রাধা কে? পরকীয়া প্রেমের প্রতীক? না কি, রাধা এক তত্ব?

‘জ্বলে পুড়ে মরলো রাধা, যৌবনও জ্বালায়… কিংবা ‘কদম গাছে বসিয়া আছে কানু হারামজাদা’? কেন যুগে যুগে বাঙ্গালী সমাজের একটা বিরাট অংশ রাধাকে এক পরকীয়া-প্রেমের প্রতীক হিসাবে দেখে?
  ভয়েস ৯, ধর্মক্ষেত্র ডেস্কঃ কেন লেখা হয়েছিল এই গান – ‘জ্বলে পুড়ে মরলো রাধা, যৌবনও জ্বালায়… কিংবা ‘কদম গাছে বসিয়া আছে কানু হারামজাদা’? কেন যুগে যুগে বাঙ্গালী সমাজের একটা বিরাট অংশ রাধাকে এক পরকীয়া-প্রেমের প্রতীক হিসাবে দেখে? 
রাধা কে? কৃষ্ণ-প্রেমে পাগলিনী এক পরনারী? রাধা কে? যাকে নিয়ে অনায়াসে লিখে ফেলা যায় অনেক কিছু চটুল গান, কিংবা অবৈধ প্রেমের প্রসঙ্গে অনায়াসে টেনে আনা যায় যে বিবাহিতা নারীকে? সেই রাধা? 
 কে এই রাধা? পরকীয়া প্রেমের প্রতীক, না কী কৃষ্ণ-পরিত্যক্তা এক বিরহিনী নারী, চির বিরহের প্রতীক? না কি রাধা এক তত্ব? কৃষ্ণের নিজ-অন্তরের শক্তির অংশবিশেষ?
 কীভাবে রাধা একটা তত্ব হয়ে উঠলেন? রাধার সঙ্গে কৃষ্ণের সব সম্পর্ক কি শেষ হয়ে গিয়েছিল বৃন্দাবনেই? কেন রাধার উল্লেখ নেই ভাগবতে? 
কেন ব্রম্ভবৈবর্ত পুরাণেই একমাত্র রাধা-কৃষ্ণকে স্বামী-স্ত্রী হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছিল? কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ শেষে কি কৃষ্ণের সঙ্গে রাধার আবার দেখা হয় দ্বারকাতে?
 যদি তা না হয়, তাহলে কৃষ্ণ মথুরায় চলে যাওয়ার পর রাধার ঠিক কী হয়েছিল। কীভাবে তার জীবনে নেমে এসেছিল শেষ পরিণতি?
অনেক প্রশ্ন। অনেক কিছুই অজানা। রাধাকে নিয়ে চৈতন্যপূর্ব যুগ থেকে চৈতন্যপরবর্তী সময়ে রচিত হয়েছে নানা পদ, নানা লোকগাথা। 
আধুনিক যুগেও গীতিকার, কবি, লেখকদের একটা বিরাট অংশ রাধাকে পরপুরুষের প্রেমসন্তপ্ত স্বাধীনভর্তৃকা প্রেমিকা রূপেই দেখেছেন। পুরাণের একটা বিষয়কে কেন আধ্যাত্মিক রূপ না দিয়ে বিভিন্ন বৈষ্ণব পদকর্তারা তাকে একটা লৌকিক রূপ দিয়ে কলঙ্কের সব বোঝা শ্রীরাধার উপর চাপিয়ে দিয়েছিলেন ?
দেখা যায়, ভারতে যৌনতাকে জ্ঞানশৃঙ্খলা হিসাবে পাঠ করার একটা প্রবণতা ছিল। যেমন বাৎস্যায়নের কামসূত্র বা কোনারকের সূর্যমন্দিরের দেওয়ালে দেওয়ালে যৌনতা ও আধুনিক কামকলার পাথুরে নিদর্শন। 
পঞ্চদশ শতকের সামন্ততান্ত্রিক পুরুষশাসিত সমাজে যেখানে লাম্পট্য একটা বিশেষ গুণ হিসাবে বিবেচিত হতো, নারীকে লাঞ্ছিত করা ও কলঙ্কিনী সাজানোর একটা প্রচেষ্টা চলতো, নারীর স্বাধীন সত্বাকে ধ্বংস করত ব্যাভিচারী পুরুষ – সেই সময়ের বহু পদকার রাধাকে সেইভাবেই দেখানোর চেষ্টা করেছেন। আর সেটা এখনো অজান্তে মানুষের মনের মধ্যে একটা ছাপ রেখে গেছে। 
অনেকে রাধা-কৃষ্ণকে দেব-জ্ঞানে পুজোও করছেন, আবার পরকীয়া প্রেমের উদাহরণ হিসাবেও খাড়া করছেন। রাধা আর কৃষ্ণের পৌরাণিক ঐতিহ্যমন্ডিত নাম মানুষের মন থেকে সরিয়ে ফেলার নেপথ্য কারণ কী! এসব প্রশ্ন ও তার উত্তরের খোঁজ নিয়েই প্রকাশিত হতে চলেছে ‘রাধা-মাধব’।

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

Top Post Ad

Below Post Ad