Hot Widget

Type Here to Get Search Results !

Advt 720

গোপালজী যেন নিজেই বৃন্দাবন থেকে কলকাতা হয়ে ধরা দিলেন নতুনগ্রামে বাবাজীর আশ্রমে

বাবাজী মহারাজের জীবনের লক্ষ্যই ছিল মানব কল্যাণ। তার এই সার্বিক মানব-কল্যাণের জন্যই তিনি আবির্ভূত হয়েছিলেন এই ধরাধামে। যে ধারা শ্রীজানকীদাসজীর মধ্য দিয়ে গুরু-পরম্পরায় তার মধ্যেও প্রবাহিত হয়ে চলছিল, সেটি হল আত্মিকভাবে বলহীনকে বল দেওয়া, নিম্বার্ক পরম্পরাকে রক্ষা করা আর ভক্ত-শিষ্যের দায়িত্ব নিয়ে তাদের সতপথে পরিচালিত করা। 
শ্রীগুরুর এই ধারা, এই আদেশ তিনি জীবনের শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত পালন করে গেছেন। কোথাও তার ক্লান্তি ছিল না। তিনি যেমন মানুষ গড়তে এসেছিলেন, তেমনই মানুষ চিনতে ও চেনাতেও এসেছিলেন।
গুরু হিসাবে, তিনি পিতৃতূল্য ছিলেন, তাই তিনি ‘বাবাজী’ বা ‘গুরুজী’র চেয়ে ‘বাবা’ ডাকটা শুনতেই বেশি পছন্দ করতেন। কাউকে পর ভাবতে পারেন নি, কাউকে দূরে সরিয়ে দিতে পারেন নি। তিনি ২০১৩ সালের মধ্যেই বুঝে গিয়েছিলেন, কী ঘটছে, কী ঘটতে চলেছে। 
কোথায় যেন কালো একটা মেঘ মাঝে মাঝে ছেয়ে ফেলছিল তার মনের আকাশকে। যে মহান মানুষটিকে কোনদিন ক্লান্তি স্পর্শ করতে পারে নি, সেই মহান ঋষিকে কী একটা বিষয় ভাবাতো। এই ভাবনা ক্রমশঃ বাড়তে থাকে। 
২০১৪ সালের প্রথম দিকে এই ভাবনা আর চিন্তা তাকে যেন আচ্ছন্ন করে ফেলে। আমরা নিজেদের দিকেই তাকিয়েছি, তাই কোনদিন বাবাকে জিজ্ঞাসা করতে পারিনি, ‘আপনাকে এ রকম লাগছে কেন?’ রাধামাধম সেই সময় আমার স্ত্রীকে ফোনে জানিয়েছিলেন, বাবা আর আশ্রমে সেভাবে থাকতে চাইছেন না। 
আর বাবাজী মহারাজ স্বয়ং আমার স্ত্রীকে ফোনে বলেছিলেন – ‘সময়টা খারাপ।‘ কেন খারাপ, কী খারাপ, কেন একথা বলছেন – আমার  স্ত্রীর এই প্রশ্নগুলি করার আগেই ফোন কেটে গিয়েছিল। সেটাই বাবার শেষ ফোন। আর তারপর – সব স্মৃতি।
বাবার সারা জীবনটাই ত্যাগের উদাহরণ হয়েই রয়ে গেল। আর কেউ স্বীকার করুন, বা না করুন, তার সব ত্যাগ স্বীকার তার শিষ্যদের জন্যই। যারা জানবার তারা ভালোই জানেন। বাবাজী মহারজ বলতেন – কোন গৃহস্থ তার সব কিছু আশ্রমে দান করে সন্ন্যাসী হয়ে যা্ন, আর কোন সন্ন্যাসী, সেই অর্থ গ্রহণ করে গৃহস্থ হয়ে যান।
 যাইহোক, আমরা ফিরে আসি স্মৃতি থেকে সেই সময়, যেদিন পুরানো আশ্রমে গোপালজী আসতে চলেছেন। সে এক আনন্দের সময়। সারা নতুনগ্রামে এক নতুন আলো। বাবাজী মহারাজের গ্রামে পা রাখার সঙ্গে সঙ্গে যেন বদলে গেছে সব কিছু। দুঃখের কোন অন্ধকার নেই কোথাও। ঠিক যেন গৌরাঙ্গের আবির্ভাবে নবদ্বীপে প্রেমের জোয়ার। 
বাবাজী সব কিছু ছেড়ে দিয়েছিলেন ভগবানের হাতে। কোনদিন নিজেকে কর্তা সাজান নি। কর্তা হতেও চান নি। ভালো কাজ করলে, আমি করেছি। আর খারাপ কাজ করলে ভগবান করিয়েছে – এই ভাবনাটাই মজার। এই কথা বলে  নিজের দোষ অন্যের ঘাড়ে চাপিয়ে হয়তো মানসিক যন্ত্রণা থেকে খানিকটা রেহাই মেলে ঠিকই, কিন্তু, অনেক কিছু থেকেই বঞ্চিত হতে হয়। 
আমার মা একটা কথা বলতেন – ‘জীব দিয়েছেন যিনি, আহার দেবেন তিনি’। 
তিনি আমার মাথার উপর আছেন, আমার সব দায়িত্ব তার, আমি শুধু কর্ম করে যাবো, এই ভাবনাটাই দাস ভাব। কর্তা ভাবে অহঙ্কার আসে। আর দাস ভাবে আসে অহঙ্কার থেকে মুক্তি। দেখবেন, আমাদের কর্ম ও লক্ষ্য যদি এক হয়, তাহলে আমাদের জীবনে সমস্যা এলেও কেটে যায়। 
আমরা দেরিতে হলেও ঠিক পৌছাতে পারি আমাদের লক্ষ্যে। আর কর্ম ও লক্ষ্য যদি আলাদা হয়, তাহলে অবস্থা হয়, দুই হালের নৌকোর মত – এ এদিকে যেতে চায়,অন্যজন অন্যদিকে যাবার জন্য হালের অবস্থান বদল করে। সব মিলিয়ে নীট ফল নৌকোডুবি।
শিষ্যের কাছে তিনি গুরু হলেও, সারাটা জীবন নিজের মধ্যে ‘শিষ্য’ ভাবটাকেই বয়ে নিয়ে বেরিয়েছেন। শ্রীজানকীদাসজী মহারাজের এই প্রিয় শিষ্যের সামনে তখন একটাই ভাবনা – মন্দির তো হল, ঠাকুরজীর ঘরও হল, কিন্তু গোপাল? গোপাল ছাড়া কেমন এক শূন্যতা।
সব সময় বাবাজীর অন্তরে সেই শূন্যতা। কিন্তু, যিনি সব ভার ভগবানের হাতেই তুলে দিয়েছেন, তার ভাবনা তো স্বয়ং ভগবানই ভাবেন। যিনি আসবেন তিনি মাধব, আর যিনি নিয়ে আসবেন তিনি মাধবের দাস। তাই গোপালজী এলেন নতুনগ্রামে। আলোর আর এক বন্যা আশ্রম জুড়ে।
সিজনার ঘোষাল পরিবারের শ্রী প্রশান্ত ঘোষালের স্ত্রী অপর্ণা ঘোষাল। তিনিই উপলক্ষ্য হয়ে কলকাতা থেকে তার ননদের গোপালকে নিয়ে এলেন নতুনগ্রামে। গোপাল নাকি কলকাতায় সেরকম সেবা-যত্ন পাচ্ছিল না। তাই ননদের ইচ্ছা গোপালকে নতুনগ্রামে নতুন সাধুজীর কাছে পাঠাতে।  বৃন্দাবন থেকেই সিংহাসন আর গোপালকে আনা হয়েছিল।
 কিন্তু, তখন থেকেই বাক্সবন্দী। তাই ননদের ইচ্ছা –গোপাল এভাবে কষ্ট পাচ্ছেন। তাই অপর্ণাদেবীর গুরুভাই নতুন সাধুজী তার দায়িত্ব নিলে, তিনি নিশ্চিন্ত হবেন। কী লীলা দেখুন। বাবাজী বৃন্দাবন থেকে চলে এসেছিলেন খালি হাতে। আর গোপালকে নিয়ে এসেছিলেন বুকের মাঝে। সেই গোপাল এবার প্রকট হলেন। তাই, গোপালই চাইছিলেন বাবাজীর নতুন প্রতিষ্ঠিত মন্দিরে থাকতে। কিন্তু, সাধুজী যদি গোপালকে নিতে না চান! 
এরকম একটা অদ্ভুত ভাবনা অপর্ণাদেবীর মাথায় খেলা করে যায়। শিশির কুমার ঘোষাল লিখছেন – তাই তিনি ভনিতা করেই বাবাজীর কাছে জানতে চান, গোপালমূর্তি পেলে তিনি গ্রহণ করবেন কিনা। বাবাজী মহারাজের চোখে আনন্দের অশ্রু। এও হয়! তিনি বৃন্দাবন ছেড়ে এসেছেন, কিন্তু বৃন্দাবন বিহারী তাকে ছেড়ে যাননি। কিন্তু, তাকে রাখবেন কোথায়। 
ইচ্ছা হচ্ছিল, এখনি গিয়ে কাঠের সিংহাসন নিয়ে আসতে। শেষে ইঁট সাজিয়ে নতুন কাপড় দিয়ে ঢেকে, তৈরি হল সিংহাসন। আপাততঃ গোপালের একটা বসার ব্যবস্থা হল।
সেদিন বাবাজী বুঝেছিলেন, এ যে সে গোপাল নন, স্বয়ং বৃন্দাবন বিহারীই ছুটে এসছেন তার কাছে। শেষে, গঙ্গাজলে গোপালমূর্তিকে স্নান করিয়ে নতুন কাপড় দিয়ে সাজিয়ে গুরু বোনের আনা সিংহাসনে স্থাপন করা হল গোপালকে। 
ঠিক হল, গ্রামের আর এক যুবক অমল বিশ্বাসকে নবদ্বীপে পাঠিয়ে গোপালের জন্য আনানো হবে নতুন পরিধেয়।

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

Top Post Ad

Below Post Ad

Hollywood Movies