে আগত শিষ্য-ভক্তরা এখানেই উঠতেন। 
আর এর উত্তর-পুর্ব দিকে টালির ছাউনি দিয়ে ঢাকা একটা ছোট্ট ঘরে থাকতেন আমাদের বাবাজী। ঘরের মধ্যে ছোট্ট একটা তক্তপোষ। বিছানায় বইপত্র ছড়ানো। যে কেউ দেখলেই বুঝতে পারবেন, এটা এক ছাত্রের ঘর। 

আসলে বাবাজী সারাটা জীবন ছাত্র হিসাবেই থাকতে ভালোবাসতেন। তিনি ছিলেন জিজ্ঞাসু। ওই ছোট্ট ঘরের মধ্যে পূর্ব দিকে একটা কম্বলের আসন পাতা। সকালে উঠে বাবাজী মহারাজ  অন্যান্য কাজকর্ম সেরে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাবার প্রস্তুতি নিতেন। স্টোভে ভাত ও আলুসিদ্ধ। এটা গ্রহণ করে শ্রীগুরুকে প্রণাম করে রওনা হতেন নুদীপুর ক্যানালের কাছে রাস্তার দিকে। এটাই তার রুটিন ছিল। 


বাবাজী মহারাজ একবার তার শ্রীগুরুর কাছে শুনলেন কাঠ-কয়লার আগুনে কুকারের মধ্যে তেল-লবণ দিয়ে রান্না করলে, তার উপকারীতা অসীম। মাথার মধ্যে রয়ে গিয়েছিল গুরুদেবের বলা কথাগুলো। একদিন বিকালে শিশিরবাবু ক্যানেলের জলে হাত-পা ধুচ্ছেন। আচমকাই তার মনে হল, প্রজ্ঞাদাসজীর মতো কেউ যেন চলে গেলেন। তাকিয়ে দেখেন, কে একজন মাথায় একটা বস্তা চাপিয়ে আশ্রমের দিকে হেঁটে যাচ্ছেন।
 শিশিরবাবু আশ্রমে ফিরলেন। দেখলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ সেরে শ্রীজানকীদাসজীর এই একান্ত শিষ্যটি ফিরে এসেছেন। পরে, আশ্রমের মধ্যে এক বস্তা কাঠ-কয়লা দেখে অবাক হয়ে গেলেন। জানতে পারলেন বাবাজী মহারাজ বর্ধমান শহর খুঁজে ওই কাঠ-কয়লা কিনেছেন। ট্রেনে চাপিয়ে মেমারী পর্যন্ত এনেছেন। কিন্তু, ওই কাঠ-কয়লা নিয়ে তাকে বাসে উঠতে দেয়নি কন্ড্যাক্টর। 
কী আর করা যাবে। শ্রীগুরুর প্রসাদ প্রস্তুত করার জ্বালানী হিসাবে তিনি ওই কাঠ-কয়লা এনেছেন, সেটা তো আর ফেলে দেওয়া যায় না। 


তাই সমস্ত লজ্জা দূরে ফেলে, নিজের মাথাতেই চাপিয়ে নিলেন বস্তা। আর সেই বস্তা মাথায় নিয়ে হেঁটে চললেন আশ্রমের দিকে। মেমারী থেকে হাঁটতে হাঁটতে বড়র আশ্রম। এরকম গুরুভক্তি ছিল বাবাজীর। তার হৃদয় জুড়ে ছিলেন আমাদের দাদাজী মহারাজ।

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

Top Post Ad

Below Post Ad

Hollywood Movies