‘গুরু যে কি জিনিস তা বুঝতেই অনেকের জন্ম কেটে যায়। খাঁচার মধ্যে টিয়াপাখিকে শেখালে সে ‘রাধেশ্যাম-রাধেশ্যাম’ বলে, কিন্তু বেড়ালে ধরলে তার আসল বুলি ট্যাঁ ট্যাঁ বের হতে থাকে।। সেরকম বিপদ-আপদের সময় নিজের অপ্রিয় কিছু ঘটলে বা আমার পছন্দমাফিক কথা গুরুদেব না বললে গুরুভক্তি ছুটে যায়। শ্রীগুরুদেবকে স্বয়ং ভগবান জেনে তার চরণে নিজেকে সমর্পন করে দিতে পারলে তবেই শ্রীগুরুদেব তার ভার নেন।“
ইচ্ছা
করলেই দীক্ষা নেওয়া যায় না। তার জন্য অন্তরভূমি পরিষ্কার থাকা প্রয়োজন। বিশ্বাস
থাকতে হয় অটল আর নিজের স্বার্থের জন্য গুরুদেব খুঁজতে গেলে হয়ত ‘গুরু’ মেলে, কিন্তু
সেই সদগুরু মেলে না, যারা কয়েক যুগ পর একজন আসেন। এই ধরাকে
পাপমুক্ত করতে, মানুষকে শিক্ষা দিতে।
ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণের আবির্ভাব বাংলার নবজাগরণে জ্বালিয়েছিল
এক আগুনের শিখা। তার লোকশিক্ষা মানুষকে পরিশোধিত হবার রাস্তা দেখিয়েছিল। তার ভক্ত
বীর-সন্ন্যাসী বিবেকানন্দ, তার দেখানো পথকে সাজিয়ে দিয়েছিলেন
জ্ঞানের আলোয়; ঠিক তেমনি স্বামী জানকীদাসজী মহারাজও
এসেছিলেন লোকশিক্ষা দেওয়ার জন্য।
এই যোগীশ্রেষ্ঠ সাধক নিম্বার্ক সম্প্রদায়ের পূর্বতন
সন্ন্যাসীদের আদর্শকে মাথায় রেখে, প্রয়োজনে নিজস্ব চেতনার
বিকাশ ঘটিয়েছিলেন সাধারণ মানুষের মঙ্গলের জন্য। আর তার মহাপ্রয়াণের পর তার আর এক
সুযোগ্য শিষ্য স্বামী প্রজ্ঞাদাসজী মহারাজ, তার জ্বালিয়ে যাওয়া
মশালের আলোয় আমাদের পথ দেখিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন।
তার চলা থেমে গেছে, কিন্তু পথ যেমন শেষ হয়নি, তেমনি শেষ হয়ে যায়নি তার আদর্শ। তার জ্ঞান তিনি ছড়িয়ে
দিয়েছেন, তার ভক্ত-শিষ্যদের মাঝে। কেউ না কেউ, আবার হাতে তুলে নেবে সেই চেতনার মশাল, আবার জ্বলে উঠবে আলো, আবার শুরু হবে তার দেখানো
পথে চলা।